সান্ত্বনাই সার, কপিল-কাঁটায় বিড়ম্বনায় অধীর

শুনানি হয়নি আজ। তবে সারদা তদন্ত নিয়ে তৃণমূল সরকারের মামলা লড়তে এ দিন ঠিক সময়েই সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়েছিলেন কপিল সিব্বল। অধীর চৌধুরীদের বিড়ম্বনা বাড়লেও এর মধ্যে দশ জনপথের চেনা ছকই দেখতে পাচ্ছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। লেগে গেলে লাভ, সংসদে ফের কংগ্রেস-তৃণমূল কক্ষ সমন্বয়ের পথ সুগম হবে। না লাগে তো তৈরিই আছে যুক্তি। বলা যাবে, দলের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক? এটা কপিলের পেশাগত ব্যাপার। তাতে যেমন দল তেমনই রবে, জোটে জড়াবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:২৩
Share:

শুনানি হয়নি আজ। তবে সারদা তদন্ত নিয়ে তৃণমূল সরকারের মামলা লড়তে এ দিন ঠিক সময়েই সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়েছিলেন কপিল সিব্বল। অধীর চৌধুরীদের বিড়ম্বনা বাড়লেও এর মধ্যে দশ জনপথের চেনা ছকই দেখতে পাচ্ছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। লেগে গেলে লাভ, সংসদে ফের কংগ্রেস-তৃণমূল কক্ষ সমন্বয়ের পথ সুগম হবে। না লাগে তো তৈরিই আছে যুক্তি। বলা যাবে, দলের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক? এটা কপিলের পেশাগত ব্যাপার। তাতে যেমন দল তেমনই রবে, জোটে জড়াবে না।

Advertisement

রাজ্য নেতৃত্বের বিদ্রোহের মুখে পড়ে মাত্র সাত দিন আগে দলীয় নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিলকে বার্তা দিয়েছিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সেই বার্তা যে স্রেফ অধীর চৌধুরীদের প্রতি সান্ত্বনা, সুপ্রিম কোর্টে কপিলের হাজিরাই তা প্রমাণ করে দিয়েছে আজ। গত ক’দিন সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চললেও কপিল এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, মামলাটি থেকে তিনি সরছেন না।

তবে কি সনিয়া গাঁধীর নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করছেন কপিল?

Advertisement

কপিল প্রকাশ্যে কিছু না বলছেন না এ ব্যাপারে। তবে দলীয় সূত্রের খবর, ঘরোয়া আলোচনায় তিনি কবুল করছেন, হাইকম্যান্ডের সবুজ সঙ্কেত নিয়েই তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের হয়ে মামলাটি লড়তে রাজি হয়েছেন। গত কাল সকালে তাঁর বাড়িতে গিয়ে রাজ্যের আইন দফতরের আমলারা এই মামলা নিয়ে কথা বলতে গেলে কপিল তাঁদেরও এই ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে খবর। তবে রাজ্য সরকারের আমলাদের সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্রও তাঁর বাড়িতে গিয়ে হাজির হওয়ায় কপিল পড়েছেন অস্বস্তিতে। সেই অস্বস্তি ঢাকতেই কপিল আজ আদালত থেকে বেরিয়ে তাঁর সতীর্থ আইনজীবিদের কাছে উল্লেখ করেন, তৃণমূলের হয়ে নয়, তিনি মামলা লড়ছেন রাজ্য সরকারের হয়ে। গত কাল সকালে তাঁর বাড়িতে মহুয়া মৈত্রের যাওয়া নিয়ে কপিল ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

তৃণমূলের থেকে দূরে থাকার কথা জাহির করেও মামলায় তাদের সরকারের পাশে থাকাটা দশ জনপথের রাজনীতির চেনা ঘরানা বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের মতে, হাইকম্যান্ডের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া কপিল তৃণমূল সরকারের মামলা হাতে নিয়েছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফের সমঝোতার জমি তৈরির চেষ্টা করছেন সনিয়া। বারবার দেখা গেছে এই ধরনের দৌত্যে ফল ভাল হলে কৃতিত্ব নেয় গাঁধী পরিবার। আর বেগড়বাই কিছু হলেই গা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এ ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটছে। জাতীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার লক্ষ্যে তাদের সরকারের আইনি দৌড়ে ব্যাটন ধরেছেন কপিল। আবার রাজ্যে কংগ্রেস নেতারা বেকায়দায় পড়ায় তাঁদের ভাবাবেগের কথা মনে করিয়ে কপিলকেই বার্তা দিচ্ছে এআইসিসি। একই ভাবে জোটের প্রসঙ্গ আড়ালে রাখতেই কপিল এখন মহুয়াদের মতো তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের দূরে রাখতে তৎপর।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের অনেকে আজও বলেন, কপিল ভাল কাজই করছেন। সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আসন্ন বাজেট অধিবেশনে ফের কংগ্রেস-তৃণমূল কক্ষ সমন্বয়ের পথ সুগম হবে এতে। তবে অস্বস্তি আরও চেপে বসল অধীর, দীপা দাশমুন্সিদের উপরে। তাঁদের মুখ রাখতেই গত বুধবার কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে কপিলের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছিলেন দলীয় মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। আজ ফের প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “দল কোনও নেতাকে পরামর্শ দিতে পারে মাত্র। বাধ্য করতে পারে না। তা ছাড়া এটা কপিলের পেশা। ডাক্তার কখনও রোগীকে ফেরাতে পারেন না।” প্রশ্নের মুখে পড়ে, অধীরও ওই একই যুক্তির শরণ নেন। বলেন, “সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধী বাংলার কংগ্রেস নেতাদের মনোভাব অনুধাবন করছেন। কিন্তু সনিয়া গাঁধী তো আর ঘাড় ধরে কপিলকে নিষেধ করতে পারেন না!”

অস্বস্তি থেকে বেরিয়ে আসতে অধীর পাল্টা আক্রমণ শানান বিজেপি ও তৃণমূলের উদ্দেশে। তাঁর কথায়, “অমিত শাহ ভুলে গিয়েছেন, সারদা মামলায় তৃণমূল সরকারের হয়ে মাত্র দশ মাস আগে আদালতে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী মুকুল রোহতগি। যিনি এখন কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল। আবার ডাও কেমিক্যালের হয়ে এক সময় মামলা লড়েছেন বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি। আইনজীবিদের পেশার বিষয়টি সেই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই দেখা ভাল। জোটের আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে লাভ নেই।”

তৃণমূলের দিকে আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে অধীর বলেন, “সারদা কাণ্ডে এ বার ফাঁসবে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই ও ভাইপো। গোটা তৃণমূল দলটিই জেলে ঢুকবে। সারদা কাণ্ডে সিবিআই ৪টি রাজ্যে তদন্ত করছে। কোনও মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে যাননি। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে। সারদায় না জড়িয়ে থাকলে এত উদ্বিগ্ন কেন তিনি?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন