মাত্র আড়াইটি পুরসভার ভোটে কর্তব্যরত সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকদের উপরে নির্বিচার আক্রমণ দেখল রাজ্যবাসী। সব মিলিয়ে আক্রান্ত ১৯। ৫ জন হাসপাতালে। অভিযোগ, সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে শাসক দলের কর্মীরাই। কোথাও কোথাও নেতাদের উপস্থিতিতেই।
যদিও এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার একটি শব্দও খরচ করেননি। বরং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিগ্রহের দায় চাপিয়েছেন বিরোধী তথা সিপিএমের উপরেই। সাংবাদিকদের মার খাওয়া রাজ্যে নতুন নয়। তবে এ দিন বিধাননগর, বালি ও আসানসোলের পুরভোটকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক নিগ্রহ যে আকার নিয়েছে, সাম্প্রতিক অতীতে তার নজির মেলা ভার। রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ঘটনার নিন্দা করেছে বিভিন্ন মহল।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মন্তব্য, ‘‘অল্প কিছু এলাকার ভোটে এত জন সাংবাদিক আক্রান্ত, এমন ঘটনা অতীতে কখনও হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই!’’ বিধাননগরে বামেদের মেয়রপ্রার্থী অসীম দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘নারকীয় ঘটনা। যা ঘটেছে তা দেখাতে গিয়ে সাংবাদিকদের উপরে যে ভাবে আক্রমণ নেমে আসছে, তা নজিরবিহীন।’’ সিপিআই (এম-এল) বলেছে, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই শাসন চালাচ্ছে ও পুলিশ দর্শকের ভূমিকা নিচ্ছে। তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল, কাদের প্ররোচনায় ঘটল, কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্ররোচনা ছিল কি না — তা আমরা খুঁজে বের করব। এই ঘটনায় যুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যাদের মানুষ খারিজ করেছেন তারাই ক্যামেরার সামনে নায়ক হওয়ার চেষ্টা করছে। মানুষ এদের যোগ্য জবাব দেবেন।’’
ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘সল্টলেকে বহিরাগতরা সিপিএমের সমর্থনে এসেছিল এলাকায় সন্ত্রাস তৈরির জন্য। যারা লালবাজারে সন্ত্রাস করেছে তারাই এ দিন এই কাজ করেছে।’’ নিগ্রহের নিন্দা করে কলকাতা প্রেস ক্লাব এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সল্টলেক, রাজারহাট, বালি ও আসানসোলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকরা আক্রান্ত ও হেনস্থার শিকার হয়েছেন। অভিযোগের তির শাসক দলের দিকে। দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট এই ঘটনায় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। অভিযোগের তির শাসক দলের দিকে। রাজনৈতিক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের এই ধরনের কাপুরুষোচিত কাজের নিন্দা করাই যথেষ্ট নয়। দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট এই ঘটনায় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এটা গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ। ঘটনার নিন্দা করেছে ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-ও।
পড়ুন: পাছে দাপট কমে যায়, শাসকের ভরসা তাণ্ডবে
পড়ুন: দিনভর চলল ‘ভোট-লুঠ’, সব দেখেও সুশান্ত শান্তই
পড়ুন: ভোট দেওয়াই হল না, গেরো রহস্যের মেরো
পড়ুন: ভোট করাল ভজাইরা, পাহারা দিল পুলিশই
পড়ুন: এ রকম ‘পিসফুল’ ভোটই ভাল, তাই না!