সাড়ে তিন লাখে জিতেও তুষ্ট হতে পারছেন না অধীর

মাথার উপরে পাখা ঘুরছে। কপালে উড়ে আসা চুল অবহেলায় সরাচ্ছেন। ঈষৎ পিছনে ঠেলে দিচ্ছেন জামার কলারটা। —আসলে কী জানেন, বড় স্ট্র্যাটেজিক ভোট হল। মোদী-বিরোধী ভেটের একটা বড় অংশও কংগ্রেসের বাক্সে এল না!

Advertisement

রাহুল রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০৩:১৬
Share:

জয়ের পরে কংগ্রেসের উল্লাস। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের ছবি।

মাথার উপরে পাখা ঘুরছে।

Advertisement

কপালে উড়ে আসা চুল অবহেলায় সরাচ্ছেন। ঈষৎ পিছনে ঠেলে দিচ্ছেন জামার কলারটা।

—আসলে কী জানেন, বড় স্ট্র্যাটেজিক ভোট হল। মোদী-বিরোধী ভেটের একটা বড় অংশও কংগ্রেসের বাক্সে এল না!

Advertisement

তত ক্ষণে পরিষ্কার, তৃণমূল-বিজেপির জোড়া ফলা সামলেও বামেদের তুলনায় কম মচকেছে কংগ্রেস। টানাপড়েনের রায়গঞ্জ-সহ দু’টি আসন হাতছাড়া হলেও চারটি এখনও পকেটে। রেকর্ড ভোটে জিতেছেন নিজে।

শুধু কি জিতেছেন? জয় নিয়ে এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, বহরমপুরে নয়, কলকাতায় বসে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মাঝে-মধ্যে শুধু ফোন করে খবর নিয়েছেন।

এত আত্মবিশ্বাস, তবু ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল কি?

—না না, ভেঙে পড়ার কোনও কারণ নেই। যা হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে ভেবেও লাভ নেই। এ বার সব ঝেড়েঝুড়ে ফের নেমে পড়তে হবে।

কংগ্রেসের ঐতিহাসিক ভরাডুবির আবহেও শান্ত, সংহত ‘মুর্শিদাবাদের রবিনহুড’। গলায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে একই রকম দাপট, যখন বলছেন “এত তাড়াতাড়ি মাঠ ছেড়ে যাওয়ার বান্দা অধীর নয়!”

ভরা-ভোটের বাজারে, মাত্র তিন মাস আগে প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব পেয়েছিলেন অধীর। রাহুল গাঁধীর ডাকে তড়িঘড়ি দিল্লি গিয়ে তাঁকে শুনে এসেছিলেন ‘অধীর মাটির কাছাকাছি থাকেন। ওঁকেই প্রদেশের দায়িত্ব দিতে চাই। আমি জানি উনি লড়ে যাবেন।’

ভোটের আগে প্রার্থী নির্বাচন দিয়েই লড়াইটা শুরু হয়েছিল তাঁর। পুরনো নেতাদের অনেকেই প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে বেঁকে বসেছিলেন। কাউকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে, কাউকে বকুনি দিয়ে রাজি করিয়েছিলেন। গোষ্ঠী বিবাদ সরিয়ে রেখে গত দু’মাস ধরে রাজ্যের আনাচে-কানাচে অবিরাম প্রচারও করে বেরিয়েছেন।

ফলাফল পরিষ্কার, ঘোর মোদী-প্রবাহে সারা দেশে কংগ্রেস যখন ৪৪-এ নেমেছে, রাজ্যে একক ভাবে লড়ে তারা ধরে রেখেছে চারটি আসন। রায়গঞ্জে দীপা দাশমুন্সি মোটে এগারোশো ভোটে হেরে যাওয়ায় কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে একটি। জাতীয় পরিস্থিতির তুলনায় কংগ্রেস কবে এত ভাল ফল ধরে রেখেছে, তাবড় ভোটতাত্ত্বিকেরাও তা মনে করতে পারছেন না।

পাঁচ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ছ’টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা রাজ্যে তাদের কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১১ শতাংশের সামান্য বেশি। এ বার তা ৯ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ, হাতছাড়া হয়েছে মোটে ২ শতাংশ। অধীরের ব্যাখ্যা, “এই বাজারেও কংগ্রেসের যে একটা নির্দিষ্ট ভোট রয়েছে, তা কিন্তু স্পষ্ট।”

ফল বেরনোর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে, বুধবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সৌজন্যে দশ নম্বর জনপথে দলের শীর্ষ নেতাদের নৈশভোজে ডেকেছিলেন সনিয়া গাঁধী। সেখানে অধীরকে দেখেই কংগ্রেস সভানেত্রীর সহাস্য মন্তব্য ছিল, “ওই যে বাংলার হিরো!” হাত বাড়িয়ে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন, “আমি জানি, আপনি ঠিক জিতবেন।”

জানত ইট-কাঠ-পাথরও। শুধু মার্জিনটাই যা জানা বাকি ছিল, দিনের শেষে যেটা গিয়ে দাঁড়াল ৩,৫৬,৫৬৬-এ। বহরমপুরে অধীরের এজেন্ট তুষার মজুমদারের কথায়, “ফল বেরনোর দিন ওঁকে কখনও টেনশন করতে দেখিনি। এ বারও ফোনে মাঝে-মাঝে খবর নিয়েছেন, টুকটাক নির্দেশ দিয়েছেন। ওই পর্যন্তই।”

নিজেকে নিয়ে নয়, দলনেতা অধীরের আসলে চিন্তা ছিল বাকি আসনগুলির ক’টি বাঁচাতে পারবেন, তা নিয়েই। দীপা হেরেছেন, নিজের জেলায় মুর্শিদাবাদ আসনটিও খোয়াতে হয়েছে তাঁকে। “আমি কোনও ম্যাজিক জানি না। চেষ্টা করেছি, কংগ্রেস যে সর্বত্র আছে সেটা বোঝানোর” বলছেন কংগ্রেসের মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

বলছেন “আজ থেকে নতুন একটা লড়াই শুরু হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন