প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়িভাড়া ভাতা কাটার বিষয়টি তাঁর জানাই নেই। কিছু দিন পরে মন্ত্রী জানান, বেতনে এ ভাবে কোপ মারার ব্যাপারে তাঁর আপত্তি আছে এবং ওই টাকা যাতে কাটা না-হয়, মৌখিক ভাবে তিনি সেই নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রীর আপত্তিও ধোপে টিকছে না। অর্থ দফতরের নির্দেশিকা মেনেই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে বাড়িভাড়া ভাতা কাটা হচ্ছে।
কিছু কলেজে কয়েক মাস আগেই ভাতা কাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ইদানীং অধিকাংশ কলেজেরই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে ওই অংশটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
২০১২ সালে রাজ্যের অর্থ দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে জানায়, কোনও সরকারি কর্মচারীর স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও বাড়িভাড়া বাবদ মিলিত ভাবে তাঁদের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ছ’হাজার ছাড়াতে পারবে না। ২০১৪-র শেষ থেকে ওই নির্দেশিকা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কিছু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। তার জেরে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছেন না। আবার অনেকের বেতন থেকে এই বাবদ আগে পাওয়া অর্থ কেটেও নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
অথচ এই বেতন ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের তরফে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, তাঁকে অন্ধকারে রেখেই শিক্ষা দফতর এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে বাড়িভাড়া বাবদ অর্থ না-কাটার মৌখিক নির্দেশও দেন তিনি। তা হলে অর্থ কাটা হচ্ছে কী করে?
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, সরকারি কোষাগার থেকে যাঁদের বেতন দেওয়া হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অর্থ দফতরের নির্দেশিকাই চূড়ান্ত। এ ব্যাপারে শিক্ষা দফতর পৃথক নির্দেশ জারি না-করলেও সমস্যা নেই। সেই যুক্তিতেই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন কাটা হচ্ছে বলে শিক্ষা দফতরের দাবি। ভাতা কাটার ব্যাপারে পার্থবাবুর আপত্তি প্রসঙ্গে ওই শিক্ষা আধিকারিক বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী তো লিখিত ভাবে বেতন না-কাটার নির্দেশ দেননি। উনি কাকে মৌখিক ভাবে কী নির্দেশ দিয়েছেন, তা জানি না। সরকারি নিয়ম মেনেই যা করার করা হচ্ছে।”
স্কুলশিক্ষকদের ক্ষেত্রেও এমন নিয়ম চালু হয়েছে কয়েক মাস আগে। সে-ক্ষেত্রে অর্থ দফতরের নির্দেশিকা রূপায়ণের কথা জানিয়ে স্কুলশিক্ষা দফতর একটি নোটিস জারি করেছিল। তাই উচ্চশিক্ষা দফতরের দাবি উড়িয়ে শাসক দল তৃণমূলেরই শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু বলেন, “অর্থ দফতরের নির্দেশিকা সরাসরি আমাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে কী করে? আমরা তো সরকারি কর্মচারী নই। এর জন্য শিক্ষা দফতরের পৃথক নির্দেশিকা অবশ্যই প্রয়োজন।”
ভাতা কাটার বিরোধিতা করে উচ্চশিক্ষা দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন (ওয়েবকুটা)। শুক্রবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, “আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যাটার কথা জানাব।” বুধবার পর্যন্ত বিধানসভা চলায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু সেখানেই ব্যস্ত ছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “দোল ও হোলি উপলক্ষে দফতরে ছুটি। সোমবারের আগে এই নিয়ে কিছু বলতে পারব না।” কিন্তু তাঁর আপত্তি সত্ত্বেও বেতন কাটা হচ্ছে কী ভাবে?
“এখন বৈঠকে ব্যস্ত আছি। কিছু বলতে পারব না,” জবাব শিক্ষামন্ত্রীর।