২০০৩-এ উদ্বোধন হওয়া শিল্পতালুকের জমি এখনও ফাঁকাই।—নিজস্ব চিত্র
শিল্পতালুক রয়েছে। কিন্তু শিল্পের দেখা নেই। উদ্যোগপতিদের দাবি, রাজ্যে পরপর শিল্পতালুক তৈরি হলেও অধিকাংশেরই পরিকাঠামো বেহাল। তা মানতে নারাজ রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। পাল্টা উদ্যোগপতিদের দুষে তাঁর মন্তব্য, “যাঁরা এ সব অভিযোগ করছেন, তাঁরা টাকা মারার জন্য করছেন।” প্রকৃত উদ্যোগীদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বসে রয়েছে, ভর্তুকি পাওয়া শেষ হয়ে গেল, শিল্পেরও বারোটা বেজে গেল, এমনটা যেন না হয়।”
মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহর-ঘেঁষা খাসজঙ্গলে ২৩ একর জমিতে নতুন শিল্পতালুকের শিলান্যাস করেন মন্ত্রী। যদিও প্রস্তাবিত শিল্পতালুক লাগোয়া অন্য একটি শিল্পতালুকে জমি ফাঁকাই রয়েছে। ২০০৩-এ উদ্বোধন হওয়া ওই শিল্পতালুকে ৪৪ জন উদ্যোগপতিকে জমি দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে জমি ফেলে রেখেছেন প্রায় এক ডজন উদ্যোগপতি। পরিকাঠামোও বেহাল। এখনও ‘নো লোডশেডিং জোন’-এর আওতায় না আসায় প্রায়ই বিদ্যুত্ বিভ্রাটে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্পাদন। নেই পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থাও। ফলে কারখানায় উত্পাদন বন্ধ। রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। নেই নিরাপত্তাও।
প্রায় দু’বছর আগে গোয়ালতোড়েও শিল্পতালুক গড়তে ৯৫২ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সেখানে জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াই এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রেলপথ থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে শিল্প গড়ে তুলতে আগ্রহও দেখাননি কোনও উদ্যোগপতি। একই ভাবে ২০০৬-এ খড়্গপুড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কেও ১২৪৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সেখানে এখনও ফাঁকা পড়ে প্রায় ৯০০ একর জমি। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “সবই শাসক দলের চমক। খড়্গপুর শিল্পতালুকে শিল্পের পরিবেশ নেই। তাহলে কেন সেখানে শিল্প আসবে?”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা শিল্প সম্মেলনে রাজ্যে শিল্প গড়ে তুলতে আহ্বান জানান শিল্পপতিদের। মঙ্গলবার মেদিনীপুরের খাসজঙ্গলে ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী বাগচীও দাবি করেন, রাজ্যে ৫৩০টি শিল্পতালুকের পরিকাঠামো তৈরি। সেখানে এখুনি শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু করা যাবে। যদিও বাস্তবে পরিকাঠামো না গড়েই নতুন তালুক গড়ে উঠছে বলে দাবি বিরোধী নেতা ও উদ্যোগপতিদের একাংশের।
মেদিনীপুরের খাসজঙ্গলে নতুন শিল্পতালুকের শিলান্যাসের পর জমি ঘুরে দেখছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
বাম আমলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য মালদহেও ফুড পার্ক গড়ে তোলা হয়। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাবে একটিই কারখানা চালু। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে চর্মশিল্প নগরী গড়তেও জমি অধিগ্রহণ করা হয়। শিল্প পরিকাঠামোর অভাবে সেখানেও জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। একই কারণে জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম শিল্পতালুকেও নতুন শিল্পের দেখা নেই। শিলিগুড়িতে চা শিল্পের প্রসার ও বিপণনের জন্য ‘টি পার্ক’-এর শিলান্যাস হলেও জমি জটে আটকে কাজ।
দুর্গাপুরের সগড়ভাঙা শিল্পতালুক বহু দিন ধরে বেহাল। রাস্তা ভেঙেচুরে পড়ে। অনেক জায়গায় আলো নেই। শিল্পোদ্যোগীদের অভিযোগ, অনেক জমি ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ কারখানা তৈরি বা সম্প্রসারণের জন্য জমি মেলে না। একই অবস্থা আসানসোলের কন্যাপুর শিল্পতালুকটিরও। বছর কুড়ি আগে ৮৭টি সংস্থাকে নিয়ে শুরু হয়েছিল এই তালুক। এখন রয়েছে গোটা কুড়ি। যারা রয়েছে, তাদেরও অভিযোগের শেষ নেই। পরিষ্কার রাস্তা নেই, আলো নেই, জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই, নিকাশি নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নানা সংস্থা কর্তৃপক্ষই। তার পরেও নতুন শিল্পতালুকের শিলান্যাস কেন, প্রশ্ন বিরোধীদের।