মমতার টক্করে বিজেপির তারাবাজি

তারার টক্কর? না কি ভোটের তারাবাজি? দু’দিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তূণ থেকে একে-একে বার করেছেন দেব, মুনমুন, সন্ধ্যা রায়, ইন্দ্রনীল, সৌমিত্র (ভূমি), ভাইচুং। পি সি সরকারকে ভোটে দাঁড় করানোর জাদু বিজেপি আগেই দেখিয়েছিল। শনিবার তাদের ধনুকের ছিলা থেকে বেরোল বাবুল সুপ্রিয়, নিমু ভৌমিক, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৩:০০
Share:

তারার টক্কর? না কি ভোটের তারাবাজি?

Advertisement

দু’দিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তূণ থেকে একে-একে বার করেছেন দেব, মুনমুন, সন্ধ্যা রায়, ইন্দ্রনীল, সৌমিত্র (ভূমি), ভাইচুং। পি সি সরকারকে ভোটে দাঁড় করানোর জাদু বিজেপি আগেই দেখিয়েছিল। শনিবার তাদের ধনুকের ছিলা থেকে বেরোল বাবুল সুপ্রিয়, নিমু ভৌমিক, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

শতাব্দী-তাপসে গত লোকসভা ভোটেই ভেল্কি দেখানো শুরু করেছিলেন মমতা। বীরভূম কেন্দ্রে এ বার সেই শতাব্দীর মুখোমুখি পদ্ম হাতে জয়। কয়েক বছর আগে ‘পুনর্মিলন’ বলে একটি ছবিতে তাঁরা ছিলেন নায়ক-নায়িকা। শতাব্দী তাঁর খুব ‘ভাল বন্ধু’ বলেও জানিয়েছেন জয়। কিন্তু এ বার সিনটা আদৌ মিলনের নয়, বরং ট্র্যাজিক হওয়াই প্রায় অবশ্যম্ভাবী।

Advertisement

নিমুবাবু আবার ট্র্যাজেডি ঘোচাতেই বিজেপি-র নৌকায় উঠেছেন। যৌবন থেকে সিপিএম করা সত্ত্বেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা তাঁকে ‘নিজেদের লোক’ মনে করেননি। আবার সিপিএম-ঘনিষ্ঠ বলেই তাঁকে ব্রাত্য করে রেখেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শিল্পীদরদী’ সরকার আক্ষেপ অভিনেতা নির্মলেন্দু ওরফে নিমু ভৌমিকের। সেই জ্বালা মেটাতে তিনি ৭৯ বছর বয়সে নরেন্দ্র মোদীর দলের হয়ে রায়গঞ্জে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।

গড়িয়ার কানুনগো পার্কে নিমুবাবুর তিন কামরার সাদামাটা ফ্ল্যাট প্রয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর ছবিতে ভরা। ফোন সামলাতে-সামলাতে একগাল হেসে নিমুবাবু বলেন, “আমাদের সম্পর্ক ছিল দাদা-ভাইয়ের মতো।” তার পরেই “অনেক দিন বাদে এই রকম অ্যাটেনশন পাচ্ছি তো, নার্ভাস লাগছে। সে একটা দিন ছিল। কী সব ছবি করেছি। ‘মন নিয়ে’, ‘হার মানা হার’, ‘ব্রজবুলি’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘স্ত্রীর পত্র’। রাস্তায় বেরোলেই সবাই চিনে ফেলত। মনে হচ্ছে সেই সব দিন ফিরে এসেছে।”

কিন্তু রায়গঞ্জে লড়াই তো একা কংগ্রেসের বর্তমান সাংসদ দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে নয়। তৃণমূলের হয়ে প্রিয়রঞ্জনের ভাই, সিপিএমের হয়ে মহম্মদ সেলিম। “আরে ধুর! বৌদি-দেওরে লাঠালাঠি লাগবে। আর সেলিমের সভায় তো লোক-ই হয়নি। আমার জনপ্রিয়তা নেই ভাববেন না। ৫৬ বছর অভিনয় করছি। এখনও যাত্রার মঞ্চে দাঁড়ালে হাততালি থামতে চায় না। সুভাষদা এই সব জানতেন। বাকি আর কেউ বুঝতে পারেননি।”

এক সময়ে সুভাষ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তীও। আপাতত তিনি তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ। ভারতজয়ে বেরিয়ে তাঁর বলিউড-ক্যারিশমা ভাঙানোর ছকও কষে ফেলেছে তৃণমূলের ‘ওয়ার রুম’। কিন্তু নিমুবাবু মনে করেন, সুভাষ-ঘনিষ্ঠতাই তাঁকে অস্পৃশ্য করে তুলেছিল। তাঁর কথায়, “উনি মারা যাওয়ার পরে সিপিএমের বাকিরা আমাকে ‘অমুকের লোক’ বলে আলাদা করে রাখল। মমতা আসার পরেও ফিরে তাকালেন না। এত শিল্পী এত সম্মান পেলেন, নিমু ভৌমিকের কিছু জুটল না।”

জয় আবার লড়ছেন নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে। শতাব্দীর মতো তাঁকেও এত দিন ‘দিদি’র মঞ্চেই দেখা যেত। জয় জানিয়েছেন, তাঁর বাবা সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্ত্রী অনন্যাও মমতার অন্ধ ভক্ত। বিজেপি-র প্রার্থী হওয়ায় জয়ের পরিবারের সদস্যরা তাঁর উপর ক্ষুব্ধ। শনিবার সন্ধ্যায় জয় বললেন, “বাবা আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করতে পারেন বলে হুমকি দিয়েছেন। এমনকী অনন্যা (এখনও তৃণমূলে আছেন) বলেছে, আমকে ডিভোর্স করতে পারে।”

পরিবারের বিরাগভাজন হয়ে শতাব্দীর মুখোমুখি হতে চললেন? কেন?

‘অপরূপা’, ‘মিলনতিথি’র মতো হিট ছবি-সহ চল্লিশটিরও বেশি বাংলা ছবির নায়ক, প্রায় আট বছর ধরে যাত্রার নায়ক জয় বলেন, “উপায় ছিল না। ২০০৩ সালে দুর্ঘটনার পরে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে আমার মনে হল, মানুষের শুভেচ্ছা-ভালবাসায় আমি পুনর্জীবন লাভ করেছি। মনে হল, আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ আছে, তাদের জন্য আমাকে কাজ করতে হবে। বিজেপি আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছে।”

রাজ্যে বিজেপিকে প্রাসঙ্গিক করার জন্য প্রার্থী বাছাইয়ে যথাসম্ভব চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নেতারা। প্রথম দফায় পি সি সরকার, জর্জ বেকারকে প্রার্থী করার পর এ দিন রাজ্যসভার সাংসদ চন্দন মিত্রকেও হুগলি কেন্দ্রের প্রার্থী করা হয়েছে। এখনও দার্জিলিং-সহ আটটি আসনে প্রার্থী দেওয়া বাকি।

দিল্লিতে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহের উপস্থিতিতে ঘটা করে বাপি লাহিড়ীকে বিজেপিতে সামিল করার সময় থেকে প্রত্যাশা ছিল, পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভায় লড়বেন তিনি। বাপি নিজেও সেই সময় লোকসভায় লড়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, এখন তাঁর লড়ার সম্ভাবনা কম।

বাপিকে আজ ফোন করায় তিনি জানান, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার ব্যস্ততা রয়েছে। নির্বাচন লড়তে হলে সময় দিতে হবে। হয়তো এ বারে আর লড়া হবে না। তবে আমি নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির জন্য গান তৈরি করেছি। হোলির এক দিন আগে থেকেই গোটা দেশে তা প্রচারে ব্যবহার হবে। গানগুলির বাংলা করে রাহুল সিংহকে দিচ্ছি।”

সেলিব্রিটির নামগানে আপাতত মজেছে বাংলার ভোটরঙ্গ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন