জমি-জট সহ নানা কারণে এমনিতেই প্রকল্প লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এ বার আর্থিক সঙ্কটের জেরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে নিজেদের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রূপায়িত করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি।
সভার ‘এজেন্ডা নোটে’ উল্লেখ করা হয়েছে, আর্থিক সঙ্কট, কোল ব্লকের সমস্যা, রেল করিডরের জন্য জমি না পাওয়ার মতো সমস্যায় রঘুনাথপুরের নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত ডিভিসি। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও রঘুনাথপুরের প্রকল্পে অংশ নিতে পারে। ডিভিসি সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজকে মিশিয়ে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প রূপায়িত করার কথা ভাবছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। সেই প্রকল্প-ভার নেওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট) চাওয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে বুধবারের বৈঠকে।
কিন্তু, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (অর্থাৎ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি) যাওয়ার ব্যাপারে ডিভিসি-র কর্মী-অফিসারদের বড় অংশের আপত্তি রয়েছে। সংস্থার কিছু পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, ২০১২ সালের মার্চ মাসে পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রঘুনাথপুরের প্রকল্প ডিভিসি একাই রপায়ণ করবে। খুব প্রয়োজনে সরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প করা যেতে পারে। তবে, প্রকল্প পরিচলনার দায়িত্ব থাকবে ডিভিসি-র হাতেই। এক পদস্থ ডিভিসি কর্তা বলেন, “এ বার কিন্তু বোর্ড মিটিংয়ের আলোচ্যসূচিতে বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশ নেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। আর সংশয় দেখা দিয়েছে সেটাকে ঘিরেই!”
ডিভিসি সূত্রেই খবর, রঘুনাথপুরে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প রূপায়ণে আপত্তি জানানোয় বদলি করা হয়েছে সংস্থার এক শীর্ষ কর্তাকে। শুধু ডিভিসি-র অন্দরেই নয়, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মিলে রঘুনাথপুর প্রকল্প রূপায়ণে আপত্তি জানিয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’। তাদের দাবি, যৌথ উদ্যোগের নামে আসলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত দেশের একটি বৃহৎ বেসরকারি সংস্থাকে প্রকল্পের ভার তুলে দিতে চাইছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে গোটা ঘটনায় ডিভিসি এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রকের ভূমিকা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত দাবি করেছে ফেডারেশন। সংগঠনের চিফ প্যাট্রন পদমজিৎ সিংহ বলেন, “ডিভিসি একক ভাবে রঘুনাথপুর প্রকল্প যাতে গড়তে পারে, তার জন্য কেন্দ্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, ডিভিসি-র এই আর্থিক সঙ্কটের জন্য ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যও দায়ী। বিদ্যুৎ বিল বাবদ ওই রাজ্য প্রচুর টাকা বকেয়া রেখেছে ডিভিসি-র কাছে।”
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্বের কাছেও এমন খবর রয়েছে। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “এনটিপিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা প্রকল্প ভার নিলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু, বেসরকারি সংস্থার হাতে দায়িত্ব ছাড়া যাবে না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
যৌথ উদ্যোগের ব্যাপারে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু ল্যাংসটিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ওই বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বেসরকারি সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা রঘুনাথপুরে প্রকল্পে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে ডিভিসি-র চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। রঘুনাথপুর প্রকল্প নিয়ে এমনিতেই ডিভিসি প্রবল আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকায় করতে প্রকল্প খরচও বহুগুণ বেড়েছে। এই অবস্থায় অন্য কোনও সংস্থা লগ্নি করতে এগিয়ে আসলে ডিভিসি-রই লাভ হবে বলে অনেকের মত। ডিভিসি-র এক কর্তা জানান, বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা রঘুনাথপুর প্রকল্পে টাকা ঢালতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ডিভিসি সূত্রে এ-ও জানা যাচ্ছে, এ বছরের গোড়ায় বিদ্যুৎ মন্ত্রক এনটিপিসি-কে রঘুনাথপুর প্রকল্প অধিগ্রহণ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলেছিল। মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের যুক্তি ছিল, রঘুনাথপুরে প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে ডিভিসি খুব একটা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারছে না।
ডিভিসি কর্তাদের একাংশের কিন্তু দাবি, আর্থিক সঙ্কট ও অন্যান্য সমস্যার যুক্তি দেখিয়ে এ বার বেসরকারি সংস্থাকে গোটা প্রকল্পভার তুলে দিয়ে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে রঘুনাথপুর প্রকল্পের পরিচালন ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, সে প্রশ্নও তাঁরা তুলেছেন। সব নিয়ে একটা ধোঁয়াশা রয়েছে ডিভিসি-র অন্দরে।