যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে এ বার ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি)-তে। সেখানকার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটেরই দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী।
তবে যাদবপুরের তদন্তে গড়িমসির যে অভিযোগ উঠেছিল, এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। আইআইইএসটি-র ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি (আইসিসি)-কে দিয়ে দ্রুত অভিযোগের তদন্ত করানো হয়েছে, প্রাথমিক রিপোর্ট জমাও পড়ে গিয়েছে। এমনকী, ওই ছাত্রীর সেকশন বদলে দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁকে অভিযুক্ত শিক্ষকের ক্লাস করতে না হয়। অভিযোগকারীর কাউন্সেলিং-ও করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে কী আছে, তা দেখে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইআইইএসটি কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট না পেয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলছেন না তাঁরা। তত দিন ওই শিক্ষক ছুটিতেই থাকবেন বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
আইআইইএসটি সূত্রের খবর, পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে অভিযোগকারিণী ওই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর ঘরে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে একাই ছিলেন ওই শিক্ষক। তখনই তিনি শ্লীলতাহানি করেন বলে দাবি ওই ছাত্রীর। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসি ছাড়াও ইউজিসি-র র্যাগিং-বিরোধী কমিটির কাছে অভিযোগ জানান ছাত্রীটি। র্যাগিং-বিরোধী সেল থেকে বিষয়টি জানানো হয় হাওড়া সিটি পুলিশকে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “আইআইইএসটি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানালেই আমরা তদন্ত শুরু করব। তবে এখনও অভিযোগ পাইনি।” প্রতিষ্ঠানের এক কর্তা জানান, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছে পুলিশ। আজ, বুধবার এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পুলিশকে পাঠানো হবে বলেও ওই কর্তা জানিয়েছেন।
আইআইইএসটি সূত্রের খবর, গত ১৫ জানুয়ারি আইসিসি-র কাছে অভিযোগ জানান ছাত্রীটি। হাওড়া পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয় গত ২১ জানুয়ারি। আইআইইএসটি-র রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, “একটা অভিযোগ উঠেছে। তড়িঘড়ি আইসিসি-কে দিয়ে তার তদন্ত করানো হয়েছে। সেই রিপোর্টও জমা পড়ে গিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত বছর অগস্টে যাদবপুরের হস্টেলে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল ছাত্রের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্তে যথেষ্ট তৎপর হননি বলে অভিযোগ জানান ছাত্রছাত্রীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসি-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সেই কমিটির গঠন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারীরা। কমিটি পুনর্গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে দীর্ঘদিন অবস্থান আন্দোলন চালান তাঁরা। একই দাবিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর উপাচার্য-সহ এগজিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর সদস্যদের ঘেরাও করেন একদল ছাত্রছাত্রী। সেই রাতেই ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকেছিলেন উপাচার্য। পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে লাগাতার চার মাসের আন্দোলন শেষে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পদ ছাড়তে কার্যত বাধ্য হন অভিজিৎবাবু।