শুভেন্দু-কাণ্ডে সমর্থকদের বিক্ষোভ চলছেই

অপসারিত যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে দলের অন্দরে অস্বস্তি ও জটিলতা অব্যাহত। সোমবার সকালে কোলাঘাটে প্রায় এক ঘন্টা জাতীয় সড়ক অবোধ করে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের একাংশ। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ রূপনারায়ণ সেতুর কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন একদল তৃণমূল সমর্থক। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলে অবরোধ। পরে কোলাঘাট থানার পুলিশ এসে অবরোধকারীদের হঠিয়ে দেয়। এর আগে রবিবার কাঁথির একটি ক্লাব শুভেন্দুর অপসারণের জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদ

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

কোলাঘাটের ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থকদের। নিজস্ব চিত্র

অপসারিত যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে দলের অন্দরে অস্বস্তি ও জটিলতা অব্যাহত।

Advertisement

সোমবার সকালে কোলাঘাটে প্রায় এক ঘন্টা জাতীয় সড়ক অবোধ করে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের একাংশ। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ রূপনারায়ণ সেতুর কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন একদল তৃণমূল সমর্থক। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলে অবরোধ। পরে কোলাঘাট থানার পুলিশ এসে অবরোধকারীদের হঠিয়ে দেয়।

এর আগে রবিবার কাঁথির একটি ক্লাব শুভেন্দুর অপসারণের জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে দায়ী করে তাঁর কুশপুতুল দাহ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্লাব সদস্য বলেন, “রাজ্য যুব তৃণমূলের সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে অপসারিত করা, মুকুল-ঘনিষ্ঠ বিধায়ক শিউলি সাহাকে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের পদে শুভেন্দুর সঙ্গে একাসনে বসানো, ও বিধায়ক অখিল গিরিকে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি করার মূল ষড়যন্ত্রী হলেন মুকুল রায়। তাই আমাদের প্রতিবাদ।”

Advertisement

দলের যুব সংগঠনে ক্ষোভের জেরে ওইদিনই বৈঠক ডাকতে বাধ্য হন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতো। বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দেন ব্লক যুব সভাপতিরা। শ্রীকান্ত তাঁদের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “৪০-৪৫ বছর পেরোলে যুব সংগঠন থেকে দলের মূল সংগঠনে চলে যাওয়ার রীতি দীর্ঘ দিনের।”

মেদিনীপুর শহরের শ্যাম সঙ্ঘে ওই বৈঠকে বিভিন্ন ব্লকের যুব সভাপতিরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁদেরও কি সরিয়ে দেওয়া হতে পারে? তাহলে তাঁরা আগেই পদত্যাগ করবেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালগড় ব্লকের যুব সভাপতি বলেন, “যে শুভেন্দু অধিকারীর জন্য জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে, তিনিই না থাকলে আমাদের থাকার দরকার কী?” একই ভাবে শালবনি, দাঁতন, ডেবরা, মেদিনীপুর সদর সহ বেশির ভাগ ব্লকের যুব সভাপতিরাই শুভেন্দুর প্রতি সমর্থন জানান। পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রীকান্ত বলেন, “শুভেন্দুবাবুর অবদান অস্বীকার করতে পারব না। কিন্তু নেত্রী কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তা মেনে নিতে হবে।” কোনও ব্লক সভাপতি এখনই পদত্যাগ যেন না করেন, সেই অনুরোধও করেন তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯ ব্লকের মধ্যে প্রায় ২৫টির ব্লক সভাপতি, ও অন্যান্য ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই শুভেন্দু অনুগামী। মুকুল রায় অনুগামীরা যুব সংগঠনের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে জেলাতেও রদবদল চাইতে পারেন, এই আশঙ্কায় বৈঠক ডাকার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করেন শুভেন্দু অনুগামীরা। এ দিন এই বৈঠকের পর একটি ব্যাঙ্কের বৈঠকে মেদিনীপুরে হাজির ছিলেন শুভেন্দু। তাঁর সঙ্গে অনেক যুব নেতা এবং জেলা কমিটির সদস্যরা দেখা করেন। দলীয় সূত্রে খবর, শুভেন্দুবাবু তাঁদের বলেছেন এখনই পদত্যাগ না করে, জনসংযোগের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে।

মুকুলের কুশপুতুল পোড়ানোর নিন্দা করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের নবনিযুক্ত কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরি বলেন, “দলের নেতার বিরুদ্ধে যারা এমন ন্যক্কারজনক কাজ করেছে তারা কোনও মতেই তৃণমূলের কর্মী সমর্থক হতে পারে না। ওরা দুষ্কৃতী।” অখিলবাবুর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা যুব তৃণমলের সাধারণ সম্পাদক অতনু গিরি ও সহ সভাপতি বিশ্বজিৎ দত্তর পাল্টা চ্যালেঞ্জ, “জেলার যে কোনও জায়গায় একদিকে শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা আর অন্য দিকে রাজ্যের যে কোন তৃণমূল নেতানেত্রীদের নিয়ে জনসভার আয়োজন করা হোক। প্রমাণ হবে কার কত জনপ্রিয়তা।”

অস্বস্তির রেশ ছড়িয়েছে উত্তরবঙ্গেও। সোমবার সদ্য অপসারিত জলপাইগুড়ি জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় নিজেকে শুভেন্দু-অনুগামী দাবি করে বলেন, “কেউ যদি মনে করেন রবার স্ট্যাম্প কেড়ে নিয়ে আমাকে শেষ করবেন, তবে ভুল করবেন।” যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “কারও কোনও অভিযোগ থাকলে দলে জানাতে পারেন। বাইরে বসে কে কখন কী বলছেন তার কোনও মূল্য নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন