মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস সত্ত্বেও সিআইডি তদন্তে তাঁরা যে ভরসা রাখছেন না, তা পরিষ্কার হয়েছিল বৃহস্পতিবারেই। শুক্রবার সালকিয়ার যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন তাঁর বাবা প্রতাপ ভাণ্ডারী। তিনি জানান, ছেলের মৃত্যুর পরে ১১ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মূল অভিযুক্তেরা এখনও অধরা। সেই কারণেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রতাপবাবু।
গত ২৮ জানুয়ারি সালকিয়ার বিবিবাগানে সরস্বতী পুজোর বিসর্জন সেরে বাড়ি ফেরার পথে এক তরুণীর শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের বেদম মারে জখম হয়ে পরে নার্সিংহোমে মারা যান স্থানীয় যুবক অরূপ। গুরুতর জখম হন তাঁর বন্ধু অভিজিৎ বসু। হাওড়া সিটি পুলিশ ওই ঘটনায় রাজীব তিওয়ারি নামে এক অভিযুক্তকে ধরে। ১০ ফেব্রুয়ারি লালবাহাদুর সাহু নামে আর এক অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। রাজ্য সরকার সিআইডি-র হাতে ঘটনার তদন্তভার তুলে দিলেও বাকিরা এখনও ধরা পড়েনি।
এ দিন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করতে এসে প্রতাপবাবু বলেন, “তদন্ত সিআইডি-কে দেওয়া হলেও পুলিশ মূল অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও সিআইডি-র বদলে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।” প্রতাপবাবুর আশা, একমাত্র সিবিআই তাঁর ছেলের খুনের ঘটনার যথাযথ তদন্ত করতে পারবে ও প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে পারবে।
সিআইডি সূত্রের খবর, অরূপ খুনের ঘটনায় প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দা শুভম দুবে, আনন্দ প্রসাদ, বরুণ শর্মা, সন্দীপ তিওয়ারি, রাজু তিওয়ারির নামে এফআইআর দায়ের করা হয়। পরে অরূপের বন্ধু হাওড়া আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়ে জানান, অরূপ ও তাঁকে যাঁরা বেধড়ক পেটায়, তাঁদের মধ্যে লালবাহাদুরও ছিলেন। এর পরেই আত্মসমর্পণ করেন লালবাহাদুর।
কী ঘটে সালকিয়ার বিবিবাগানে?
হাওড়া সিটি পুলিশ জানায়, ওই রাতে বাঁধাঘাটে সরস্বতী প্রতিমা বিসর্জন করতে যাওয়ার সময় মহিলাদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় কয়েক জন যুবকের সঙ্গে অরূপ ও অভিজিতের গোলমাল হয়। তখনকার মতো বচসা মিটে গেলেও রাতে বিসর্জন সেরে ফেরার পথে বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেক দুরে ওই যুবকদের হাতে আক্রান্ত হন অরূপ ও অভিজিৎ। প্রথমে অভিজিৎকে মেরে রাস্তার পাশের নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়। এর পরে অরূপকে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মাথায় মেরে পালিয়ে যায় ওই যুবকেরা। রক্তাক্ত ও অচৈতন্য অরূপকে রাতেই শেক্সপিয়র সরণির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। পরের দিন কোমায় চলে যান তিনি। ২ ফেব্রুয়ারি ভোরে সেখানে তাঁর মৃত্যুর পরে শোরগোল পড়ে রাজ্য জুড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪ ফেব্রুয়ারি সালকিয়ায় অরূপদের বাড়িতে যান। তাঁর ভাইকে হাওড়া পুরসভায় চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে।
স্থানীয় বাসিন্দারা এ দিনও অভিযোগ করেছেন, অরূপদের মারধরের ঘটনায় স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা জড়িত। ওই ক্লাব পরিচালনা করেন স্থানীয় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনজিৎ রাফেল। অভিযুক্তেরা তাঁর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। আগেও ওই কাউন্সিলর দাবি করেছিলেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে তাঁর কোনওদিনই যোগাযোগ ছিল না। এ দিনও তাঁর দাবি, “আমার সঙ্গে অভিযুক্তদের ঘনিষ্ঠতা তো দূরের ব্যাপার, পরিচয়ই নেই।”