মমতার সুরে সুর বদলে নবান্নও ডাকছে দিল্লিকে

মন বদলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মত বদলেছে তাঁর প্রশাসনও। মুখ্যমন্ত্রীর ‘আপত্তি’ থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়ে হতাশ হতে হয়েছে নীতি আয়োগের উপদেষ্টা শমিত দাশগুপ্তকে। কিন্তু ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে নবান্নের কর্তারা এখন তাঁকেই সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে বৈঠক করতে চাইছেন!

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

মন বদলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মত বদলেছে তাঁর প্রশাসনও।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর ‘আপত্তি’ থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়ে হতাশ হতে হয়েছে নীতি আয়োগের উপদেষ্টা শমিত দাশগুপ্তকে। কিন্তু ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে নবান্নের কর্তারা এখন তাঁকেই সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে বৈঠক করতে চাইছেন!

পরিস্থিতিতে পরিবর্তনটা কী হল?

Advertisement

কেন্দ্রে সরকার বদল হওয়া ইস্তক গত ন’মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির নর্থ ব্লককে এড়িয়ে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হবেন না বলে সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে আয়োজিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া (নীতি) আয়োগ গঠনের বৈঠকেও তিনি হাজির ছিলেন না। এমনকী, কোনও প্রতিনিধিকেও মমতা সেখানে পাঠাননি। বরং বৈঠকের দিনই ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দেন, নীতি আয়োগ গঠন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত এবং তিনি এর বিরোধিতা চালিয়ে যাবেন।

এই ছবিটাই ইদানীং অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আচমকাই অবস্থান পাল্টে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছেন। যত দূর ঠিক রয়েছে, আগামী ৯ মার্চ বড় মাপের প্রতিনিধিদল নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। মমতা জানিয়ে রেখেছেন, ঋণের সুদ-আসল মিলিয়ে যে বিপুল টাকা রাজ্যকে শুধতে হয়, তাতে তিন বছরের জন্য ছাড় মঞ্জুরের পুরনো দাবি তিনি প্রধানমন্ত্রীর দরবারে ফের তুলে একটা সুরাহা চাইবেন।

মুখ্যমন্ত্রীর পথ ধরে তাঁর প্রশাসনের মাথারাও অবস্থান পাল্টে ফেলেছেন। নীতি আয়োগের উপদেষ্টার সঙ্গে কলকাতায় বৈঠক করতে তাঁরা এখন ঘোরতর আগ্রহী। নবান্নের কর্তারা চেয়েছিলেন, বৈঠক হোক ৯ তারিখেই। কিন্তু সে দিন দিল্লির উপদেষ্টার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় এ মাসের অন্য কোনও দিন সেই আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু আয়োগের উপদেষ্টা কেন রাজ্যের সঙ্গে বসতে চান? নবান্নের খবর: ভর্তুকির টাকা সরাসরি নাগরিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া (ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার) সংক্রান্ত পাঁচটি প্রকল্প দেখভালের দায়িত্ব আয়োগকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পগুলি হল: রেশন, একশো দিনের কাজ, নানান ভাতা, স্কলারশিপ ও রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির টাকা সংক্রান্ত। আয়োগের পক্ষে শমিতবাবুই প্রকল্পগুলি দেখার দায়িত্বে।

এবং কেন্দ্রের দাবি, এই সব ক্ষেত্রে ১০% সাফল্যও পশ্চিমবঙ্গ অর্জন করতে পারেনি। তাই আয়োগের উপদেষ্টা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র-সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিনি কলকাতায় গিয়ে কথা বলতে চান। তখন সে চিঠির উত্তর দেওয়ার সৌজন্যটুকুও নবান্ন দেখায়নি বলে কেন্দ্রীয়-সূত্রে আক্ষেপ শোনা গিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি লিখে উষ্মা প্রকাশ করেন শমিতবাবু। তাঁর বক্তব্য ছিল, উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির টাকা সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার কাজে পশ্চিমবঙ্গের হাল বেশ খারাপ। এ বিষয়ে আলোচনার জন্যই তিনি কলকাতায় যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাজ্যের তরফে সাড়া পাননি। ‘এমতাবস্থায় বিষয়টি সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থান ও কিছু পরিসংখ্যান আয়োগ জানতে চায়। তা পাঠানোর ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।’ মুখ্যসচিবকে লিখেছিলেন আয়োগ-উপদেষ্টা।

ওই চিঠি পেয়ে মুখ্যসচিব নড়ে-চড়ে বসেন। নবান্নের এক কর্তার কথায়, “এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর নরম মনোভাবের আভাস মিলতে থাকে। জানা যায়, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও নানা বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মাঝে-মধ্যে কথা হচ্ছে। সুতরাং আয়োগ-উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক নিয়েও ছুৎমার্গ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।”

তাই ৯ মার্চ নবান্নে বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়ে শমিতবাবুকে চিঠি দেন মুখ্যসচিব। সিদ্ধান্ত হয়, স্বরাষ্ট্র দফতরের অফিসার রাকেশকুমার গুপ্ত এবং খাদ্য, পঞ্চায়েত, সংখ্যালঘু, অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন ও পুর দফতরের সচিবেরা আলোচনায় থাকবেন। সেই মতো তাঁদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। ঠিক হয়, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির টাকা সরাসরি পাঠানোর প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করতে কেন্দ্রের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতাই করবে রাজ্য। পাশাপাশি আরও জোর দেওয়া হবে আধার কার্ড তৈরি ও জনধন যোজনার অ্যাকাউন্ট খোলায়।

শমিতবাবু মুখ্যসচিবকে জানিয়ে দিয়েছেন, ৯ মার্চ তিনি কলকাতায় আসতে পারছেন না। তবে এ মাসের শেষের দিকে বৈঠক হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন