নোটিস পড়ছেন কারখানার কর্মীরা। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটপর্ব মিটতেই মঙ্গলবার হুগলির রিষড়ায় বিড়লা গোষ্ঠীর ইনস্যুলেটর কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছিল মালিকপক্ষ। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বার দমদমে পবন রুইয়া গোষ্ঠীর জেসপ কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দিল মালিকপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সকালে জেসপের ১২ নম্বর গেটে ‘সাসপেনশন অব অপারেশনস’-এর দশ পাতার নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কারখানা বন্ধের খবর জানার পরে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূণের্র্ন্দু বসু হুমকি দেন, “জেসপের মালিকপক্ষের থেকে সরকার যে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী, ভবিষ্যতে তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।” অন্য দিকে কারখানা বন্ধের দায় ইউনিয়ন ও বহিরাগত দুষ্কৃতীদের ঘাড়ে চাপিয়ে জেসপ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কারখানায় লাগাতার চুরি হচ্ছিল। পুলিশে একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও ফল হয়নি। সংস্থার ইউনিয়নের দাবি, জেসপ কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় ৬৫০ কর্মচারী কাজ হারালেন।
দিন কয়েক আগে দমদমে ভোট-প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেসপ কারখানার কর্মীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওই প্রচারসভা থেকেই শ্রমমন্ত্রীকে জেসপে পুরোদমে কাজ শুরুর জন্য উদ্যোগী হতে নির্দেশ দেন তিনি। পূর্ণেন্দুবাবুকে তিনি বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জেসপের সমস্যা দ্রুত মেটাতে হবে।
ভোট মিটতেই মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো শ্রমমন্ত্রী উদ্যোগী হন। তাঁর নির্দেশে বুধবার সন্ধ্যায় শ্রম দফতরের ছ’জন আধিকারিক জেসপ পরিদর্শনে যান। তাঁরা অফিস পরিদর্শন করেন, বেতন সংক্রান্ত নানা নথিও সংগ্রহ করেন। বৃহস্পতিবার ওই আধিকারিকদের ‘কোচ ওয়ার্কস’ বিভাগ পরিদর্শন করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ‘সাসপেনশন অব অপারেশনস’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অল্প হলেও কোচ, রোলার ও ওয়াগন তৈরির ইউনিটে উৎপাদন চালু ছিল জেসপে। আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আরও কয়েকটি ইউনিট। এ বার কারখানার সব ইউনিটেই উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল বলে জানিয়েছেন জেসপ কোম্পানি লিমিটেড ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সদস্যরা।
ইউনিয়নের দাবি, জেসপ কর্তৃপক্ষ এই ‘সাসপেনশন অব অপারেশনস’-এর নোটিস দিয়ে রাজ্য সরকারের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে পুরোমাত্রায় জেসপ চালু হওয়ার ব্যাপারে আশার আলো দেখছিলাম। রাজ্য সরকার উদ্যোগীও হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল জেসপের মালিকপক্ষ।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, কর্মচারীদের সাত মাসের বেতন বাকি রেখেই সংস্থা বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
শ্রমমন্ত্রীর দাবি, রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরের প্রতিনিধিরা বুধবার জেসপ ঘুরে যাওয়ার পরে রাতের অন্ধকারে ওই নোটিস ঝোলানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “নোটিস ঝুলিয়ে সরকারকে অগ্রাহ্য করেছে মালিকপক্ষ। যদিও মালিকপক্ষের প্রতি যথেষ্ট নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে সরকার।” শ্রমমন্ত্রী জানান, দিন কয়েক আগেই মালিকপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠকে মালিকপক্ষের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না।
জেসপের মালিক রুইয়া গোষ্ঠীর আরও একটি কারখানা ডানলপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২০০৯ সালেই। এ দিন জেসপ বন্ধের নোটিস নিয়ে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ধ্রুবজ্যোতি নন্দীর বক্তব্য, দমদমের ওই কারখানায় যে ভাবে অরাজকতা চলছিল, তাতে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ছাড়া উপায় ছিল না। তাঁর অভিযোগ, “ইউনিয়নের লাগাতার হুমকির মুখে সংস্থার বেশ কিছু দক্ষ অফিসার চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। সম্প্রতি ট্রাক আটক করে কারখানা থেকে মাল বের করায় বাধাও সৃষ্টি করা হয়েছিল।” ধ্রুবজ্যোতিবাবুর দাবি, কারখানা থেকে দামি যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য সামগ্রী চুরির ঘটনা প্রায়ই ঘটত। বহু বার পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলেও চুরি বন্ধ করা যায়নি। তিনি বলেন, “এক দিকে উৎপাদন কম, অন্য দিকে কারখানায় অরাজকতা এবং চুরির জন্য আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল সংস্থা। তাই কাজ বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে।” ইউনিয়ন অবশ্য পাল্টা জানিয়েছে, কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে মাঝেমধ্যেই রাতের অন্ধকারে যন্ত্রাংশ সরিয়ে নিত মালিকের লোকেরা।