ফব দফতর থেকে ফেরার পথে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র
এলেন। দেখলেন। এবং ফিরে গেলেন! জয় করা আর হল না!
প্রবীণতম বাম নেতার আমন্ত্রণ রক্ষার্থে নববর্ষের বিকালে হেমন্ত বসু ভবনে পৌঁছেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে এই প্রথম কোনও বাম শরিক দলের রাজ্য দফতরে বুদ্ধবাবুর পদার্পণ। কিন্তু শেষটুকু শুভ হল না! ফ ব রাজ্য দফতরের লিফ্ট-বিভ্রাটে উপরে আর ওঠাই হল না বুদ্ধবাবুর। এই শরীরে সিঁড়ি ভাঙা সম্ভব নয় বলে সামান্য একটু অপেক্ষা করে ফিরে গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। পরে অবশ্য ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষকে ফোন করে আক্ষেপ করেছেন বুদ্ধবাবু। স্নেহশীল অভিভাবকের মতোই অশোকবাবু দূত পাঠিয়ে আলিমুদ্দিনে মিষ্টি পৌঁছে দিয়েছেন বুদ্ধবাবুর জন্য। তিনিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ‘অশোকদা’র কাছে।
নববর্ষের অনুষ্ঠানের শুরুটা অবশ্য মসৃণই ছিল। প্রতি বারই ফ ব-র রাজ্য দফতরে ১লা বৈশাখ উদযাপন হয়। এ বার লোকসভা ভোটের মুখে ঘরোয়া অনুষ্ঠান করে বাম ঐক্যের বার্তা দিতে চেয়েই অশোকবাবু আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বামফ্রন্টের সব দলের নেতাকে। কলকাতার বাইরে থাকবেন বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। কিন্তু মঙ্গলবার বিকালের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএমের মদন ঘোষ ও রবীন দেব, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার ও প্রবীর দেব, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী ও মনোজ ভট্টাচার্য, আরসিপিআইয়ের মিহির বাইন-সহ আমন্ত্রিত সব বাম নেতাই। ছিলেন ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসও। ফ্রন্টের চার দলের প্রতীক-বসানো মিষ্টি সহযোগে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন অশোকবাবু। ঈষৎ তাল কেটে গেল শেষ লগ্নেই।
দলের রাজ্য দফতরের দো’তলায় নলিনী গুহ হলে যখন মূল অনুষ্ঠান করছিলেন অশোকবাবুরা, নীচে দফতরের প্রাঙ্গনেও একই সঙ্গে চলছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গাড়ি থেকে নেমে ঈষৎ হকচকিয়েই গিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। আশেপাশে বিস্তর লোক। কিন্তু দেখা নেই ফ ব-র পরিচিত কোনও প্রথম সারির নেতার! দলের দুই যুব নেতা বুদ্ধবাবুকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন লিফ্টের কাছে। সেই লিফ্টে নতুন বাড়ির চার তলায় উঠে আবার সিঁড়ি দিয়ে পুরনো বাড়ির দো’তলায় নেমে অনুষ্ঠান-গৃহে ঢুকতে হত বুদ্ধবাবুকে! এমন সময়ে বাদ সেধে বসে লিফ্টই! কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে বুদ্ধবাবু জানান, তাঁর পক্ষে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা সম্ভব নয়। যে কারণে আলিমুদ্দিনের দো’তলায় রাজ্য দফতরেও ফি রোজ লিফ্টে যেতে হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। নীচে বিড়ম্বনা হচ্ছে খবর পেয়ে অশোকবাবু মাইকে ঘোষণা করেন, তাঁরাই নীচে যাচ্ছেন বুদ্ধবাবুর জন্য। কিন্তু নীচে সঙ্গীতের মূর্ছনায় সে ঘোষণা বুদ্ধবাবুর কান পর্যন্ত পৌঁছয়নি!
ফিরে গিয়ে অবশ্য অশোকবাবুকে ফোন করে বুদ্ধবাবু জানান, শরীরটা সত্যিই জুতে নেই। গিয়েও এ ভাবে দেখা না হওয়ায় সত্যিই তিনি দুঃখিত। অশোকবাবু আবার অভিমান করেন তাঁর ‘বুদ্ধ’কে মিষ্টি খাওয়ানো হল না যে! প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানান, অশোকবাবু মিষ্টি খাওয়াবেন আর তিনি খাবেন না এ কখনও হতে পারে! সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য দফতরের বিশ্বস্ত অনুচরকে দিয়ে মিষ্টি পাঠিয়েও দেন অশোকবাবু। মিষ্টি নিয়েও বুদ্ধবাবু ফের জানান, ফ ব নেতারা যেন কিছু মনে না করেন।
অশোকবাবুর অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেছিলেন, “নতুন বছরে নতুন সংগ্রামের প্রস্তুতি, এ-ই আমাদের বার্তা।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা আর শোনা হল না, এই আক্ষেপ নিয়েই শেষ হল ফ ব-র বর্ষবরণ!