কুয়াশায় ঢাকা শিলিগুড়ির সকাল। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
ভরা ইনিংসে তার ব্যাটে রান ছিল না। এখন স্লগ ওভারে চালিয়ে খেলার ইঙ্গিত দিচ্ছে শীত!
শনিবার সকাল থেকেই দাপটে বইতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া। পারদও নামছে তরতরিয়ে। এ দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি কম। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ, রবিবার তাপমাত্রা আরও কিছুটা নামতে পারে।
প্রবাদ মানলে, ভরা মাঘে বাঘা শীত-ই দক্ষিণবঙ্গের দস্তুর। যদিও সব সময় তা হয় না। আবহবিদদের অনেকেও বলছেন, এ বারে শীতের যা হালচাল, তাতে ঠান্ডা কিছুটা মালুম হলেও একেবারে কাঁপুনি ধরানোর মতো হয়তো হবে না।
এ বার আগাগোড়াই শীত কিছুটা এলোমেলো। নভেম্বরে যখন শীত আসার কথা ছিল না, তখন কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে কাঁপুনি ধরাচ্ছিল উত্তুরে হাওয়া। কিন্তু খাতায়-কলমে যখন তার আসার কথা, তখন গুটিয়ে গিয়েছিল সে।
কেন?
আবহবিদেরা বলছেন, এ বার শীতে বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের দাপটে দক্ষিণমণ্ডলের বাতাসে জলীয় বাষ্প ঢুকেছিল। তার জেরে বাধা পেয়েছিল উত্তুরে হাওয়া। তাই ভরা জানুয়ারি মাসেও তেমন ভাবে মাথা তুলতে পারেনি শীত। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে শীতের প্রধান সহায়ক হল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে কাশ্মীরে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়া)। সেই ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে তুষারপাত ঘটায়। সেই বরফের উপর দিয়ে উত্তুরে হাওয়া ঠান্ডা বয়ে আনে এ রাজ্যে। মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, এ বার বেশির ভাগ সময় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তেমন জোরালো ছিল না। তাই উত্তুরে হাওয়ায় তেমন জোর ছিল না। ফলে মাঝেমধ্যে বাধা সরলেও সে ভাবে জোরালো ঠান্ডা দক্ষিণবঙ্গে বয়ে আনতে পারেনি উত্তুরে হাওয়া।
তা হলে শেষ প্রহরে শীত হঠাৎ জোর পাচ্ছে কোথা থেকে? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, দিন কয়েক আগে কাশ্মীরে একটি জোরালো পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হাজির হয়েছিল। তার জেরে সেখানে তুষারপাত হয়েছে। সেই ঝঞ্ঝা সরে যেতেই জোরালো উত্তুরে হাওয়া ঠান্ডা বয়ে আনছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “জোরালো হাওয়ার জেরে তাপমাত্রা আরও কমবে।” কিন্তু ক’দিন?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, স্লগ ওভারে শীতের ইনিংস তেমন লম্বা হবে না। টানা ক’দিন ঠান্ডা থাকলেও আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকেই ফের বাড়বে তাপমাত্রা। সেই তাপমাত্রা বৃদ্ধিই শীতের বিদায়ঘণ্টা বাজাবে কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত নয়। কেন?
মৌসম ভবনের একটি সূত্র বলছে, আফগানিস্তানে আরও একটি জোরালো পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হাজির হয়েছে। সেটি কাশ্মীরে ঢুকে তুষারপাত ঘটালে এ রাজ্যে শীতের ইনিংস দীর্ঘ হতে পারে।
বাস্তবে তা হয় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় বঙ্গের শীতপ্রেমীরা।