রাত আড়াইটেয় রাজপথেই বৈঠক, বিমানের উৎসাহে পুলকিত নেতারা

মধ্যরাতে কলকাতা শাসন করতেন চার যুবক! সে অবশ্য শক্তি চট্টোপাধ্যায়দের দামাল জমানার কথা! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে মধ্যরাতের কলকাতায় জমিয়ে বসলেন ১১ জন প্রবীণ! যাঁদের রাজ্যপাট এখন অতীত। ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় যাঁরা আপাতত রাস্তায় রাত জাগছেন। প্রহরারত কিছু পুলিশ-কর্মী ক্লান্ত চোখে সাক্ষী থাকলেন মধ্যরাতে তাঁদেরই অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ডের!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০৩:৪১
Share:

খবরে মগ্ন বিমান বসু। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

মধ্যরাতে কলকাতা শাসন করতেন চার যুবক! সে অবশ্য শক্তি চট্টোপাধ্যায়দের দামাল জমানার কথা! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে মধ্যরাতের কলকাতায় জমিয়ে বসলেন ১১ জন প্রবীণ! যাঁদের রাজ্যপাট এখন অতীত। ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় যাঁরা আপাতত রাস্তায় রাত জাগছেন। প্রহরারত কিছু পুলিশ-কর্মী ক্লান্ত চোখে সাক্ষী থাকলেন মধ্যরাতে তাঁদেরই অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ডের!

Advertisement

কলকাতার রাজপথে রাত ২টো ২০ মিনিটে বামফ্রন্টের বৈঠক বসালেন বিমান বসু! শাসক দলের সন্ত্রাস বন্ধ করা-সহ ১০ দফা দাবিতে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বামফ্রন্টের তিন দিনের ধর্না-অবস্থান চলছে বলে রাজ্যের বাম নেতারা পথেই আছেন। সেখান থেকেই সব শরিক দলের নেতাদের ডেকে নিয়ে বুধবার মাঝরাতে বামফ্রন্টের জরুরি বৈঠক সেরে নিয়েছেন বিমানবাবু। এর আগে লক্ষ্মীপুজো বা কালীপুজোর দিন সকালে বামফ্রন্টের বৈঠক ডেকে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান। কিন্তু মাঝরাতে ফ্রন্ট বৈঠকের কৃতিত্ব বিরল! মুখ্যমন্ত্রী মমতা মহাকরণে তাঁর প্রথম দিনে মন্ত্রিসভার বৈঠক চালিয়েছিলেন রাত সওয়া ১২টা পর্যন্ত। বিমানবাবু সেই রেকর্ডকেও ম্লান করে ছেড়েছেন!

এবং এ বার কিন্তু কেউ ক্ষুণ্ণ, বিরক্ত নন। বরং, ফ্রন্টের সহকর্মীরা পুলকিতই হয়েছেন চেয়ারম্যানের ‘এনার্জি’ দেখে! ছয়ের দশকে বহু উত্তাল আন্দোলনের সৈনিক, সিপিএমের অধুনা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “বিমানদা’র এই কৃতিত্ব কিন্তু ইতিহাসে ওঠার মতো!” কলকাতা জেলার আর এক নেতার মন্তব্য, “পার্টি যখন আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল, তখনও রাত আড়াইটেয় কোনও মিটিং হয়েছে বলে শুনিনি!”

Advertisement

দিনরাত অবস্থানের কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে বিমানবাবু অবশ্য আদ্যন্ত সিরিয়াস! প্রথম রাতে নিজে তো ঘুমোনইনি, অন্য কাউকেও দু’চোখের পাতা এক করার ফুরসত দেননি! তাঁর যুক্তি সাফ। ধর্না-অবস্থানে বসেছি যখন, ঘুমোব কেন? বক্তৃতার পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে বুধবার রাতে প্রতিবাদী বাউল গান এবং সাংস্কৃতিক নানা সংগঠনের কিছু অনুষ্ঠান শুনেই রাত কাটিয়েছেন বিমানবাবুরা। তার মাঝেই বামফ্রন্টের বৈঠক। অবস্থান-মঞ্চের পিছনে চৌকি এবং চেয়ার জুড়ে দিব্যি হয়েছে মধ্যরাতের আলোচনা। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের কোনও ভাবে ব্যাঘাত ঘটায়নি মশক-বাহিনীও! শরিক দলের নেতারা হাজির থাকলেও বৈঠকে অবশ্য অনুপস্থিত ছিল একটি জরুরি জিনিস। এক বাম নেতার কথায়, “এই রকম মিটিং হবে তো ঠিক ছিল না। তাই আলিমুদ্দিন থেকে মিনিট্স লেখার খাতাটা আনা হয়নি!” এমন ঐতিহাসিক বৈঠক তাই খাতায় অ-নথিভুক্তই থেকে গেল!

রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভাকে জুড়ে নতুন কিছু পুর-নিগম গড়তে চাইছে রাজ্য সরকার। বর্তমান কিছু পুর-নিগমের সীমানাও বাড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। ধর্না-অবস্থানে হাজির জেলার নেতাদের কাছ থেকেই বিমানবাবুরা খবর পান, সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা এই নিয়ে সব দলকে বৈঠকে ডেকেছেন। সেই বৈঠকে গিয়ে কী বলবেন জেলার প্রতিনিধিরা? ঠিক করতে মাঝরাতেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত!

বৈঠকে অবশ্য খুব অভিনব কিছু ঠিক হয়নি। বাম নেতৃত্বের যুক্তি, নীতিগত ভাবে পুর-নিগম তৈরিতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু পুর-নিগম হচ্ছে বলে কাজ মেটাতে চুঁচুড়ার লোককে যদি শ্রীরামপুর বা পানিহাটির লোককে নাগেরবাজার ছুটতে হয়, তা হলে এই অসুবিধার জন্যই আপত্তি জানাতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা না-হলে এতে ভালর চেয়ে মন্দই হবে বেশি। কিন্তু বামফ্রন্টের এই সিদ্ধান্ত যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হচ্ছে, তখন তো প্রায় ভোররাত! সিদ্ধান্তের কথা তখন জেলায় পৌঁছবে কী ভাবে? রাত কেটে ভোর হতে বিমানবাবুরই উদ্যোগে সব শরিক দলের নেতারা তাঁদের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রশাসনের বৈঠকে গিয়ে এই যুক্তিই তুলে ধরতে হবে।

আগের রাতে এমন বৈপ্লবিক কাজ করার পরে বৃহস্পতিবার দিনভর অবশ্য অবস্থান-মঞ্চে মাইক ধরেননি বামফ্রন্টের রাজ্য নেতারা। ভাষণ-পর্ব ছেড়ে রাখা হয়েছিল জেলার নেতা ও গণসংগঠনের জন্য। বিকাল বিকাল আবার কাঁধে তোয়ালে ফেলে হাজির বিমানবাবু। আবার রাত জাগবেন নাকি? “হোয়াই নট!” কেউ জিজ্ঞাসা করলেই অদম্য জবাব ফ্রন্ট চেয়ারম্যানের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন