শাস্তি রদে তাণ্ডব জয়পুরিয়ায়, নয়া ফরমান শঙ্কুর

দলীয় নেতৃত্ব বা শিক্ষামন্ত্রী রাশ টানার যতই চেষ্টা করুন, শঙ্কু আছেন শঙ্কুতেই! টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার নতুন ফরমান, তাঁদের কোনও নেতা-কর্মীকে শাস্তি দেওয়ার আগে সংগঠনকে জানাতে হবে। বৃহস্পতিবার রাতে কলেজগুলির উদ্দেশে এই বার্তা দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, অযথা শাস্তি দেওয়া ভাল নয়। কাউকে কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, সেটা নেতাদের জানা উচিত। “তা হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আমরা আটকাতে পারব,” বলছেন শঙ্কু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৫১
Share:

ছাত্রবন্দি অধ্যক্ষ। বৃহস্পতিবার জয়পুরিয়া কলেজে। —নিজস্ব চিত্র

দলীয় নেতৃত্ব বা শিক্ষামন্ত্রী রাশ টানার যতই চেষ্টা করুন, শঙ্কু আছেন শঙ্কুতেই!

Advertisement

টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার নতুন ফরমান, তাঁদের কোনও নেতা-কর্মীকে শাস্তি দেওয়ার আগে সংগঠনকে জানাতে হবে। বৃহস্পতিবার রাতে কলেজগুলির উদ্দেশে এই বার্তা দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, অযথা শাস্তি দেওয়া ভাল নয়। কাউকে কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, সেটা নেতাদের জানা উচিত। “তা হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আমরা আটকাতে পারব,” বলছেন শঙ্কু।

এর পিছনে রয়েছে জয়পুরিয়া কলেজে এ দিনের তাণ্ডব। সেখানকার অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায় জানান, মঙ্গলবার কলেজের দরজা খোলা নিয়ে বচসার জেরে এক শিক্ষাকর্মীকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাহুল শাহ নামে এক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে। অন্য এক কর্মী অভিযোগপত্র দেওয়ার পরে সিসিটিভি ফুটেজে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয় শিক্ষক পরিষদকে সঙ্গে নিয়ে। পরে সর্বসম্মত ভাবে অভিযুক্ত ছাত্রনেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘেরাও করা হয় অধ্যক্ষকে।

Advertisement

কলেজ সূূত্রের খবর, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ জনা পঞ্চাশ ছাত্র অধ্যক্ষের ঘরে যান। কিছু প্রাক্তন ছাত্রও প্রথম সারিতে থেকে বিক্ষোভে মদত দেন বলে অভিযোগ। ছাত্রনেতারা প্রথমে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানান। অধ্যক্ষ তা মেনে নেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা দাবি তোলেন, অভিযোগকারী কর্মীকে পদত্যাগ করতে হবে। অভিযোগপত্রটি ফিরিয়ে দিতে হবে তাঁদের হাতে। অধ্যক্ষকে ক্ষমা চাইতে হবে লিখিত ভাবে। অধ্যক্ষ তা মানেননি। শুরু হয় তাণ্ডব। কিছু ছাত্র ব্লেড দিয়ে নিজেদের হাত কাটতে থাকেন। ভাঙা হয় অধ্যক্ষের টেবিলের কাচ। ফেলে দেওয়া হয় কাগজপত্র। খুলে দেওয়া হয় ফোনের লাইনও। অধ্যক্ষ সিপিএমের লোক বলে আওয়াজ তুলে লাল পতাকায় তাঁর শরীর ঢেকে মোবাইলে ছবি তোলা হয় বলেও অভিযোগ। সাড়ে ১০টা নাগাদ রাহুলকে বহিষ্কারের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেন অধ্যক্ষ। ছাত্রনেতাদের প্যাডে লিখে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। পৌনে ১১টা নাগাদ ঘেরাও ওঠে। তার পরেই অধ্যক্ষদের উদ্দেশে ফরমান জারি করেন শঙ্কু।

পাল্টা বার্তা দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও অশান্তি মেনে নেওয়া হবে না। ঠিক কী ঘটেছে, খোঁজ নেব।” অনেকেই মনে করছেন, এ দিনের ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতির দ্বন্দ্বই ফের প্রকাশ্যে এল। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেষ্ট হয়েছেন পার্থবাবু। ৮ অগস্ট অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে অশান্তি রুখতে তাঁদের কড়া হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, এতে ক্ষুব্ধ হন শঙ্কু। সংগঠনের সভায় তিনি বলেন, তাঁদের ছাত্রনেতারা ক্যাম্পাসে না-থাকলে বিরোধীরা কলেজ দখল করে নেবে। দলেরই একাংশ বলছেন, প্রকাশ্যে এই কথা বলে কার্যত শিক্ষামন্ত্রীর বার্তাকেই নস্যাৎ করেছিলেন শঙ্কু।

শিক্ষাঙ্গনে টিএমসিপি-র বাড়াবাড়ি এবং তাতে শঙ্কুর মদত নিয়ে দলেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তৃণমূল ভবনে শঙ্কুর সঙ্গে বৈঠকেও বসেন পার্থবাবু-মুকুলবাবুরা। এ দিন অবশ্য সংগঠনে বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন শঙ্কু। তিনি জানান, বিশৃঙ্খলার অভিযোগে জয়পুরিয়ায় টিএমসিপি-র ইউনিট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ঘটনা নিয়ে উত্তর কলকাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রনেতাদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন