শুতে হচ্ছে মাটিতেই, গদি-বালিশ চান টুম্পাই

এজলাসে ঢোকার মুহূর্তে একটু দাঁড়ালেন তিনি। বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে ডান হাত দিয়ে বুক চেপে বিচারককে বললেন, “হুজুর আমি অসুস্থ। আমার হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, স্পন্ডিলোসিস রয়েছে। বেরিয়াট্রিক সার্জারিও হয়েছে।” শনিবার বেলা দুটো চল্লিশ। আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পুকার প্রধানের এজলাস। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে সারদা রিয়েলটি প্রাইভেট লিমিটেডের মামলায় অভিযুক্ত সৃঞ্জয় বসু ওরফে টুম্পাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

এজলাসে ঢোকার মুহূর্তে একটু দাঁড়ালেন তিনি। বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে ডান হাত দিয়ে বুক চেপে বিচারককে বললেন, “হুজুর আমি অসুস্থ। আমার হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, স্পন্ডিলোসিস রয়েছে। বেরিয়াট্রিক সার্জারিও হয়েছে।”

Advertisement

শনিবার বেলা দুটো চল্লিশ। আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পুকার প্রধানের এজলাস। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে সারদা রিয়েলটি প্রাইভেট লিমিটেডের মামলায় অভিযুক্ত সৃঞ্জয় বসু ওরফে টুম্পাই। পরনে নীলচে সাদা রঙের লিনেনের শার্ট। পাঁশুটে রঙের ট্রাউজার্স। পরিপাটি দাড়ি কামানো।

সৃঞ্জয়ের ওই কথার পরেই তাঁর আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় সওয়াল করতে শুরু করেন তাঁর মক্কেলের শারীরিক অবস্থা নিয়ে। সৃঞ্জয়ের মতো অসুস্থ মানুষকে নিয়মমাফিক জীবনযাপন করতে হয়। খেতে হয় বিশেষ ধরনের খাবারও। জীবনযাপন-খাবারে বদল হলে সমস্যা হতে পারে। আদালত প্রয়োজনে এসএসকেএম থেকে সৃঞ্জয়ের রোগের রিপোর্ট পরীক্ষা করিয়ে বিশেষজ্ঞের মতামতও নিতে পারে।

Advertisement

সৃঞ্জয় দিনভর
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

এর পরে সৃঞ্জয় ফের নিজের হয়ে সওয়াল করেন। বিচারককে বলেন, “সিবিআই গ্রেফতার করার পরে আমার রক্তচাপ বেড়েছে। আমি তদন্তকারীদের অনুরোধ করেছিলাম, যেন রাতভর সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরের সোফায় বসিয়ে রাখা হয় আমাকে। মাটিতে শোওয়া আমার উচিত নয়। কিন্তু সেই অনুরোধ রাখা হয়নি। বৈদ্যুতিন কমপ্লেক্স থানার লকআপে রাখা হয়েছিল আমাকে।” আদালতের কাছে সৃঞ্জয়ের আবেদন, “শোওয়ার জন্য গদি-বালিশ দয়া করে দেবেন।”

সৃঞ্জয়ের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জামিনের আর্জি পেশ করে বলেন, “ওঁর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। তা ছাড়া এই মামলায় ইতিমধ্যে চার্জশিটও পেশ করেছে সিবিআই। এমতাবস্থায় তাঁর জামিন পাওয়া উচিত।” সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সৃঞ্জয়কে ফাঁসানোর অভিযোগও এনেছেন অশোকবাবু। জামিনের আর্জি নাকচ করে দিয়ে বিচারক সৃঞ্জয়কে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশ, প্রতি ২৪ ঘণ্টা অন্তর সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসককে দিয়ে অভিযুক্তের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে। সৃঞ্জয়কে সুস্থ রাখার জন্য ওই চিকিৎসকের সব পরামর্শ মানতে হবে সিবিআইকে। এ দিন আদালত থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার পরেই, সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ বিধাননগর হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে এনে সাংসদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়। রাত সওয়া আটটায় এক জন অর্থোপেডিক-সহ তিন জন ডাক্তারকে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয় সৃঞ্জয়কে।

নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরে এ দিন সৃঞ্জয়কে এক দফা জেরা করেন তদন্তকারীরা। মাঝে তাঁর ভাই সৌমিক বসুও দাদার সঙ্গে দেখা করেন। সিবিআইয়ের একাংশের বক্তব্য, শুধু আর্থিক লেনদেন নয়, সারদা থেকে সাংসদ অন্য কোনও সুবিধা নিয়েছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। রাতে খাওয়ার পরে বৈদ্যুতিন কমপ্লেক্স থানায় নিয়ে যাওয়া হয় সৃঞ্জয়কে। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোনোর সময়ে সৃঞ্জয়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমার কিছু বলার নেই।”

সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্তের অভিযোগ, সারদার সঙ্গে সৃঞ্জয়ের সংস্থার চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী, সৃঞ্জয়ের সংস্থা সুদীপ্ত সেনের মিডিয়া সংস্থায় ‘বিশেষজ্ঞ’ পরামর্শ দেওয়ার নামে প্রায় ১৪ কোটি টাকা আদায় করেছে। বাজার থেকে তোলা টাকা এ ভাবেই ষড়যন্ত্র করে আদায় করেছেন সৃঞ্জয়। সেই টাকা অন্যত্র সরানো হয়েছে বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ।

সৃঞ্জয়ের আইনজীবী আদালতকে বলেন, সাংসদকে সাক্ষী হিসেবে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। পরে অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। সিবিআইয়ের অভিযোগ, সারদা কেলেঙ্কারিতে সৃঞ্জয় অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। কিন্তু অশোকবাবু বলেন, “সৃঞ্জয় প্রথম থেকে তদন্তে সাহায্য করে আসছেন। সব নথিও জমা দিয়েছেন। তিনি সারদার সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করেছিলেন। সেই কাজ আইনবিরুদ্ধ নয়।”

অশোকবাবু জানান, সারদা রিয়েলটি মামলায় সৃঞ্জয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু সুদীপ্ত সেন সৃঞ্জয়ের নামে কোনও অভিযোগ করেননি। ১৭ নভেম্বর এই মামলার চার্জশিট জমা পড়ে। তখনও সৃঞ্জয়ের নামে কোনও অভিযোগ সিবিআই পেল না। অশোকবাবুর প্রশ্ন, “চার দিনের মধ্যেই এমন কী তথ্য এল যে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে?”

সওয়াল চলার সময়ে পরিচিতদের দিকে মাঝেমাঝেই তাকাচ্ছিলেন সৃঞ্জয়। কখনও বুকে হাত রাখছিলেন। আবার কাঠগড়ার হাতলে মাথা রেখে দাঁড়িয়েছিলেন।

সৃঞ্জয়কে এ দিন কোর্ট লক-আপ থেকে আদালতে নিয়ে আসার আগেই এজলাসে এক প্রস্ত নাটক হয়ে যায়। এই মামলায় কী হয় তা শুনতে প্রচুর ভিড় জমে যায় এজলাসে। আইনজীবী, সাংবাদিক ছাড়াও অন্য বেশ কিছু মানুষ ছিলেন এজলাসে। পুলিশ এসে সাংবাদিকদের এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলে। পরে এজলাসে বসে একই কথা জানান বিচারকও। সাংবাদিকেরা না সরায় অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা চেঁচামেচি শুরু করে দেন। এক সময় বিচারক উঠে চলে যান। পরে অবশ্য সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই সওয়াল চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন