রায়দিঘির সভায় কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
দলের তিন কর্মী খুনের ঘটনায় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে এসে সভা করে সিপিএমের নাম না নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে এলাকা দখলের চেষ্টা চলছে। সেই রায়দিঘিতেই মমতার সভার পাঁচ দিনের মাথায় সভা করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে নেমে আন্দোলন করতে বললেন। ডাক দিলেন, প্রতিরোধের।
সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির খাঁড়ি গ্রামে তিন তৃণমূল কর্মী ও তাঁদের এক সঙ্গী খুন হন। ওই ঘটনায় প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় এবং সিপিএম নেতা বিমল ভাণ্ডারী-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূল। ইতিমধ্যে বিমলবাবু-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি সিপিএমের।
রবিবার বিকেলে রায়দিঘির কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুল মাঠে জনসভায় বুদ্ধবাবু বলেন, “রাজ্যজুড়ে সিপিএম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তবে, শুধু মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমে নয়, মাঠে নেমে এর প্রতিবাদ করতে হবে। রাজ্যে আন্দোলন আর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” নিজেকেও সেই আন্দোলনের শরিক বলে দাবি করেন বুদ্ধবাবু। পাশাপাশি রায়দিঘির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কাগজে পড়লাম, চার জন খুন হয়েছেন। কেউ চায় না, মানুষ খুন হোক। আমরা সকলেই বলছি, এটা ঠিক নয়।”
গত ১ জুলাই মমতা রায়দিঘিতে গিয়ে নিহত চার দনের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছিলেন। পরে সভায় বলেছিলেন, “খুনিরা মুম্বই, লন্ডন, আমেরিকা, যেখানেই থাকুক না কেন, আমাদের পুলিশ তাদের ঠিক ধরে আনবে।” এ দিনের সভায় সেই পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীঁর দাবি, “পুলিশ তদন্ত করে বুঝতে পারছে, কাদের গ্রেফতার করতে হবে। তা সত্ত্বেও তাদের গ্রেফতার করছে না।” বিমল ভাণ্ডারী বা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নেতাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।
এ দিনের সভায় কান্তিবাবু ছাড়াও ছিলেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। খুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তুলে কান্তিবাবু জানান, লোকসভা ভোটের পরেই ওই এলাকায় পরিবেশ অশান্ত হচ্ছিল। সে কথা তিনি পুলিশ সুপারকে ফোনে জানিয়েওছিলেন। কান্তিবাবুর দাবি, “রায়দিঘি থানাও বিষয়টি জানত। খুন হওয়ার কয়েক দিন আগে নিহতদের কয়েক জন থানায় গিয়ে নিজেদের নিরাপত্তার আবেদন করেছিল। আসলে তৃণমূলের ভিতরে দ্বন্দ্বকে আড়াল করতেই পুুলিশ বিমলবাবুর মতো সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।”
সম্প্রতি রাজ্যে সিন্ডিকেট নিয়ে গোলমাল ও খুনের ঘটনায় তৃণমূল নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়া নিয়ে বুদ্ধবাবুর কটাক্ষ, “রাজ্য জুড়ে এখন সিন্ডিকেটের খুন। নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি হচ্ছে। আর সরকার যা বলছে, পুলিশ তাই করছে। যাদের ধরতে বলছে, তাদেরই ধরছে!” তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের উস্কানিমূলক মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বুদ্ধবাবু বলেন, “তৃণমূলের এক সাংসদ যে ভাষায় কথা বলছেন, কোনও ভদ্রসন্তান সে ভাষায় কথা বলতে পারে না। কোনও মানুষ কি এই ভাষায় কথা বলতে পারে?
বুদ্ধবাবুর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতা তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বুদ্ধবাবু যদি সব ন্যায় করে থাকেন, তা হলে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে মানুষ কি অন্যায় করেছে? যদি ওঁর সময়ে ন্যায়ই হত, তা হলে তপন ঘোষ বা সুকুর আলিরা দলের সম্পদ হত না। ওঁর আমলে সিপিএমের কেউ গ্রেফতার হয়নি।”
এ দিনের সভায় ভিড় হয়েছিল ভালই। সুজনবাবু বলেন, “কয়েক দিন আগে উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এখানে সভা করেছেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেখানে হাজার তিনেক লোকের (পুলিশের হিসেবে অবশ্য ৭-৮ হাজার) ভিড়ও হয়নি। কিন্তু, এ দিন আমাদের সভায় ২০-২২ হাজার লোক এসেছিলেন।”