শুভবুদ্ধি চেপে তৃণমূলে আছি, আবার বোমা ছুড়লেন সাধন

কালীঘাটে নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী বলে দিয়েছিলেন, দল বা সরকারের বিষয়ে যেমন খুশি মন্তব্য করা চলবে না। মেনে চলতে হবে দলীয় লাইন। সেই হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই ফের প্রকাশ্যে বেফাঁস মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেললেন বর্ষীয়ান মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। এ বার তাঁর কটাক্ষ, নিজের শুভবুদ্ধি চেপে রেখেই দলের লাইন মেনে চলতে হয়!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

কালীঘাটে নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী বলে দিয়েছিলেন, দল বা সরকারের বিষয়ে যেমন খুশি মন্তব্য করা চলবে না। মেনে চলতে হবে দলীয় লাইন। সেই হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই ফের প্রকাশ্যে বেফাঁস মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেললেন বর্ষীয়ান মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। এ বার তাঁর কটাক্ষ, নিজের শুভবুদ্ধি চেপে রেখেই দলের লাইন মেনে চলতে হয়!

Advertisement

বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ শনিবারই পশ্চিমবঙ্গকে ‘ব্যর্থ রাজ্য’ তকমা দেন। সেই মন্তব্যের উপরে মতামত দিতে গিয়ে সাধনবাবু রবিবার নিজের শুভবুদ্ধির সঙ্গে তৃণমূলের দলীয় লাইনের বিরোধকে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ বলতে সাধারণ ভাবে মনে আসে পাকিস্তানের উদাহরণ। যেখানে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র বিপন্ন। বিচার বিভাগকে যেখানে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হয়। তবু বিশৃঙ্খলা চলতেই থাকে অবিরাম। বিকাশবাবু মূলত এ রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের কথা বললেই তৃণমূল জমানায় পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের যে অবনতি হয়েছে, তা নিয়ে বিশেষ সংশয় নেই কোনও মহলেই। একের পর এক ঘটনায় রাজ্য সরকার যত কোণঠাসা হচ্ছে এবং চাপে পড়ে তারা যত হঠকারী পদক্ষেপ করছে, শাসক দলের অন্দরেও তত ভিন্ন সুর মাথা চাড়া দিচ্ছে। বিবেকের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন একের পর এক নেতা-মন্ত্রী। সাধনবাবু সেই প্রবণতারই জ্বলন্ত উদাহরণ!

তৃণমূলের একাংশ বলছে, শুধু বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে মনের কথা বলে ফেলা এক জিনিস। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সতর্কবার্তার পরেও দলীয় লাইনকে কটাক্ষ করা আর এক জিনিস। সাধনবাবু এ দিন যা করছেন, তাতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেই অমান্য করার ইঙ্গিত আছে। সম্ভবত তাই আরও ক্রুদ্ধ হয়েছেন নেত্রী। দলীয় স্তরে সাধনবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনাও শুরু হয়েছে। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সাধনবাবু কী বলেছেন, নজরে এসেছে। ওঁর কাছে জানতে চাইব। যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে থাকেন, তা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” যাদবপুর নিয়ে দল ও সরকারের অবস্থানের বাইরে প্রকাশ্যে মন্তব্যের জন্য গত সপ্তাহেই সাধনবাবুকে ডেকে সতর্ক করে দেন পার্থবাবু ও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।

Advertisement

শহরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরে এ দিন সাধনবাবুকে প্রশ্ন করা হয় বিকাশবাবুর মন্তব্য নিয়ে। তিনি প্রথমে বলেন, বিকাশবাবু ১৯৮৪ থেকে রাজ্যে আছেন। অনেক কিছু দেখে তাঁর অভিজ্ঞতার নিরিখে কিছু মন্তব্য করেছেন। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সাড়ে তিন বছরে তাঁদের সরকার বিস্তর পরিশ্রম করছে বলে জানান সাধনবাবু। কিন্তু রাজ্যের যা অবস্থা, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কি তা মেনে নেবেন? সাধনবাবু বলেন, “যখন কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল (পশ্চিম মেদিনীপুরের কঙ্কাল-কাণ্ড এবং বাম জমানার মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত), তখন শুভবুদ্ধি কোথায় ছিল?”

এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু তৃণমূলের মধ্যে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে সাধনবাবুর ব্যক্তিগত মত জানতে চাওয়া হতেই কৌশলী জবাব দিয়েছেন তিনি বলেছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি কী বলব, সেটা পরের কথা। কিন্তু আমি যখন দলে, তখন শুভবুদ্ধি একটু চেপে আছি! দলের লাইন মেনে চলি। শুভবুদ্ধি চেপেই দলের নীতি মানতে হয়!” এই মন্তব্যেই প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “শনিবার কালীঘাটে দলনেত্রীর মনোভাব দেখে উনি হয়তো বুঝে গিয়েছেন, ওঁর আর এখানে বিশেষ ভবিষ্যৎ নেই। তাই আরও বেপরোয়া হয়ে গিয়েছেন!”

সাধনবাবুর মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছে বিরোধীরা। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের অরুণাভ ঘোষ, বিজেপি-র রাহুল সিংহেরা বোঝাতে চেয়েছেন, শুভবুদ্ধিসম্পন্নদের জায়গা তৃণমূল নয়! আর সাধনবাবু পরে দাবি করেন, তাঁর আগে-পরের কথা বাদ দিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটি লাইন তুলে ধরে হইচই করা হচ্ছে! মন্ত্রীর ওই মন্তব্য সম্প্রচারিত হয় এবিপি আনন্দ চ্যানেলেও। সেই সূত্র ধরে দলীয় নেতৃত্বকে সাধনবাবুর পাল্টা খোঁচা, “দলনেত্রী তো এবিপি আনন্দ দেখতে বারণ করেছেন! তা হলে তাদের কথা ধরে নেওয়া হচ্ছে কেন?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন