মোদী-তিরে বিঁধলেন রাহুলও

ব্যবধান ২৪ ঘণ্টার। রাজ্যে এসে নরেন্দ্র মোদীর সুরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও ডেবরা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

শহিদ মিনারের সমাবেশে বৃহস্পতিবার রাহুল গাঁধী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ব্যবধান ২৪ ঘণ্টার। রাজ্যে এসে নরেন্দ্র মোদীর সুরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

বুধবার মোদী বলেছিলেন, “বাংলার পরিবর্তন এল না। দিদির পরিবর্তন হয়ে গেল।” বৃহস্পতিবার রাহুল বললেন, “রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। তবে তা শুধু ঝান্ডার। লালঝান্ডা সরে গিয়ে সবুজ ঝান্ডা এসেছে। এ ছাড়া আরও কোনও বদল হয়নি।” বৃহস্পতিবার ঝটিকা সফরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা এবং কলকাতার শহিদ মিনারের সমাবেশে সারদা-কাণ্ড থেকে শুরু করে টেট কেলেঙ্কারি নিয়ে মমতা-সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি।

যে স্বপ্ন নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট রাজ্যে পরিবর্তন এনেছিল, তা পূরণ হয়নি দাবি করে রাহুলের অভিযোগ, “কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়লেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে কংগ্রেসকে ধোঁকা দিলেন।”

Advertisement

জোট ভাঙা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দোষ দিয়েছেন কংগ্রেসকেই। রাহুল কলকাতা ছাড়ার পরেই, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, কংগ্রেস একের পর এক জনস্বার্থবিরোধী নীতি কার্যকর করেছে বলেই তৃণমূল বাধ্য হয়েছে তাদের পাশ থেকে সরে যেতে।

ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া, কলকাতা-উত্তরের প্রার্থী সোমেন মিত্র এবং কলকাতা-দক্ষিণের মালা রায়ের সমর্থনে প্রচারে এসে দু’জায়গাতেই মোদীর মতো সারদা কাণ্ড নিয়েও মমতাকে বিঁধেছেন রাহুল। তাঁর অভিযোগ, “মমতাজি বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে, ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে লড়লেন। কিন্তু আজ এখানে সারদা-দুর্নীতি হল। যাঁরা ওই দুর্নীতিতে যুক্ত, তাঁদের মমতা-সরকার বাঁচানোর চেষ্টা করছে।” তুলেছেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, টেট কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গও। বলেছেন “স্কুল শিক্ষক নিয়োগে ৫৫ লক্ষ লোকের লোকসান হয়েছে। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কোন দলের লাভ হয়েছে? তৃণমূলের।” এই দুই প্রশ্নেই তৃণমূল সরকারকে লাগাতার আক্রমণ করেছেন মোদীও।

ডেবরার নির্বাচনী জনসভায় রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দুই কংগ্রেস
প্রার্থী শেখ আনোয়ার আলি (বাঁ দিকে) ও মানস ভুঁইয়া।

রাহুল গাঁধীর হেলিকপ্টার
দেখতে জনতার ভিড়।

কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর তোলা বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে রাহুল এ দিন দাবি করেছেন, কেন্দ্র যে টাকা দিচ্ছে, রাজ্য তা খরচ করতেই পারছে না। কেন্দ্রীয় প্রকল্প একশো দিনের কাজ নিয়ে রাজ্যের সাফল্যের দাবি উড়িয়ে তিনি বলেছেন, কংগ্রেস-শাসিত অসমে ওই প্রকল্পে বছরে ৯০ দিন কাজ মেলে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের গড় মাত্র ৩৫। এ দিন রাজ্যে প্রচারে আসা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশও একই অভিযোগ করেছেন।

বাম আমলের মতোই তৃণমূলও শুধু নিজের দলের কর্মী-সমর্থকদের স্বার্থ রক্ষা করছে আর বিরোধীদের আক্রমণ করছে বলে অভিযোগ করেন রাহুল। তাঁর মতে, “তৃণমূলের সঙ্গে থাকলে সব সুযোগ-সুবিধে পাবেন, কংগ্রেস বা অন্য কোনও দলের সমর্থক হলে ধোলাই খাবেন। আগে বামফ্রন্ট যা করত, এখন তৃণমূল তা করছে।” রাজ্যে শিল্পায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়ে রাহুলের মন্তব্য, “বিরোধী হিসেবে কাজ ভাল ছিল আপনার। কিন্তু সরকারে এসে কোনও কাজ হচ্ছে না।”

মমতার হাজার সমালোচনা করলেও তিনি আদতে তাঁকে সম্মান করেন বলেই বুধবার মন্তব্য করেছিলেন মোদী। কিন্তু মমতাকে করা ‘দিদি’ সম্বোধনে যত না শ্রদ্ধা ছিল, তার চেয়ে কটাক্ষ ছিল অনেক বেশি। এ দিন রাহুলও বলেন, তিনি মমতাকে সম্মান করেন। কিন্তু সেই বক্তব্যে কটাক্ষের ঝাঁঝ ছিল না। শহিদ মিনারের সমাবেশে তিনি বলেন, “মমতাজির সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক। আমি ওঁকে সম্মান করি। ওঁর সম্পর্কে যা বলি, ভালবেসে বলি, রাগ থেকে নয়।” আর এই সূত্র ধরেই মোদীকে বিঁধেছেন রাহুল। তাঁর মতে, মমতার মতো মোদীর বক্তৃতাতেও রাগের প্রকাশ ঘটে। কিন্তু মোদীকে বোঝানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, মোদী ‘সাগর পেরিয়ে গিয়েছেন’। কিন্তু “মমতাজির হৃদয় সাফ। ওঁকে বোঝাতে পারব যে ভালবেসেও কাজ করা যায়।”

মানসের শুভেচ্ছা সনিয়া-পুত্রকে। ডেবরায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

তবে ভোটবাজারে মোদী ও মমতার মধ্যে চাপানউতোর যতই চলুক ভোটের পরে তাঁদের মধ্যে জোটের আশঙ্কা যে কংগ্রেস করছে, সেটা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর কথায়, “ম-এ মমতা, ম-এ মোদী। দু’জনের মধ্যে একটা বোঝাপড়া তৈরি হচ্ছে, দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি।”

ডেবরা ও কলকাতায় রাহুলের সভায় ভিড় ভালই হয়েছে। সভার শেষে দু’জায়গাতেই নিরাপত্তার বেড়া এড়িয়ে সভায় উৎসাহী কংগ্রেস কমী-সমর্থকদের সঙ্গে হাত মেলান রাহুল।


ক্লিক করুন...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন