রাজ্যের কাছে পিএসসি ফেরত চাইবে খর্ব ক্ষমতা

রাজ্য সরকারি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর সিংহভাগ ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পিএসসি কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে চিঠি লিখে সেই হারানো এক্তিয়ার ফেরানোর দাবি জানাতে চলেছেন।

Advertisement

রোশনী মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

রাজ্য সরকারি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর সিংহভাগ ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পিএসসি কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে চিঠি লিখে সেই হারানো এক্তিয়ার ফেরানোর দাবি জানাতে চলেছেন। মাসখানেক আগে তাঁরা বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে কমিশন-সূত্রের খবর। ফলে সরকার ও সাংবিধানিক সংস্থাটির মধ্যে ‘সংঘাতের’ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখছে প্রশাসনের একাংশ।

Advertisement

নবান্নের খবর, ডব্লুউবিসিএস থেকে লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক পর্যন্ত প্রশাসনের প্রায় সমস্ত স্তরে কর্মী নিয়োগের যে অধিকার পিএসসি-র হাতে ছিল, সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার অধিকাংশ সরকার কেড়ে নিয়েছে। এখন শুধুমাত্র গ্রুপ এ (ডব্লিউবিসিএস, সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক ইত্যাদি) পদে নিয়োগের দায়িত্বে রয়েছে পিএসসি। প্রশাসনের অন্য দুই স্তরে (গ্রুপ বি, গ্রুপ সি) কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব থেকে পিএসসি’কে অব্যাহতি দিয়ে সেই ভার ন্যস্ত হয়েছে নবগঠিত স্টাফ সিলেকশন কমিশন (এসএসসি)-এর উপরে। কেন?

নবান্নের যুক্তি: অতিরিক্ত নিয়োগ-দায়িত্বের বোঝায় পিএসসি-র কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়ছিল। তাই পিএসসি’র দায়িত্ব হাল্কা করা হয়েছে। সরকারের এক কর্তার কথায়, “একটা খালি পদে লোক নিতে পিএসসি দু’-তিন বছর লাগিয়েছে, এমন নজির বিস্তর। বহু কাজ আটকে থাকছিল।” ওঁদের দাবি, প্রশাসনের কাজে গতি আনতেই এই সিদ্ধান্ত হয়।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে পূর্বতন বাম আমলে ‘এ’ গ্রুপের সমস্ত পদে এবং বি-সি গ্রুপের কিছু পদে নিয়োগ করত পিএসসি। ২০০৮-এ আইন সংশোধন করে তিন গ্রুপের সব পদে নিয়োগের দায়িত্ব পিএসসি-কে দেওয়া হয়। নতুন সরকার ২০১২-য় বাম জমানার পুরনো অবস্থানে ফিরে যায়। গত বছর সর্বশেষ সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুধু ‘এ’ গ্রুপে নিয়োগ হবে পিএসসি-র মাধ্যমে।

পিএসসি রাজ্যের যুক্তি মানতে নারাজ। সরকারি সিদ্ধান্তে কমিশনের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হয়েছে বলে আক্ষেপ কর্মী থেকে অফিসার পিএসসি’র সর্বস্তরে। ওঁদের দাবি, সংবিধানেই বলা আছে, রাজ্য সরকারি চাকরির পদ পূরণ করতে হবে রাজ্যের পিএসসি মারফত। কোনও বিশেষ পরিস্থিতিতে পিএসসি-কে এড়িয়ে সরকার নিজের মতো লোক নিলেও কমিশনকে কৈফিয়ত দিতে হবে। বক্তব্য জানানোর সুযোগ পাবে পিএসসি-ও। কর্মীমহলের একাংশের দাবি, তাঁরা এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি, উত্তরপত্র মূল্যায়নের বরাত দেয় বেসরকারি সংস্থাকে। ফলে এসএসসি-নিয়োগে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ থাকে বলে ওঁদের অভিমত।

কোনও বিশেষ কারণ ছাড়াই গ্রুপ বি এবং সি-তে নিয়োগের এক্তিয়ার কেড়ে নিয়ে সরকার পিএসসি-র মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে কমিশনে। সূত্রের খবর: রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও তিন সদস্য ১৯ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পিএসসি-র দাবি রাজ্যকে লিখিত ভাবে জানানো হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন, “বৈঠকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।”

পিএসসি-নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ সম্পর্কে কর্মী মহলের কী বক্তব্য? সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক বিপুল রায় বলেন, “শূন্য পদ দ্রুত পূরণ করতে পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। পিএসসি-কে ঢেলে সাজতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন