ময়দান ছাড়ব না, ঘোষণা বাপ্পী-জলুর

ভোটের ফলে দু’জনকেই হার মানতে হয়েছে। কিন্তু সেই হারও যে আমজনতার থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না, পৃথক পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে সে কথাই স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপির দুই ‘হেভিওয়েট’ পরাজিত প্রার্থী বাপ্পী লাহিড়ী এবং সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবু। ভোটে পরাজয়ের পরে দু’জনেই এই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রিষড়া ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

রিষড়ায় বাপ্পী লাহিড়ী। (ডান দিকে) কৃষ্ণনগরে সাংবাদিক বৈঠকে সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (জলুবাবু)। —নিজস্ব চিত্র।

ভোটের ফলে দু’জনকেই হার মানতে হয়েছে। কিন্তু সেই হারও যে আমজনতার থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না, পৃথক পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে সে কথাই স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপির দুই ‘হেভিওয়েট’ পরাজিত প্রার্থী বাপ্পী লাহিড়ী এবং সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবু।

Advertisement

ভোটে পরাজয়ের পরে দু’জনেই এই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। প্রতিশ্রুতি দিলেন এলাকার মাটি কামড়ে পড়ে থাকার। মঙ্গলবার রিষড়ায় একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বাপ্পী প্রথমেই বলেন, “অনেকে বলেছিলেন, শ্রীরামপুরে আমি জিতলে এলাকায় আসব না। আমি তাঁদের উদ্দেশে বলি, শ্রীরামপুর লোকসভায় জিতিনি। তারপরও কিন্তু এসেছি।” আগামী দিনেও তিনি নিয়মিত শ্রীরামপুরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন বলে আশ্বাসও দেন। পাশাপাশি লোকসভা ভোটের প্রচারে তিনি শ্রীরামপুর কেন্দ্রে সঙ্গীত অ্যাকাডেমি এবং পর্যটন কেন্দ্র-সহ যে সব উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন, সে সব নিয়েও ‘মোদীজির’ সঙ্গে কথা বলবেন বলে আগাম জানিয়ে রাখলেন।

বস্তুত, হুগলির যে সব পুরসভায় ভোট রয়েছে, সেই ভোট যে বিজেপি এখন পাখির চোখ করছেন, তা বাপ্পীর এই শ্রীরামপুরে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকার কথা ঘোষণার থেকেই স্পষ্ট। শ্রীরামপুর লোকসভার মধ্যে ডানকুনি পুরসভার ভোট এখন দরজায় কড়া নাড়ছে। দু’ বছরের মধ্যেই বিধানসভা ভোট। সেই ভোটে শ্রীরামপুরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে বাপ্পী অবশ্য বলেন, “এখন আমি কিছু বলব না। কাল দিল্লি যাচ্ছি। রাজনাথজি (সিংহ) আমাদের নেতা। তিনি যা বলবেন তাই করব। আগামী ১০দিন দেখুন। অনেক কিছু ঘটবে।”

Advertisement

এ দিনই আবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নিচ্ছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জলুবাবু (সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়)। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী তাপস পালের কাছে পরাজয়ের পরে জলুবাবু কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে এই তাপস পালের কাছে হেরে গিয়েই অভিমান ভরে ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এ বার কী করবেন, তা নিয়ে দলের মধ্যেই কানাঘুষো চলছিল। ধোঁয়াশা কাটিয়ে মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে জলুবাবু স্পষ্ট করে দেন, ‘‘না, আমি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছি না। মানুষের যে ভালবাসা পেয়েছি তা প্রত্যাখ্যান করা ঠিক হবে না। আমি মানুষের পাশেই থাকব।”

সাংবাদিক সম্মেলনে জলুবাবু তাঁর পরাজয়ের কারণ হিসাবে সংখ্যালঘু ভোট না পাওয়ার পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও দায়ী করেছেন। তিনি আরও জানান, বিজেপি যে জনসমর্থন পেয়েছে, তা ধরে রাখতে নেতৃত্বের পরিবর্তন দরকার। তিনি দলীয় নেতৃত্বকে তৃণমূল স্তর থেকে নেতা তুলে আনার পরামর্শও দেন। হারের জন্য কি তা হলে জেলা নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন জলুবাবু? স্পষ্ট উত্তর না-দিয়ে তাঁর মন্তব্য, তিনি ‘জেলা, রাজ্য তথা সর্বস্তরে’ নেতৃত্বে বদলের কথা বলছেন। জলুবাবুর এই মন্তব্যে দলের মধ্যেই অসন্তোষ ছড়িয়েছে। ক্ষুব্ধ নদিয়ার বিজেপি জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলে বসেন, “উনি সংগঠনকে ব্যবহার করেননি। দলীয় সংগঠনের মাধ্যমে ভোট পরিচালনা করেননি। নিজের মতো করে আলাদা নির্বাচন কমিটি গঠন করে ভোট পরিচালনা করেছেন। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে পরাজয়ের এটাই প্রধান কারণ।”

বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জয়ী বা পরাজিত সমস্ত দলীয় প্রার্থীকেই এলাকায় কর্মীদের সঙ্গে থেকে রাজনৈতিক লড়াই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে দল সমস্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে থেকে রাজ্যে এগোবে।” তবে নদিয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি অমলবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন