সারা ক্ষণ টাকার চিন্তায় ভুগতেন সুদীপ্ত

টাকাগুলো সব গেল কোথায়? এই প্রশ্নের হদিস করতেই সারদা কেলেঙ্কারির ভার সিবিআইকে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআইয়ের তরফে প্রথম এফআইআর রুজু হওয়ার পরে সেই একই প্রশ্ন ফিরে ফিরে আসছে পিয়ালি সেনের মুখে। পিয়ালি, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০৩:১৯
Share:

সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালি। ফাইল চিত্র।

টাকাগুলো সব গেল কোথায়?

Advertisement

এই প্রশ্নের হদিস করতেই সারদা কেলেঙ্কারির ভার সিবিআইকে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআইয়ের তরফে প্রথম এফআইআর রুজু হওয়ার পরে সেই একই প্রশ্ন ফিরে ফিরে আসছে পিয়ালি সেনের মুখে।

পিয়ালি, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী।

Advertisement

এত দিন সিআইডি, ইডি সকলকেই তদন্তের ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করেছেন বলে পিয়ালির দাবি। এ বার প্রয়োজন হলে সিবিআইকেও সাহায্য করতে প্রস্তুত তিনি। কেননা, তাঁর নিজেরও প্রশ্ন সারদার এত টাকা কোথায় উধাও হয়ে গেল?

কেষ্টপুরে মায়ের ফ্ল্যাটে বসে পিয়ালি বলছিলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্বামীকে সারাক্ষণ মোবাইলে টাকা নিয়েই কথা বলতে দেখতেন শেষের দিনগুলো। ভোর রাতে বাড়ি ফিরে সকাল ন’টার পর ঘুম থেকে উঠে নিজের তিনটে মোবাইল ফোনে অবিরাম টাকার বিষয়ে কথা বলতেন সুদীপ্ত। অথচ ২০১০-এর পর থেকে স্বামীর ব্যবসা অনেকে বড় হয়েছে বলেই শুনেছিলেন পিয়ালি। সারদার কর্মচারীরা মাঝেমধ্যেই বাড়িতে এসে নানা কাগজে সই করাতেন পিয়ালিকে দিয়ে। তাঁরাও বলতেন, অনেক টাকার ব্যবসা চলছে। কিন্তু তাই যদি হবে, তা হলে সুদীপ্ত সর্বক্ষণ টাকার চিন্তা করেন কেন? এটা পিয়ালি কিছুতেই বুঝতে পারতেন না।

পিয়ালির কথায়, শেষের দিকে সংসার খরচের টাকা চাইলে সুদীপ্ত সাধারণত বলতেন টাকা নেই। বেশি টাকা খরচ করা যাবে না। বেশ কয়েক বার চাওয়ার পর টাকা মিলত। সুদীপ্ত একটা সুমো গাড়িতে ঘুরতেন। এ ছাড়া নিজের তেমন কোনও খরচ ছিল না। হজমের সমস্যা ছিল বলে সেদ্ধ ছাড়া খেতেন না। মদ খেতেন না। নেশা বলতে শুধু সিগারেট। পিয়ালির জিজ্ঞাসা, “তা হলে হাজার হাজার কোটি কোথায় গেল? কোনও হিসেবই আমি মেলাতে পারছি না।”

পিয়ালি লক্ষ করেছেন, অবস্থাটা আরও ঘোরালো হয় ২০১১ সালের পর। তখন থেকে সুদীপ্তবাবু খুব অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় বাড়িতে কোনও কথা জিজ্ঞাসা করলেই মেজাজ হারিয়ে ফেলতেন। মোবাইলে সব সময় চেঁচিয়ে বলতেন, “টাকা পাঠাও। আমার টাকার দরকার।” পাগল-পাগল অবস্থা হয়েছিল। ব্লাডসুগার বেড়ে গিয়েছিল। দিনে-রাতে প্রায় এক মুঠো ওষুধ খেতেন সুদীপ্ত।

দীর্ঘদিন ধরে জেলে থাকায় স্বামীর শরীর কতটা ভেঙে গিয়েছে, নিজের চোখে দেখেছেন পিয়ালি। পিয়ালির আর্জি, “সিবিআই স্বামীর শারীরিক অবস্থার দিকেও একটু নজর দিক। জিজ্ঞাসাবাদ করে সারদার টাকার হদিস করুক।” পিয়ালিও চান, আমানতকারীরা টাকা ফেরত পান। তিনি বলছেন, “আমিও তো এখন আমানতকারীদের মতোই সর্বস্বান্ত। আমি এখন বুঝি, আর্থিক সংঙ্কট কী।”

স্বামী জেলে। ব্যাঙ্ক আমানত বাজেয়াপ্ত। বিয়ের গয়নাও বাজেয়াপ্ত হয়ে গিয়েছে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ। মেয়ের চিকিৎসার টাকা নেই। সম্প্রতি ইডি অফিসে গিয়ে নিজের বাজেয়াপ্ত মোবাইলটি ফেরত পাওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছেন। এখন কোনও আত্মীয় গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সাহায্য করছেন, তো কেউ বিদ্যুতের বিল। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন?

অনটনের জ্বালা এখন মর্মে মর্মে বুঝছেন পিয়ালি। সেই যন্ত্রণা থেকেই তাঁর প্রার্থনা, সিবিআই সারদার টাকাগুলো খুঁজে বার করুক। “আশা করি, সুদীপ্তও সিবিআইকে সব রকম সাহায্য করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন