বছর পাঁচেক বাড়িছাড়া। এলাকায় ফিরতে চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শাসনের মজিদ মাস্টার (সিপিএম নেতা মহম্মদ মজিদ আলি)। বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া সোমবার নির্দেশ দিয়েছেন, মজিদকে বাড়িতে ফেরানোর ব্যাপারে পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ এখনও হাতে পাইনি। পেলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ করব।”
তবে কাজটা যে খুব মসৃণ হবে না, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। এ দিন বিকেলেই মজিদ মাস্টারকে শাসনে ঢুকতে দেওয়া হবে না দাবি তুলে মিছিল করেছেন স্থানীয় মহিলাদের একাংশ। রাজনৈতিক পোস্টার-ব্যানার না থাকলেও স্থানীয় সূত্রের দাবি, মিছিলের উদ্যোক্তা শাসক দলের নেতা-কর্মীরাই।
রবিবার শাসনের সভা থেকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, মজিদ এলাকায় ফিরলে মানুষ তাঁর বিচার করবেন। জ্যোতিপ্রিয় এ দিন বলেন, “সব নাগরিকের অধিকার আছে নিজের বাড়িতে থাকার। কিন্তু যিনি এলাকার মানুষকে খুন করেছেন, লুঠপাট করেছেন, বহু মানুষকে ঘরছাড়া করেছেন, তাঁকে স্থানীয় মানুষ ঢুকতে দেবেন কি না, তা আদালতের ভেবে দেখা উচিত।”
মন্ত্রীর সংযোজন, “আদালতে আবেদন করব, এক জন স্পেশ্যাল অফিসার নিয়োগ করতে যিনি মানুষের কাছে শুনবেন, তাঁরা কী চাইছেন। এলাকার মানুষ যদি চান মজিদ শাসনে ফিরে আসুন, তা হলে আমরা তাঁকে চ্যাংদোলা করে গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসব।”
পরিস্থিতি জানেন মজিদও। হাইকোর্টের নির্দেশ জেনেও তাঁর আশঙ্কা, “অক্টোবরে যখন বাড়ি ফিরি, তৃণমূল বাধা দিয়েছিল। পুলিশ উল্টে আমাকেই গ্রেফতার করে।” দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদের নেতৃত্বে শাসনে সিপিএমের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। উত্তর ২৪ পরগনার এই ভেড়ি এলাকায় কার্যত তিনিই ছিলেন শেষ কথা। বাম জমানার শেষ দিকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন। তখন থেকে মজিদ এলাকাছাড়া। কিন্তু বাম নেতাদের একাংশের ধারণা, শাসনে মজিদের কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা আছে বুঝেই তাঁকে সেখানে ফিরতে দিতে আপত্তি তৃণমূলের।
মজিদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, বাড়িতে ঢুকতে না পেরে ২০ অক্টোবর এসপি-র কাছে অভিযোগ জানান তাঁর মক্কেল। কাজ না হওয়ায় হাইকোর্টে যান। রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত জানান, মজিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে রিপোটর্র্ দিয়েছে পুলিশ। যা শুনে বিচারপতি জানান, কোনও নাগরিকের নিজের বাড়িতে ঢোকার জন্য একাধিক মামলা থাকা বাধা হতে পারে না। সরকারি কৌঁসুলি সুমন সেনগুপ্ত জানান, একটি মামলার সাক্ষীকে মজিদ হুমকি দিচ্ছেন বলেও পুলিশের রিপোর্ট। বিচারপতি জানান, সে ক্ষেত্রে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।