মঙ্গলে শুনানি, বুধে তলব

মুকুলের মেল পেয়ে দিন বাছল সিবিআই

সিবিআইয়ের কাছে মুকুল রায়ের হাজিরা, নাকি তদন্তে শীর্ষ আদালতের নজরদারি নিয়ে শুনানি কোনটি আগে হবে তা-ই নিয়ে জল্পনার শেষ হল আপাতত। শুনানি হবে আগে। পরে হাজিরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারি চেয়ে যে আবেদন করেছে, আগামী কাল তার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। মুকুল রায়ও এই মামলার জন্যই দিল্লিতে আসছেন বারবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

সিবিআইয়ের কাছে মুকুল রায়ের হাজিরা, নাকি তদন্তে শীর্ষ আদালতের নজরদারি নিয়ে শুনানি কোনটি আগে হবে তা-ই নিয়ে জল্পনার শেষ হল আপাতত। শুনানি হবে আগে। পরে হাজিরা।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারি চেয়ে যে আবেদন করেছে, আগামী কাল তার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। মুকুল রায়ও এই মামলার জন্যই দিল্লিতে আসছেন বারবার। কিন্তু কাল ওই শুনানি হচ্ছে না। যে দু’জন বিচারপতির এই মামলা শোনার কথা, তাঁদের মধ্যে এক জন অসুস্থ। আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৭ তারিখ হতে পারে ওই শুনানি। এই শুনানি হওয়ার আগে সিবিআই দফতরে হাজির হতে চাইছেন না মুকুল। সিবিআইকে ই-মেলে তিনি আজ জানান, প্রজাতন্ত্র দিবস পর্যন্ত তাঁর ব্যস্ততা রয়েছে। ২৭ তারিখ ফিরবেন কলকাতায়। এর পরে উভয় পক্ষের সুবিধে অনুযায়ী ২৮ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে কোনও এক দিন তিনি সিবিআই দফতরে যাবেন। যে কারণেই হোক, সিবিআই-ও ২৭ তারিখের পরই আসতে বলেছে মুকুলকে। সিবিআই সূত্রের খবর, আগামী বুধবার, অর্থাৎ ২৮ তারিখ দুপুর ২টোর পরে তাঁকে

কলকাতার সিবিআই দফতরে হাজির হতে বলা হয়েছে।

Advertisement

আগামী কাল শুনানি হবে ধরে নিয়েই মুকুল দিল্লিতে ছিলেন। শুনানি পিছোনোয় কাল তিনি কলকাতায় ফিরে যাবেন। মুকুল জানিয়েছেন, ২৫ জানুয়ারি তিনি ফের দিল্লি আসবেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের সন্ধেয় রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখানে তিনি আমন্ত্রিত। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ২৭ তারিখ আবার কলকাতায় ফিরে যাবেন। মুকুলের কথায়, “সারদার তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য সিবিআই আমাকে ডেকেছে। কোনও সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। আমার কিছু দলীয় কাজকর্ম ছিল। নির্বাচন কমিশনেও যাওয়ার ছিল। ২৭ তারিখ বনগাঁ লোকসভা ও কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের মনোনয়ন পত্র পেশের শেষ দিন। সেই জন্যই আমি সিবিআইয়ের কাছে সময় চেয়েছিলাম। ওরাও আমাকে সময় দিয়েছে। আমি ২৮ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে সিবিআই দফতরে যাব। তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করব।”

সিবিআই মুকুলকে সমন পাঠিয়েছিল গত ১৪ জানুয়ারি। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে হাজির হতে বলা হয়। সিবিআইয়ের থেকে সময় চেয়ে নিয়ে মুকুল অবশ্য তাদের মুখোমুখি হওয়ারই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দিল্লিতে বসে। সিবিআইয়ের সামনে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে। এই ক’দিন তাই রোজই কোনও না কোনও দুঁদে আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। সিবিআই কী কী প্রশ্ন করতে পারে, তা ধরে নিয়ে তার উত্তর তৈরি রাখার চেষ্টা করে গিয়েছেন। শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় বাড়তি কিছুটা সময় পেলেন তিনি।

রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মন্ত্রীরা ও দলের নেতা-কর্মীরা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ, পথে নেমে আন্দোলন ও ধর্নার পথে হাঁটছিলেন। কিন্তু মুকুলকে সিবিআই ডেকে পাঠানোর পরেই রাজ্য সরকার ও তৃণমূল সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তদন্তে শীর্ষ আদালতের নজরদারি চেয়ে আবেদন জানানো হয়। বিচারপতি টি এস ঠাকুর ও বিচারপতি সি নাগাপ্পনের বেঞ্চ সারদায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থ মামলাটি শুনেছিল। গত সোমবার বিচারপতি ঠাকুরের কাছেই সুপ্রিম কোর্টের নজরদারির আবেদন জানায় রাজ্য সরকার ও তৃণমূল। পুরনো মামলার সূত্র ধরেই এই আবেদন করা হয়েছে। পুরনো মামলার রায়ে বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে তদন্তে আদালতের নজরদারির সম্ভাবনা খোলা থাকছে। সেই সূত্র ধরেই রাজ্য ও তৃণমূল আবেদন জানিয়েছে। তাই বিচারপতি ঠাকুর জানান, তিনি ও বিচারপতি নাগাপ্পন একসঙ্গে মামলাটি শুনবেন।

“সিবিআইয়ের কাছে সময় চেয়েছিলাম। ওরাও আমাকে সময় দিয়েছে।
আমি ২৮ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে সিবিআই দফতরে যাব।
তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করব।”

মুকুল রায়, তৃণমূল সাংসদ

এতে অবশ্য বিপদ বাড়ছে বই কমছে না। সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের ছয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে, সেই মামলাও একই সঙ্গে শোনা হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট আজ জানিয়ে দিয়েছে। বিচারপতি ঠাকুর আজ জানিয়েছেন, সিবিআই তদন্তে যখন বাধা পড়ছে, তখন তাদেরও আদালতে আসা উচিত। তৃণমূল শিবিরের আশঙ্কা, তদন্তে বাধার অভিযোগ নিয়ে বক্তব্য রাখার সুযোগ পাওয়ায় সিবিআই কলকাতা থেকে মামলা ভিন্ রাজ্যের কোনও শহরে সরিয়ে নেওয়ার আর্জি জানাতে পারে।

আজ দুপুরে রাজ্য সরকারের আইনজীবী অনীপ সাচতে বিচারপতির কাছে আবেদন জানান, আগামিকালই যেন তাঁদের মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি ঠাকুর জানান, বিচারপতি নাগাপ্পন অসুস্থ। বৃহস্পতিবার তিনি থাকবেন না। মঙ্গলবার তিনি সুস্থ থাকলে এবং সময় হলে এই মামলাটি শোনা হবে। রাজ্য সরকার ও তৃণমূল আবেদন করার আগেই সুপ্রিম কোর্টে মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূলের ৬ জন নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছিল। আজ সকালে সেই মামলার আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক বিচারপতি ঠাকুরের কাছে আবেদন জানান, তাঁদের মামলাটিও যেন রাজ্য সরকারের মামলার সঙ্গেই শোনা হয়।

বিচারপতি জানতে চান, কী ভাবে আদালত অবমাননা হয়েছে? শুভাশিস জানান, রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ ও বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী সিবিআই দফতরের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই সিবিআই তদন্ত হচ্ছে। সেই তদন্তে বাধা দিয়ে আদালতের অবমাননা করেছেন তাঁরা। পরে মদন মিত্রর গ্রেফতারের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা, রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ রায় ও অরূপ বিশ্বাস রাস্তায় নামেন, মানুষকে উস্কানি দেন সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে। এ-ও আদালতের নির্দেশের অবমাননা। বিচারপতি ঠাকুর এর পরে জানিয়ে দেন, আদালত অবমাননার মামলাও রাজ্য সরকারের মামলার সঙ্গে শোনা হবে। তদন্তে বাধা পড়ার অভিযোগ ওঠায় সিবিআইয়ের প্রতিনিধিকেও থাকতে হবে শুনানিতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement