মুখ পোড়ানোর জের, ওসি-র ডানা ছাঁটা শুরু

থানায় হামলা না-রুখে আত্মসমর্পণ। হামলাকারীদের ধরার বদলে বাঁচানোর চেষ্টা। চক্রান্তের কুশীলবকে না-ছুঁয়ে ৫ বহিরাগতকে ধরে মামলা সাজানো। নাটক ফাঁস হওয়ায় আদালতে সম্মানহানি। আলিপুর-কাণ্ডে থানা কর্তৃপক্ষের এই আচরণ প্রকাশ্যে আসায় ওসি বুদ্ধদেব কুণ্ডুর ক্ষমতা খর্বের প্রক্রিয়া অবশেষে শুরু করল লালবাজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৪২
Share:

থানায় হামলা না-রুখে আত্মসমর্পণ। হামলাকারীদের ধরার বদলে বাঁচানোর চেষ্টা। চক্রান্তের কুশীলবকে না-ছুঁয়ে ৫ বহিরাগতকে ধরে মামলা সাজানো। নাটক ফাঁস হওয়ায় আদালতে সম্মানহানি। আলিপুর-কাণ্ডে থানা কর্তৃপক্ষের এই আচরণ প্রকাশ্যে আসায় ওসি বুদ্ধদেব কুণ্ডুর ক্ষমতা খর্বের প্রক্রিয়া অবশেষে শুরু করল লালবাজার।

Advertisement

১৪ নভেম্বর ওই হামলার পরে থানার সাব-ইন্সপেক্টর কৌশিক রায়কে মামলার তদন্তকারী অফিসারের (আইও) দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও লালবাজারের নির্দেশে ওসি বুদ্ধদেববাবু তদন্ত পরিচালনা করছিলেন। বুধবার কৌশিকবাবুর জায়গায় দায়িত্ব পান থানার অতিরিক্ত ওসি সরোজ প্রহরাজ, যিনি কিনা পদমর্যাদায় ইন্সপেক্টর। আর তদন্ত কী ভাবে হচ্ছে, তা দেখভালের ভার বর্তেছে এসি (সাউথ) বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের উপরে। ওসি-র ভূমিকা থাকছে না। ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মা বলেন, “তদন্তে গাফিলতি থাকায় আইও বদল হয়েছে।”

আলিপুর-হামলার ‘নেপথ্য নায়ক’ হিসেবে মূল অভিযোগের আঙুল যাঁর দিকে, সেই তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ঘনিষ্ঠ। ওসি বুদ্ধবাবুও মন্ত্রীর কাছের লোক। এই অবস্থায় ওসি-র তত্ত্বাবধানে চলা তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ হবে, পুলিশের অন্দরে সেই প্রশ্ন প্রকট হয়ে উঠছিল। আলিপুর-তদন্তে কোথায় কোথায় গাফিলতি হয়েছে?

Advertisement

লালবাজার সূত্রের ব্যাখ্যা: থানার সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়নি, কেস ডায়েরিও ঠিকঠাক তৈরি করেনি থানা। মূল অভিযুক্তদের নাম নথিভুক্ত হয়নি। লালবাজারের মতে, থানা এ ভাবে মূল অভিযুক্তদের আড়াল করতে চেয়েছে, যাতে ধাক্কা খেয়েছে পুলিশের ভাবমূর্তি। পুলিশের আলিপুর-তদন্তের নমুনা দেখে বিরূপ মন্তব্য করেছে আদালতও। বিশেষত সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর হলেও অভিযোগে তার উল্লেখ না-থাকা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারা (পিডিপিপি-৩) প্রয়োগ না-করায় আইও শনিবার বিচারকের ভর্ত্‌সনার মুখে পড়েন। মঙ্গলবার বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে। যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে কোর্টে তুলেছিল, সকলের জামিন মঞ্জুর করে বিচারক ফের পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, হামলায় ধৃতদের জড়িত থাকার পক্ষে পুলিশ কোনও তথ্য-প্রমাণ পেশ করতে পারেনি বলেই এই সিদ্ধান্ত।

শুধু আদালতে হেনস্থা নয়। আলিপুর থানা সে দিন যে ভাবে হামলাকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, তাতেও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে লালবাজার মনে করছে। সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ ১৫ জন হামলাকারীকে চিহ্নিত করেছে, যাঁদের অধিকাংশ কিশোর। তাদের সঙ্গে ক্যামেরায় বন্দি হন স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা-নেত্রীও। ওঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর করবে কি না, তা ঠিক হবে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি থেকে ফিরলে। বৃহস্পতিবার তাঁর ফেরার কথা। লালবাজারের বড়কর্তারা চাইছেন পুরমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ ওসি-কে আলিপুর থানা থেকেই সরাতে। তাই ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

ফুটেজে চিহ্নিত নেতা-নেত্রীর কী বক্তব্য? এ দিন নেত্রীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছে। কখনও ল্যান্ডলাইন থেকে, কখনও মোবাইল থেকে। তিনি ফোন ধরেও আনন্দবাজার শুনে কেটে দিয়েছেন। পুলিশের নিচুতলার অভিযোগ, মহিলা উকিলের পোশাক পরে আলিপুর থানায় এসে হুমকি দিয়েছিলেন। নেতাটি অবশ্য কথা বলেছেন। ফোন ধরে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন, “আপনারা তো সবই জানেন! বিরক্ত করছেন কেন? কিছু বলব না।”

শুক্রবার আলিপুরে অতিরিক্ত জেলাশাসকের বাংলোর পাশে কুড়ি কাঠা সরকারি জমিতে পূর্তকর্মীরা কাজ করতে গেলে স্থানীয় বিধানচন্দ্র রায় কলোনির বাসিন্দারা বাধা দেন। পুলিশ কয়েক জনকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছিল। তাদের ছাড়াতে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে থানায় চড়াও হয়ে ভাঙচুর, তাণ্ডব চালায় কলোনির কিছু লোক। পূর্ত-সূত্রের খবর, জমিটিতে সরকারি পদস্থ অফিসারদের আবাসন হওয়ার কথা। কিন্তু কলোনির লোকেরা ছ’টি খুটি পুঁতে তাঁদের দাবি করা জমি চিহ্নিত করে রেখেছেন। খুঁটিগুলোয় এখনও ঝুলছে তৃণমূলের পতাকা।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের যুব সম্পাদক প্রতাপ সাহা ওই কলোনি কমিটির সভাপতিও বটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন