শ্রীঘরে বসে ভিডিও-সম্মেলনে স্বজন সাক্ষাত্

• কয়েক মাস আগে শিশু-নিগ্রহের অভিযোগে দমদম জেলে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে এসেছেন মার্কিন নাগরিক লেসলি পাওয়েল। কিন্তু ওই বন্দির সঙ্গে মার্কিন মুলুক থেকে তাঁর পরিবারের লোকজনের দেখা করার কোনও উপায় নেই। বিস্তর টাকা খরচ করে তাঁদের পক্ষে দমদম সেন্ট্রাল জেলে এসে লেসলির সঙ্গে দেখা করা কার্যত অসম্ভব।

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

• কয়েক মাস আগে শিশু-নিগ্রহের অভিযোগে দমদম জেলে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে এসেছেন মার্কিন নাগরিক লেসলি পাওয়েল। কিন্তু ওই বন্দির সঙ্গে মার্কিন মুলুক থেকে তাঁর পরিবারের লোকজনের দেখা করার কোনও উপায় নেই। বিস্তর টাকা খরচ করে তাঁদের পক্ষে দমদম সেন্ট্রাল জেলে এসে লেসলির সঙ্গে দেখা করা কার্যত অসম্ভব।

Advertisement

• ঝাড়খণ্ডের যুবক প্রদীপ কুমারের সমস্যা আবার অন্য রকম। সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত প্রদীপের বাবা-মা মাঝেমধ্যে এসে জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। কিন্তু এলেই যে দেখা হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সকালে এসে আবেদন করতে হবে। জেলের অফিসারেরা তাঁদের আবেদন ও পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখবেন। সন্তুষ্ট হলে তবেই মিলবে বন্দির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি। না-মিললে এত কাঠখড় পুড়িয়ে দমদম জেলে আসাই বিফলে চলে যাবে।

বন্দিদের এমন সমস্যার সমাধানে এ বার অনলাইনে ‘ইন্টারভিউ’ ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের কারা দফতর। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমে দমদম জেলে শুরু হয়েছে অনলাইনে আগাম ইন্টারভিউয়ের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া। সফল হলে রাজ্যের সব জেলে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। তার পরের ধাপে চালু হবে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্স বা ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে বন্দির সঙ্গে তাঁর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। এডিজি (কারা) অরুণকুমার গুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য ভিডিও কনফারেন্সে বন্দিদের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়দের সাক্ষাতের ব্যবস্থা চালু করা। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ এই ‘অনলাইন ইন্টারভিউ বুকিং’। দমদম জেলে গত মাসেই আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি।’’

Advertisement

ভিডিও-সম্মেলন চালু হলেও বর্তমান ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে না। কারা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পুরনো ব্যবস্থা রাখতেই হবে। যাঁদের আসার সুযোগ আছে কিংবা যাঁরা প্রযুক্তিনির্ভর ভিডিও ব্যবস্থায় সড়গড় নন, তাঁরা জেলে এসে বন্দির দেখা করতেই পারেন। এমনকী তাঁদের জন্য জেলে এসে ইন্টারভিউয়ের আবেদন করার সুযোগও থাকছে।’’

শুধু বন্দি বা তাঁর স্বজনদের সুবিধে নয়, অনলাইন ইন্টারভিউ বুকিং এবং ভিডিও-সম্মেলনে দেখা করার ব্যবস্থা চালু হলে নিরাপত্তার দিকটি অনেক বেশি নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করছেন কারাকর্তারা। এক কারাকর্তার কথায়, ‘‘বন্দিদের সঙ্গে আত্মীয়বন্ধুদের সাক্ষাতের সময় নানা বেআইনি জিনিসপত্র পাচারের আশঙ্কা থাকে। নজরদারিতে ঘাটতির সুযোগ নিয়ে পাচার

হয়ে যায় নানা তথ্যও। ভিডিও কনফারেন্সিং চালু হলে ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা অনেকটা এড়ানো যাবে।’’

জেলে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা অবশ্য নতুন নয়। কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে জঙ্গি হামলা এবং খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলার মূল অভিযুক্ত আফতাব আনসারিকে নিরাপত্তার কারণে কয়েক বছর থেকেই জেলের বাইরে বার না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা দফতর। আফতাবের মামলার শুনানি হয় জেলেই— ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে। সম্প্রতি নিরাপত্তার কারণে আরও অনেক বন্দির ক্ষেত্রে ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে শুনানির প্রক্রিয়া চালু করেছে কারা দফতর। এ বার একই কায়দায় সব বন্দির সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা শুরু হতে চলেছে।

বন্দিদের পরিবারের পক্ষেও এই প্রক্রিয়া খুবই সহায়ক হবে বলে মনে করছেন কারাকর্তারা। দমদম জেলে গত এক মাস ধরে ইন্টারভিউয়ের তারিখ বুকিংয়ের যে-ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তাতে কারা দফতরের নির্দিষ্ট করে দেওয়া ওয়েবসাইটে আবেদনপত্র পূরণ করতে হচ্ছে। আবেদনপত্র পূরণের পরে দেওয়া হচ্ছে একটি ‘ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড’। সেই পাসওয়ার্ড দিয়ে ‘লগ-ইন’ করলেই জানা যাচ্ছে, বন্দির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মিলেছে কি না, মিললে কবে, কোন সময়ে সাক্ষাৎ করা যাবে। সাধারণ ভাবে সাক্ষাতের দিন পনেরো আগে এই আবেদন করা যাচ্ছে। অনুমতি মিললে জেলের দেওয়া সময়ের মাত্র আধ ঘণ্টা আগে এলেই ছবি তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে। সেখানে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বন্দিকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে বাড়ির লোকেদের।

কারা দফতরের এক কর্তা জানান, আগে এই প্রক্রিয়াটাই ছিল খুব লম্বা। আর অনুমতি বাতিল হলে পুরো দিনটাই নষ্ট। এ ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা নেই। ‘‘নতুন ব্যবস্থায় বন্দির বাড়ির লোকেদের হয়রানি কমছে। তেমনই সাক্ষাৎকারীদের যাবতীয় তথ্য জমা হয়ে থাকছে জেল-কর্তৃপক্ষের কাছে। এমনকী ছবিও। কারা কবে দেখা করতে এসেছিল, পরে তার হিসেবও মিলছে,’’ বললেন ওই কারাকর্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement