রাজনীতির রং আন্দোলনে, অভিজিতের মন্তব্যে ক্ষোভ

পড়ুয়ারা সাড়া না-দিলেও কখনও দুঃখ প্রকাশ করে, কখনও বা ছাত্রছাত্রীদের ‘সন্তানবৎ’ বলে অভিহিত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার এক রকম চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার ফের একটি মন্তব্য করে পড়ুয়াদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। তৈরি করলেন নতুন বিতর্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

দফতরে ঢোকেননি। মঙ্গলবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই ছিলেন যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

পড়ুয়ারা সাড়া না-দিলেও কখনও দুঃখ প্রকাশ করে, কখনও বা ছাত্রছাত্রীদের ‘সন্তানবৎ’ বলে অভিহিত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার এক রকম চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার ফের একটি মন্তব্য করে পড়ুয়াদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। তৈরি করলেন নতুন বিতর্ক।

Advertisement

ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন মূলত যে-দাবি নিয়ে, তাকে আমল না-দিয়ে উপাচার্য এ দিন জানান, পড়ুয়াদের আন্দোলন নীতিহীন, দিশাহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁর মতে, এই আন্দোলন ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক’।

উপাচার্যেরই পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বড় একটি অংশ আমরণ অনশনে বসেছেন। শিক্ষকদের একাংশও দাঁড়িয়েছেন ওই ছাত্রছাত্রীদের পাশে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ থেকে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু পর্যন্ত অনেক বিশিষ্টজনই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা দূরে থাক, ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের ক্ষোভ উস্কে দিলেন অভিজিৎবাবু।

Advertisement

পাল্টা দিতে দেরি করেননি ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের আন্দোলনকে রাজনীতির রং দেওয়ার জন্য উপাচার্যের সমালোচনা করে উল্টে তাঁকেই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন তাঁরা। আন্দোলনকারী পড়ুয়া হিন্দোল মজুমদার বলেন, “মানুষ তো অরাজনৈতিক হতে পারে না। ছাত্রস্বার্থে রাজনীতি করছি। তবে উপাচার্যের মতো কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা যুক্ত নই।” অন্য এক আন্দোলনকারীর বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীরা কোনও রাজনৈতিক দলের সাহায্য ছাড়াই নিজেদের নীতি তৈরি করছে। এর থেকে বড় নীতি কী হতে পারে? অভিজিৎবাবু ইস্তফা না-দিলে আন্দোলন ও অনশন চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা।

শীতের ছুটির পরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁরা যে জোরদার আন্দোলন শুরু করবেন, ডিসেম্বরে সমাবর্তনের পরেই ছাত্রছাত্রীরা তা জানিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী পাঁচ দফা দাবিতে সোমবার রাতে আমরণ অনশনে বসেছেন এক দল পড়ুয়া। তাঁদের অন্যান্য দাবির মধ্যে আছে গত ২৮ অগস্ট হস্টেলে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ইত্যাদি। তবে খাতায়-কলমে এই সব দাবি রাখা হলেও উপাচার্যের পদত্যাগই যে তাঁদের প্রধান দাবি, তা নিয়ে ধন্দ নেই।

প্রশ্ন উঠেছে, এই অচলাবস্থা কাটবে কী করে?

তিনি ইস্তফা না-দিলে পড়ুয়াদের আন্দোলন চলবে জেনে উপাচার্যের বক্তব্য, এই বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। “কেউ যদি বলেন যে এখনই আমাকে মারা যেতে হবে, নইলে তিনি অনশন করবেন। তা হলে আমি কী করব? নিজেকে মেরে ফেলব?” প্রশ্ন অভিজিৎবাবুর। এই পরিস্থিতিতেও অবশ্য সমাধানের পথ দেখছেন উপাচার্য। তাঁর মন্তব্য, “এখনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। তবে আশা করছি, শীঘ্রই বেরোবে।”

সমাধানসূত্র বার করতে এ দিনই বিভিন্ন শাখার ডিনদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ। পরে ছাত্রছাত্রীদের দাবি মেনে তিনি অনশন-মঞ্চের কাছে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। অনশন প্রত্যাহারের আবেদনও জানান। কিন্তু উপাচার্য ইস্তফা না-দিলে অনশন তোলা হবে না বলে জানান ছাত্রছাত্রীরা। বিজ্ঞান শাখার ডিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় পরে জানান, পড়ুয়াদের দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য আজ, বুধবার জরুরি ভিত্তিতে এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর বৈঠক ডাকা হয়েছে।

ছাত্রছাত্রীদের প্রথম ও প্রধান দাবিই হল উপাচার্য-পদ থেকে অভিজিৎবাবুর ইস্তফা। এই ব্যাপারে ইসি-তে কী আলোচনা হবে?

সুব্রতবাবু বলেন, “এটা তো আমাদের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। তবে ছাত্রছাত্রীদের অন্যান্য দাবি নিয়ে আলোচনা হবে। কী ভাবে এই সমস্যা মেটানো যায়, তার পথ বার করাই এখন প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসনিক ভবন, অরবিন্দ ভবনের (এর ভিতরেই উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং অন্য কর্তাদের অফিস) সামনে অনশন-মঞ্চ বেঁধেছেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন অভিজিৎবাবু। কিন্তু অরবিন্দ ভবনে ঢোকেননি। উল্টো দিকে একটি গাছের তলায় চেয়ারে বসে থাকেন। অক্টোবরে পুজোর ছুটির পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে যে-দিন অভিজিৎবাবু দফতরে যান, সে-দিনও অবশ্য অরবিন্দ ভবনের সামনে পৌঁছে গিয়েও উল্টো দিকে হেঁটে গাছতলায় গিয়ে বসে পড়েছিলেন তিনি। পরে ছাত্রছাত্রীদের তৈরি মানবশৃঙ্খলের ভিতর দিয়েই অরবিন্দ ভবনের ভিতরে ঢোকেন। মঙ্গলবার দিনভর অরবিন্দ ভবনের সামনেই বসে ছিলেন উপাচার্য।

পরে অভিজিৎবাবু বলেন, “এটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক আন্দোলন। এমন আন্দোলনের কোনও নীতি থাকে না। আশা করি, ছাত্রছাত্রীদের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে। এই ভাবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হচ্ছে, সেটা ওরা নিশ্চয়ই বুঝবে।”

কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা তো এই অবস্থার জন্য তাঁকেই দায়ী করছেন! তা হলে?

“আমি সে-কথা মানি না,” সাফ জানিয়ে দেন উপাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন