মঙ্গলকোটে সভা সিপিএমের, গড়বেতায় সুশান্তের

এক দিকে বর্ধমানের মঙ্গলকোট, অন্য দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা। শনিবার এক সময়ের এই দুই ‘গড়’-এ নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করল সিপিএম।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১০
Share:

গড়বেতায় সিপিএমের কর্মিসভায় (বাঁ দিক থেকে) দীপক সরকার, তপন ঘোষ, সুকুর আলি ও সুশান্ত ঘোষ। শনিবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

এক দিকে বর্ধমানের মঙ্গলকোট, অন্য দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা।

Advertisement

শনিবার এক সময়ের এই দুই ‘গড়’-এ নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করল সিপিএম। তিন বছর পরে মঙ্গলকোটে সভা করল সিপিএম। ভিড়ও হল যথেষ্ট। আর পাক্কা দু’বছর ১১ মাস ১১ দিন পরে দলীয় বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের কর্মিসভা দিয়ে গড়বেতায় ভোটের প্রচার শুরু করল তারা। সেখানে ছিলেন তপন ঘোষ, সুকুর আলিও। এত দিন পরে দু’জায়গায় সভা করতে পারার জন্য নির্বাচন কমিশনকেই ধন্যবাদ জানিয়েছে সিপিএম।

কয়েক দশক ধরে ওই দু’টি এলাকায় সিপিএমের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলত বিরোধীরা। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টায়। প্রভাব বাড়ে তৃণমূলের। এর মধ্যে মঙ্গলকোট বিধানসভা আসনটি সিপিএম এখনও দখলে রাখলেও বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরী জেতেন মাত্র ১২৮ ভোটে। কিন্তু ২০১০ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সভা করে যাওয়ার পরে আর সেখানে সিপিএমের সভা দেখা যায়নি। সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। বন্ধ হয়েছে সিপিএমের তিন-চারটি কার্যালয়। বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে সিপিএম একটা বড় অংশে প্রচার চালাতে পারেনি। পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। পঞ্চায়েত সমিতির অনেকগুলি আসনেও তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে।

Advertisement

সেই মঙ্গলকোটেই সিপিএমের শনিবারের সভায় পুলিশের হিসেবে, ভিড় হয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের। দিন কয়েক আগে এখানকার নতুনহাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মাঠে সভা করেছিল, এ দিন সেখানেই সিপিএম সভা করে। সভা শেষে ফেরার পথে নতুনহাট-কাটোয়া রোডের ঝিলু মোড়ে সিপিএমের সমর্থকদের গাড়িতে ইট ছুড়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সাত সিপিএম সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করে। তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চৌধুরীর দাবি, “এই ঘটনায় তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়। ভোটের আগে মিথ্যা প্রচার করছে সিপিএম।”

কিন্তু এ দিনের ওই সভার জন্য তৃণমূলই ভয় পেয়েছে বলে দাবি করেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক। তিনি বলেন, “মঙ্গলকোটের মাটিতে দীর্ঘ সময় পরে আমরা সভা করেছি। ভয়কে উপেক্ষা করে প্রচুর মানুষ সভায় এসেছিলেন। তৃণমূল ভয় পেয়ে এই আক্রমণ চালিয়েছে।” সভার প্রধান বক্তা তথা রায়গঞ্জ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম বলেন, “মানুষের পিঠ ঠেকে গিয়েছে। গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য

মানুষ এগিয়ে এসেছেন।” মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয়

সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কেও নানা ভাবে বিঁধেছেন সেলিম। তুলেছেন চিটফান্ড প্রসঙ্গও।

ঝাড়গ্রামের সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কের সমর্থনে গড়বেতার সভায় অবশ্য তেমন ভিড় হয়নি। এক সময় যে গড়বেতায় সিপিএমের পথসভাতেও দেড়-দু’হাজার লোকের জমায়েত হত, সেখানে গোটা ব্লকের কর্মীদের নিয়ে এ দিনের সভায় মেরেকেটে হাজার দেড়েক লোক হয়েছিল।

রাজ্যে পালাবদলের পরপরই গড়বেতার সিপিএম বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্তবাবুর দেশের বাড়ির এলাকা বেনাচাপড়া সংলগ্ন দাসেরবাঁধে হাড়গোড় উদ্ধার হয়। সেই কঙ্কাল-মামলায় নাম জড়ায় সুশান্তবাবুর। তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরে জামিন পান তিনি। তবে এত দিন নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে আসেননি। সিপিএমের গড়বেতা জোনাল সম্পাদক সুকুর আলি এবং জোনাল সদস্য তপন ঘোষও নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় নাম জড়িয়ে দীর্ঘ দিন আত্মগোপন করেছিলেন। গত বছর তমলুক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তাঁরা। কয়েক মাস আগে দু’জন জামিন পান। তারপরেও অবশ্য গড়বেতায় তাঁরা পা রাখেননি।

সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ি থাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাস এখন নিয়ন্ত্রণে। তাই এলাকায় প্রচার চালানো সম্ভব হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এ দিনের সভাস্থলে পুলিশও ছিল। তাছাড়া, গড়বেতায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের সুযোগে সিপিএম কিছু এলাকায় শক্তি বাড়াচ্ছে বলে খবর। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সন্ত্রাসের অভিযোগ

উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের পাল্টা ব্যাখ্যা, এলাকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে জন্যই বিরোধীরা প্রচার চালাতে পারছে।

এ দিন বক্তব্যের গোড়াতেই দীর্ঘ দিন নিজের বিধানসভা এলাকায় আসতে না পারার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন সুশান্তবাবু। কেন এত দিন তিনি এবং তপন-সুকুর এলাকায় আসতে পারেননি, সেই ব্যাখ্যাও দেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। আগাগোড়া তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন। ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলার দাওয়াই দিয়ে দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “ওরা হল শেয়ালের মতো। দেখলেই তেড়ে আসবে। কিন্তু পাল্টা তেড়ে যান। পালিয়ে যাবে।”

গড়বেতা ছাড়ার আগে ‘ভূমিপুত্র’ সুশান্তবাবু বলেন, “বিধানসভা এলাকায় ঢোকার ক্ষেত্রে সমস্যা নেই ঠিকই, কিন্তু জেলায় ঢুকতে হলেই তো অনুমতি লাগবে। কতবার আর অনুমতি নেব।” তাঁর আরও অভিযোগ, “প্রশাসনেরও একটা অংশ রাজি নয়, আমি গড়বেতায় আসি।” সভায় ভিড় তেমন না হওয়ার জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাধা দানের অভিযোগ তোলেন সুশান্তবাবুরা। অভিযোগ উড়িয়ে গড়বেতার তৃণমূল নেতা অসীম ওঝার দাবি, “ বলেন, “গড়বেতার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে, আর তাঁরা সিপিএমকে চান না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন