সোনালির বিরুদ্ধে হঠাৎ মামলা তুলে নেওয়ায় রহস্য

নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন হাওড়ার চিকিৎসক নগেন্দ্র রাই। সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছিলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে রয়েছে। তার পরেও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন চিকিৎসক রাই। তাঁর বক্তব্য, অভিযুক্তেরা সকলেই দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। তাই তিনি আর মামলা চালাতে চান না। সোনালিদেবীর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন রাই। আদালতে হলফনামা দিয়ে সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করার কথাও জানিয়ে দিয়েছেন ওই চিকিৎসক।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন হাওড়ার চিকিৎসক নগেন্দ্র রাই। সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছিলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে রয়েছে।

Advertisement

তার পরেও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন চিকিৎসক রাই। তাঁর বক্তব্য, অভিযুক্তেরা সকলেই দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। তাই তিনি আর মামলা চালাতে চান না। সোনালিদেবীর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন রাই। আদালতে হলফনামা দিয়ে সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করার কথাও জানিয়ে দিয়েছেন ওই চিকিৎসক।

বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি ‘দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা’ চেয়ে নেওয়ার জন্যই যাবতীয় অভিযোগ তুলে নিলেন তিনি? রাইয়ের জবাব, “হ্যাঁ, তা-ই। বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য নানা মহলের অনুরোধ ছিল।”

Advertisement

চিকিৎসক এই দাবি করলেও তাঁর পরিজন ও আত্মীয়দের একাংশ অন্য কথা বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাইয়ের চিঠি পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেন হাওড়ার এক বিধায়ককে। চিকিৎসক ওই বিধায়কের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ। পাশাপাশি, জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছিলেন চিকিৎসককে। আদালতে হলফনামা দেওয়ার সময় সেই নেতা হাজির ছিলেন। তাঁদের কথায়, এই সব কারণেই মামলা চালিয়ে গিয়ে নিজের বিড়ম্বনা আর বাড়াতে চাননি রাই। তাই অভিযোগ ও মামলা তুলে নিলেন।

মামলা প্রত্যাহার করা হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা এর দায় চাপিয়ে দিয়েছেন শাসক দলের উপরেই। মামলা উঠে যাওয়া সত্ত্বেও নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। হাওড়ায় বিজেপির যুব মোর্চার জেলা সভাপতি উমেশ রাই বলেন, “দলের নেত্রীকে বাঁচাতে তৃণমূল চাপ দেওয়ায় ওই চিকিৎসক মামলা তুলতে চেয়েছেন।” আর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শুভ্রজ্যোতি দাস বলেন, “রাজ্য জুড়ে যে-তৃণমূলি সন্ত্রাস চলছে, তা দেখে ওই চিকিৎসক ভয় পেয়েছেন। সেই জন্যই মামলা থেকে সরে যাচ্ছেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “কেউ ব্যক্তিগত ভাবে মামলা প্রত্যাহার করে নিতেই পারেন। কিন্তু যা ঘটেছিল, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এমন ঘটনা কাম্য নয়।”

তৃণমূল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরীর দাবি, “চিকিৎসক সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় মামলা তুলে নিয়েছেন। কেউ চাপ দেয়নি।”

গত ১০ ডিসেম্বর গোলাবাড়ি স্কুল রোডে একটি আবাসনে লিফট নিয়ে দু’টি পরিবারের মধ্যে গোলমাল বাধে। অভিযোগ, সেই সময় তেতলার বাসিন্দা বেদপ্রকাশ তিওয়ারি আত্মীয়স্বজন এবং অন্যদের নিয়ে এসে চারতলার বাসিন্দা চিকিৎসক রাই এবং তাঁর ছেলে নীতেশকে মারধর করে। বেদপ্রকাশের ডাকে সাড়া দিয়ে রাতে সেখানে যান সোনালিদেবী। তিনি ওই চিকিৎসককে হুমকি দেন। বলেন, “আই অ্যাম দ্য ম্যান অব সিএম। আই অ্যাম দ্য গভর্নমেন্ট।” তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি চিকিৎসক রাইয়ের ফ্ল্যাটে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নেওয়ার হুমকি দেন এবং চিকিৎসকের ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে দেবেন বলে শাসান।

পরে দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। বাড়তি পদক্ষেপ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তার আশ্বাস চেয়ে চিঠি দেন চিকিৎসক রাই। মুখ্যমন্ত্রী সেই চিঠির উত্তরও দেন। ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয় আদালত। ঘটনার সময় সিসিটিভি-র ক্যামেরায় ওঠা ভিডিও ফুটেজ ও মোবাইলে ধরে রাখা সোনালিদেবীর কণ্ঠস্বর ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য চেন্নাই পাঠায় পুলিশ। সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি। পুলিশ একটি প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়ে আদালতে আরও সময় চেয়ে নেয়।

রাই পরিবারের উপরে হামলা এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে সোনালিদেবী হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠার পরে ডেপুটি স্পিকার-পদে তাঁর থেকে যাওয়া নিয়ে নৈতিক প্রশ্ন তোলেন অনেকে। বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের মতে, “যে-হেতু ওই ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হয়েছিল, তাই তখনই তাঁর (সোনালির) পদত্যাগ করা উচিত ছিল। শাসক দলেরও উচিত ছিল তাঁকে সরিয়ে দেওয়া। কোনওটাই হয়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”

সোনালির সমালোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার চিকিৎসক রাইয়ের তরফে আদালতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী হরিরাম পাণ্ডে। তিনি বলেন, “বাদী ও বিবাদী দু’পক্ষই মামলা তুলে নিতে রাজি হয়েছে। তাঁর মক্কেল মামলা প্রত্যাহার করতে চেয়ে আদালতে হলফনামা পেশ করেছেন। বিবাদী পক্ষের তরফে বেদপ্রকাশ তিওয়ারিও কয়েক দিনের মধ্যে আদালতে হলফনামা দেবেন বলে জানিয়েছেন।”

আনুষ্ঠানিক ভাবে অবশ্য মামলাটি এখনও স্থগিত হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন