মাথা নিচু, মলিন পোশাক, বিধ্বস্ত সুদীপ্ত কমিশনে

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করার পরে রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। নিজের আইনজীবীর কাছে একান্তে বলেছিলেন, ‘‘আর পারছি না।’’ তার পরে সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার নির্দেশ যে তাঁকে আরও বিধ্বস্ত করে দিয়েছে, বোঝা গেল মঙ্গলবার দুপুরে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

শ্যামল সেন কমিশনের দফতরে সুদীপ্ত সেন। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করার পরে রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। নিজের আইনজীবীর কাছে একান্তে বলেছিলেন, ‘‘আর পারছি না।’’ তার পরে সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার নির্দেশ যে তাঁকে আরও বিধ্বস্ত করে দিয়েছে, বোঝা গেল মঙ্গলবার দুপুরে।

Advertisement

সিবিআই তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে এ দিনই প্রথম জেলের বাইরে আনা হয় সুদীপ্তকে। সামনে-পিছনে পুলিশ। রীতিমতো ঠেলতে ঠেলতে সারদা-প্রধানকে ঢোকানো হয় শ্যামল সেন কমিশনের দফতরে। সেখান থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার সময়েও তিনি যাতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আদৌ কোনও বাক্য বিনিময় করতে না-পারেন, পুলিশ সে-দিকেও সতর্ক নজর রেখেছিল। আগে পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে থেকেও সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাইতেন সুদীপ্ত। এ দিন কিন্তু মাথা নিচু করেই কমিশনের এজলাসে ঢোকেন তিনি। বেরোনোর সময়েও তাঁর মাথা ছিল ঝোঁকানো। পরনে সেই সাদা পাজামা আর গলাবন্ধ পাঞ্জাবি। তবে এত দিন তাঁর পোশাক থাকত ধোপদুরস্ত। এ দিন তা ছিল অনেকটাই মলিন।

এজলাসের ভিতরে অন্যান্য দিন এ-দিক ও-দিক তাকিয়ে কাউকে যেন খুঁজতেন সুদীপ্ত। এ দিন কমিশনের দফতরের ভিতরে ছিলেন দেড় ঘণ্টা। কিন্তু এক বারও তাঁকে মাথা উঁচু করতে দেখেননি কেউ। কমিশনের এক কর্মচারীর কথায়, “ভিতরে ভিতরে উনি যে ভেঙে পড়েছেন, তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। আমাদের দিকেও এক বারের জন্য তাকালেন না।” আট মাস ধরে সুদীপ্তকে বেশ কয়েক বার কমিশনে হাজির করানো হয়েছে। মাসখানেক আগেও চালচলন ও কথাবার্তায় রীতিমতো সপ্রতিভ ছিলেন সারদা-প্রধান। কমিশনে ঢোকা ও বেরোনোর মুখে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন বহু বার। অনেক সময় নিজে থেকেই কিছু বলতে চেয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। যা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু এ দিন তার কোনওটাই হয়নি।

Advertisement

কমিশন সূত্রের খবর, সারদা-প্রধানের অভিযোগের ভিত্তিতে রমেশ নাঙ্গালিয়া নামে এক ব্যবসায়ীকে এ দিন ডেকে পাঠানো হয়েছিল। বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভিত্তিতে ওই ব্যবসায়ীকে তিনি টাকা দিয়েছিলেন বলে কমিশনে অভিযোগ করেছিলেন সুদীপ্ত। তা যাচাই করতেই এ দিন ডাকা হয়েছিল ওই ব্যবসায়ী এবং সারদা-কর্ণধারকে। কিন্তু ব্যবসায়ী না আসায় কোনও শুনানিই হয়নি।

শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সারদা কাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ায় শ্যামল সেন কমিশনের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কমিশনের কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য নিয়ে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সারদার আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার দায় আর সরকারকে নিতে হবে না। এ বার তা সিবিআই মেটাবে।’’ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বার রাজ্য সরকার এই কমিশনটাই তুলে দেবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন অবশ্য বলেন, “এ ব্যাপারে কোনও বিভ্রান্তি নেই। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, কমিশন তার কাজ করে যাবে। আমরা সেই নির্দেশই মানব।”

কমিশন এত দিন সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নিযুক্ত স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করত। টাকা ফেরত চেয়ে কেউ আবেদন করলে সেই দাবি সত্যি কি না, তা দেখার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো সিটের কাছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী হবে, তা নিয়ে এ দিন কমিশনের দফতরে বিচারপতি সেনের সঙ্গে বৈঠক করেন সিটের অন্যতম কর্তা রাজীব কুমার। কমিশনের অন্য দুই সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। সিটের সব নথি এ বার যাবে সিবিআইয়ের হাতে। তাতে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন