মানস জোটের বিরোধী, সবংয়ে কংগ্রেসের কর্মীরা কিন্তু পক্ষেই

তাঁর দলের রাজ্য সভাপতি থেকে নেতৃত্বের একটা বড় অংশ সিপিএমের সঙ্গে জোট চান। কিন্তু তিনি প্রথম থেকেই ওই জোট চাইছেন না।

Advertisement

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৪০
Share:

তাঁর দলের রাজ্য সভাপতি থেকে নেতৃত্বের একটা বড় অংশ সিপিএমের সঙ্গে জোট চান। কিন্তু তিনি প্রথম থেকেই ওই জোট চাইছেন না।

Advertisement

তিনি—সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। অথচ, সবংয়ের সাধারণ কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক থেকে নেতা— বেশির ভাগই কিন্তু বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করছেন বলে দলেরই অন্দরের খবর। তাঁরা মনে করছেন, জোট হলে সুবিধা বেশি। আর এর পিছনে তাঁরা তুলে ধরছেন অঙ্ক। শেষমেশ সিদ্ধান্ত কী হবে, তা বলবে দলের হাইকম্যান্ড। আজ, সোমবার দিল্লিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে জোট-আলোচনায় বসবেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। কিন্তু তার আগে জোট-অঙ্ক নিয়ে সবংয়ে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মধ্যে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।

কী সেই অঙ্ক? গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সবংয়ে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে সিপিএমকেই। তৃতীয় স্থানে থাকে তৃণমূল। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে নিকটতম সিপিএম প্রার্থীকে মানসবাবু ৬,৫১৩ ভোটে হারান। ওই বার কংগ্রেসের দখলে ছিল ৪৯.৭০ শতাংশ ভোট। সিপিএম পেয়েছিল ৪৪.৯৮ শতাংশ ভোট। তৃতীয় স্থানে থেকে তৃণমূল পেয়েছিল ৩.৫০ শতাংশ ভোট। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হয়। সবং কেন্দ্রে মানসবাবুর জয়ের ব্যবধান বেড়ে হয় ১৩,১৮৪। কংগ্রেসের ভোট শতাংশও ৪৯ থেকে বেড়ে হয় ৫১.২৫। ওই ভোটে বামেদের ভোট শতাংশ ছিল ৪৪.৪১। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল কেন্দ্রে প্রার্থী হন মানসবাবু। ভোটে একা লড়েছিল কংগ্রেস। ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত সবং বিধানসভা কেন্দ্রে মাত্র ১৬৮ ভোটে এগিয়ে ছিলেন মানসবাবু। যদিও সে বারেও কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের মুখোমুখি লড়াই হয়। কংগ্রেস পায় ৩২.৩৪ শতাংশ ভোট। বামেরা ৩২.২৮ শতাংশ। আর তৃণমূল পেয়েছিল ৩০.৪৪ শতাংশ ভোট।

Advertisement

এই সব অঙ্ক তুলে ধরেই কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, সিপিএমের সঙ্গে জোট হলে জয় পুরোপুরি নিশ্চিত হবে। জোটের পক্ষে চলে আসতে পারে অন্তত ৭৫ শতাংশ ভোট। তা ছাড়াও, দলীয় নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, তৃণমূল আমলে যা হচ্ছে, তাতে মানুষ অতিষ্ঠ। তৃণমূলের লোকেরা তৃণমূলের লোকেদেরই মারছে। বাম-আমলে এটা হতো না। তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলে মানুষ মেনে নেবেন না। তার চেয়ে সিপিএম ভাল। সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অমল পণ্ডা বলেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে জোট হলে আপত্তির কী আছে? বাম আমলে অত্যাচার হয়েছে। তবে তৃণমূল আমলে তার থেকেও বেশি হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রে ইউপিএ-১ সরকার হল কী করে? সিপিএম কংগ্রেসকে সমর্থন করেনি? সিপিএমের সঙ্গে জোট হলে সবং থেকে মানসবাবু ৫০ হাজার ভোটে জিতবেন! তৃণমূলকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না।”

মানসবাবুর এত আপত্তি কেন?

দলেরই কিছু নেতা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে এই কেন্দ্রে মানসবাবুকে সিপিএমের সঙ্গেই লড়াই করতে হয়েছে। এক সময়ে সিপিএমের হাতে অত্যাচারিত হয়ে অনেকে কংগ্রেসে আসেন। ফলে, মানসবাবুর পক্ষে প্রকাশ্যে সিপিএমের সঙ্গে জোটের কথা বলা মুশকিল। এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘মানসদা এই জোটে আপত্তি তো তুলবেনই। কারণ, সবংয়ের মানুষকে তিনি বোঝাতে চাইছেন, ৩৪ বছরের বাম অপশাসনকে তিনি ভুলে যাননি! পাঁচ বছরের তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসনকেও ভুলছেন না! একলা লড়ার কথা বলে মানসদা আসলে নিজের ভোট ব্যাঙ্ককেই আরও শক্তপোক্ত করতে চাইছেন।’’

মানসবাবুর আপত্তি স্বাভাবিক বলেই মেনে নিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হরেকৃষ্ণ সামন্ত। তিনি বলেন, “সিপিএম-বিরোধিতাই ওঁর রাজনীতির প্রধান বিষয়। এটা স্বাভাবিক! তবু, তৃণমূলের মোকাবিলায় বৃহত্তর ঐক্যই চাই।”

রাহুল গাঁধীর সঙ্গে আলোচনায় বসার ২৪ ঘণ্টা আগেও মানসবাবু কিন্তু তাঁর অবস্থানে অনড়ই রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘২০০৬ সালে আমি তো সিপিএম এবং তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করেই জিতেছি।” হাইকম্যান্ড যদি সিপিএমের সঙ্গে জোটের পক্ষেই মত দেয়? ‘‘হাইকম্যান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা মেনে নেব’’— বলছেন মানসবাবু। দলের কর্মী-সমর্থকরাও আপাতত সেটাই চাইছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন