নিজের দলের শিক্ষক সংগঠনের জঙ্গিপনার দিনে তাঁর বক্তব্য জানার জন্য টেলিফোন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফোনই তোলেননি। পরের দিন, বুধবার মন্ত্রী অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, স্মারকলিপি দিতে গিয়ে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘিরে যে-ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, তিনি তা সমর্থন করেন না।
শিক্ষামন্ত্রীর মতে, সংগঠনের প্রতিনিধিদল উপাচার্যের কাছে গিয়ে স্মারকলিপি দিলেই ভাল করত। তৃণমূলের উপর মহল থেকে ওই শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্বকে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলেও দলীয় সূত্রের খবর। গণতান্ত্রিক পরিবেশে সকলেই নিজেদের দাবিদাওয়া জানাতে পারেন বলে সোমবার একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন পার্থবাবু। একই সঙ্গে তিনি জানান, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-ছাত্রদের নিজের দায়িত্বটাও খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু মন্ত্রীর সেই পরামর্শ সত্ত্বেও মঙ্গলবার তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের ঢঙেই উপাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়, হুমকি দেয় ওয়েবকুপা।
এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনার পরে ওয়েবকুপা কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু মঙ্গলবারের আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করে না ওই শিক্ষক সংগঠন। উপরন্তু এ দিন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। তিনি মনে করেন, তাঁর দলের শিক্ষক সংগঠন যা করেছে, অনেক আগেই তা করা উচিত ছিল। গত সপ্তাহে সিন্ডিকেটের বৈঠকের বাইরে শঙ্কুরা যে-তাণ্ডব চালিয়েছিলেন, তাকেও কার্যত সমর্থন জানিয়েছিল ওয়েবকুপা। শাসক দলের ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠন এ ভাবেই পরস্পরের পাশে দাঁড়াচ্ছে। শঙ্কু এ দিন বলেন, “ওয়েবকুপা-র নেত্রী যা করেছেন, ভাল করেছেন। তবে শিক্ষক সংগঠন দেখেন ব্রাত্য বসু। তাই আমি বেশি কিছু বলব না।” ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি কিছুই বলব না।”
মঙ্গলবার ওয়েবকুপা-র শ’দেড়েক সদস্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান। সংগঠনের দাবি মেনে উপাচার্য স্মারকলিপি নেওয়ার জন্য সেনেট হলে গিয়ে বসেন। তখন তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় ওই সংগঠন। নেতৃত্বে ছিলেন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু। আঙুল উঁচিয়ে, জোর গলায় তিনি উপাচার্যের দায়দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানান। সেই সঙ্গে হুমকি দেন, দাবি পূরণ না-হলে তাঁরা ছাড়বেন না, ক্যাম্পাসে ফের বিক্ষোভ দেখাবেন।
ওয়েবকুপা-র সমালোচনা করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন কুটা-কে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “শিক্ষক সংগঠন কুটা যে-ভাবে বিক্ষোভ-অবস্থান করে এসেছে, সেই পথে না-গিয়ে ওয়েবকুপা-র প্রতিনিধিদল উপাচার্যের কাছে গিয়ে স্মারকলিপি দিলেই ভাল করত।”
শিক্ষামন্ত্রীর কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন কুটা-র সম্পাদক দিব্যেন্দু পাল। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠনের ইতিহাসে এ ভাবে বিক্ষোভ দেখানোর নজির নেই। মন্ত্রী একটু খোঁজখবর করলেই সেটা জানতে পারবেন।” তিনি জানান, শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে কুটা গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে অবস্থান করেছিল। তার আগে রেজিস্ট্রারকে লিখিত ভাবে ওই কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছিল। পরে তাঁদের বক্তব্য জানানোর জন্য সিন্ডিকেটের তরফে ডেকে পাঠানো হলে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল ভিতরে গিয়ে কথা বলেন।
আর নিজেদের গত মঙ্গলবারের কর্মসূচিকে বিক্ষোভ বলেই মনে করছে না ওয়েবকুপা। সংগঠনের সভানেত্রী কৃষ্ণকলিদেবী বলেন, “আমরা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। তার জন্য যেটুকু কথাবার্তা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।” তাঁর দাবি, উপাচার্য অসম্মানিত হয়েছেন, এমন কোনও রকম ইঙ্গিত তাঁর তরফে দেওয়া হয়নি। তাই এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা বা ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। তবে শিক্ষামন্ত্রীর বুধবারের মন্তব্য শুনে কৃষ্ণকলিদেবী বলেন, “উনি যখন এ কথা বলেছেন, তখন পরবর্তী কালে অবশ্যই তা স্মরণে রাখব।”