হৃদয় ঘোষের সঙ্গে প্রদীপ ভট্টাচার্য। রবিবার পাড়ুইয়ের বাঁধ-নবগ্রামে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের স্থগিতাদেশ অনুযায়ী ৩০ এপ্রিলের আগে পাড়ুই হত্যাকাণ্ড নিয়ে শুনানির কোনও সম্ভাবনা ছিল না। তবে সেই স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে নিহতের ছেলের দায়ের করা আপিল মামলার শুনানি আজ, সোমবারেই শুরু হচ্ছে।
সর্বোচ্চ আদালত সূত্রের খবর, বিচারপতি জে চলমেশ্বর এবং বিচারপতি বলবীর সিংহ চহ্বাণের বেঞ্চে ওই মামলার শুনানির ব্যবস্থা করেছে প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের বেঞ্চ। সেই অনুযায়ী সোমবার বিচারপতি চলমেশ্বর এবং বিচারপতি চহ্বাণের বেঞ্চে যে-সব মামলা ওঠার কথা, তার মধ্যে পাড়ুই মামলাও রয়েছে। এবং সেখানেই আজ ওই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
গত বছর ২১ জুলাই চতুর্থ দফার পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে বীরভূমের পাড়ুইয়ে কসবা অঞ্চলের বাঁধ-নবগ্রামে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগর ঘোষ। ঘটনাচক্রে বীরভূমে দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের দু’দিন আগেই সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আপিল মামলার শুনানি হতে চলেছে সুপ্রিম কোর্টে। ৩০ এপ্রিল, বুধবার বীরভূমের ওই দুই কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষের আইনজীবীরা চেয়েছিলেন, ওই এলাকায় লোকসভা ভোটের আগেই শীর্ষ আদালত মামলাটির শুনানির ব্যবস্থা করুক।
হৃদয়বাবু তাঁর বাবার হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সাগর-হত্যার তদন্তের জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বে একটি স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে দেন। কিন্তু সিট তাঁর এজলাসে যে-সব রিপোর্ট দিয়েছে, তার একটিতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি দীপঙ্কর দত্ত। কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য তিনি ১১ এপ্রিল ডিজি-কে হাইকোর্টে হাজির হতে বলেন। কিন্তু ওই দিন সকালে কোর্ট বসার সঙ্গে সঙ্গে সরকার পক্ষ বিচারপতি দত্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল মামলা করে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তিন সপ্তাহের জন্য শুনানি স্থগিত করে দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন হৃদয়বাবু।
২২ এপ্রিল হৃদয়বাবুর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন বা বিশেষ অনুমতির আবেদন দাখিল করা হয়। বৃহস্পতিবার মামলাটি ওই বেঞ্চে ওঠে। মামলাটি গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল, ২৮ এপ্রিল শুনানির দিন নির্দিষ্ট করা হল। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বাবার মৃত্যুরহস্য দ্রুত উদ্ঘাটনের ব্যবস্থা করতে পারবে বলে হৃদয়বাবুর আশা। ওই মামলায় মূল অভিযুক্ত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ চৌধুরী।
রবিবার বাঁধ-নবগ্রামে নিহতের বাড়িতে যান প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি হৃদয়বাবুকে বলেন, “আইনি সহায়তার পাশাপাশি সব রকম সহযোগিতা করব।” নিহতের পরিবারকে ভয় পেতে বারণ করেন প্রদীপবাবু। তিনি হৃদয়বাবুদের বলেন, “অনেক রকমের চাপ আসবে, আসছে। ভয় পেলে চলবে না।” হৃদয়বাবু তাঁকে বলেন, “আপনাদের পাশে পেয়ে ভাল লাগছে। সুবিচার পাওয়ার জন্য আপনাদের সহযোগিতা ও সহায়তা কাজে আসবে।”