ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই অসম, ওড়িশা-সহ অন্য রাজ্যে আলু রফতানির পরিমাণের উপর নিয়ন্ত্রণ তোলার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
ব্যবসায়ীরা অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত রাজ্য সরকার অনড় মনোভাব দেখিয়ে এসেছে। এ বছর রাজ্য সরকার ভিন্ রাজ্যে আলু রফতানির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ২৮ জুলাই। ব্যবসায়ীদের লাগাতার আন্দোলনের পর ১৩ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক হয়। নিয়ন্ত্রণ খানিক শিথিল করে সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়, দিনে ১১০০ মেট্রিক টন আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠানো যাবে। পরিবর্তে সরকারকে ১২ টাকা কিলোগ্রাম দরে দৈনিক ৩০০ মেট্রিক টন আলু দেবেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু রাজ্যের বাজারে আলুর দাম বাড়ছে, এই যুক্তিতে ১১ নভেম্বর ফের পুরোপুরি বন্ধ করা হয় ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো।
এ দিকে হিমঘর মালিকদের সঙ্গে আলু ব্যবসায়ীদের চুক্তির শর্ত অনুসারে, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব হিমঘর ফাঁকা করে দিতে হবে। কারণ হিমঘর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয় মার্চ মাস পর্যন্ত। ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর নিয়ন্ত্রণ না তুললে প্রচুর আলু হিমঘরেই পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এখন নিষেধাজ্ঞা না তুললে ব্যবসায়ীরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত, তা বুঝেই সরকার বাধ্য হয়ে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল।
সরকারি কর্তাদের অবশ্য দাবি, যথেষ্ট আলু মজুত আছে বলেই রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কৃষি দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “রাজ্যের হিমঘরগুলিতে এখনও ১ লক্ষ ১৫ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। রাজ্যের বাজারে আলু সরবরাহের পরেও কিছু আলু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সরকার ঠিক সময়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তাঁর দাবি, ব্যবসায়ীদের দাবিকে মান্যতা দিয়েই পর্যায়ক্রমে আলু ছাড়া হয়েছে। রাজ্য সরকার রফতানি নিয়ন্ত্রণ করেছে বলেই আলুর দাম নাগালে রয়েছে, দাবি করেন তিনি। ওই কর্তার বক্তব্য, “গোটা দেশে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে। পঞ্জাব, ওড়িশা, অসম-সহ নানা রাজ্যে আলুর দর কোথাও ৩৫-৪০ টাকা, কোথাও আবার ৫০ টাকা কিলোগ্রাম।”
ব্যবসায়ীরা অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে তাঁদের আন্দোলনের সাফল্য বলেই দেখছেন। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমরা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বলেছি। এ নিয়ে আন্দোলনও কম হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় আমরা খুশি।”