তাঁদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি অমিত মিত্র। সে জন্য সোমবার রাজ্যের অর্থমন্ত্রী তথা শিল্পমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক বয়কট করেছিলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। সে দিন প্রায় ফাঁকা ঘরে নিজের বক্তব্য পেশ করতে হয়েছিল অমিতবাবুকে। নবান্নের খবর, এই ঘটনায় পুলিশের উপরে চটেছেন অমিতবাবু। নিজের দফতরে ফিরে গিয়ে শুধু উষ্মা প্রকাশ করেই থামেননি, অভিযোগ করেছেন, সংবাদমাধ্যম যে তাঁর ডাকা সাংবাদিক বৈঠক বয়কট করবেন, তা পুলিশ আগাম জানতে পারেনি। আর সে জন্যই তাঁকে চূড়ান্ত অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর বিব্রত হওয়ার আরও কারণ রয়েছে। বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের প্রস্তুতির কথা সাংবাদিকদের জানাবেন তিনি, সে জন্য সোমবার সকাল থেকেই প্রেস কর্নারের লাগোয়া ঘরটি সাজানো গোছানো হচ্ছিল। বেলা একটা নাগাদ তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের অফিসারদের তদারকিতে বিশাল এলইডি স্ক্রিন লাগানো হয় সেখানে। বাইরের আলো ঢুকে যাতে অডিও-ভিজুয়াল শো-এ সমস্যা তৈরি করতে না পারে, সে জন্য ঘরের যাবতীয় জানলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বড় পর্দা। আর এই পুরো সাজটাই ছিল অমিতবাবুর মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি সেখানে আসার আধ ঘণ্টা আগে দোতলায় চলে আসেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অফিসারেরা। দোতলায় পুরো চত্বরে এক হাত অন্তর দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় পুলিশকর্মীদের।
এত জমিয়ে যে সাংবাদিক বৈঠক করতে চেয়েছিলেন অমিতবাবু, তা কার্যত ভেস্তে গেল সাংবাদিকদের বয়কটে। সাংবাদিক বৈঠক থেকে ফিরে তিনি গোটা বিষয়টা রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের জানান। আর এটা যে পুলিশের গোয়েন্দা দফতরের ‘অক্ষমতার’ ফলেই ঘটেছে, ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন সে কথাও।
মঙ্গলবার নবান্নে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ও অফিসারদের মুখে সে কথাই ঘুরেছে দিনভর। এক পুলিশকর্তা জানান, ক’দিন আগেই কয়েক জন সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীর দফতরে যান। সে কথা জানতে পেরে অর্থমন্ত্রী সরাসরি ফোন করেন লালবাজারে। জানতে চান, কী ভাবে সাংবাদিকেরা তাঁর অফিসে পৌঁছল। ওই ঘটনার জেরেই শুক্রবার থেকে সাংবাদিকদের প্রেস কর্নারের বাইরে যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞা কঠোর ভাবে কার্যকর করার নির্দেশ আসে বলে জানাচ্ছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। মঙ্গলবারেও নবান্নে ছিল একই চিত্র। দোতলায় প্রেস কর্নারের আশপাশ ছয়লাপ ছিল পুলিশে। সাংবাদিকেরা কোথায় যাচ্ছেন, তা জানার জন্য কখনও পিছু নিয়েছেন গোয়েন্দারা, কখনওবা জানতে চাওয়া হয়েছে সরাসরিই। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল, তার সদুত্তর মেলেনি প্রশাসনের শীর্ষমহলের কাছে। উঁচুতলার একাধিক অফিসার জানিয়েছেন, ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) যে এমন নির্দেশ দিতে চলেছেন, তা জানা ছিল না নবান্নের শীর্ষকর্তাদের। কার নির্দেশে জানুয়ারি মাসে সরকারের জারি করা সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সার্কুলার কঠোর ভাবে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিল পুলিশ, সে নিয়ে সরকার এখনও অন্ধকারেই বলে দাবি প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের। প্রশাসন এই দাবি করলেও পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, ডিসি স্তরের অফিসারের পক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া ও কার্যকর করা সম্ভব নয়। ওই কর্তাদের বক্তব্য, এই জমানায় যেখানে বহু ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার মতো রুটিন কাজও পুলিশের নিজস্ব সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করে না, যেখানে এক জন বিডিওকে বদলি জন্য প্রশাসনের শীর্ষমহলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় সংশ্লিষ্ট দফতরের অফিসারদের, সেখানে রাজ্য সরকারের সচিবালয়ে সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ডিসি স্তরের পুলিশকর্তা একা নেবেন, এটা মানতে পারছেন না প্রশাসনেরই একাংশ।
এ দিনই কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল নবান্নে। কার নির্দেশে পুলিশি সক্রিয়তা, তা জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী যে হেতু কলকাতার বাইরে, তাই এখনই এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না অফিসারেরা। আজ, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর নবান্নে আসার কথা।