শিক্ষকদের মানবশৃঙ্খল। যাদবপুরে। নিজস্ব চিত্র
ঘটনার পরে মাস পেরিয়ে গিয়েছে। ছাত্রেরা এখনও বিরূপ, শিক্ষকেরাও।
এতটাই যে, সোমবার যাদবপুরের এক দল পড়ুয়া উপাচার্যের মুখের উপরেই প্রশ্ন করলেন, কেন তিনি পদত্যাগ করছেন না।
উপাচার্যের অফিস-ভবনের সামনে মানবশৃঙ্খল তৈরি করে শিক্ষকেরা বললেন, ‘ভিসি মাস্ট রিজাইন।’
বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়ারা ক্লাসে ফিরেছেন দিন কয়েক আগেই। এ দিন ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও। কিন্তু উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবি থেকে সরতে নারাজ তাঁরা। তবে আন্দোলনের ধরনে কিছুটা বদল আনছেন। ক্লাস করবেন, কিন্তু ক্লাসের খাতায় হাজিরা দেবেন না। আর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পোস্টার লিখে গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াবেন ক্যাম্পাসের মধ্যে। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, “এখনও যাদবপুরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। তবে দ্রুত ফিরবে বলে আমি আশাবাদী।”
মন্ত্রী আশাবাদী হলেও এ দিনও ক্যাম্পাসের ছবিটা খুব আশাব্যঞ্জক ছিল না। পড়ুয়াদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন ডিন এবং তিন আধিকারিককে নিয়ে কমিটি গঠনের বিজ্ঞপ্তি এ দিন জারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনই সরকারি ভাবে কমিটি গঠন করা হচ্ছে না বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি দেখে ওই আধিকারিকদের কেউ কেউ ধীরে চলার পরামর্শ দিয়েছেন উপাচার্যকে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জানিয়েছিলেন, তিনি চান, উপাচার্য নিজেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলুন।
গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও অভিজিৎবাবু নির্বিঘ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। কিন্তু বিকেল পাঁচটা নাগাদ তিনি যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, হঠাৎই জনা কয়েক পড়ুয়া তাঁর সামনে হাজির হন। উপাচার্যের কাছে তাঁরা সরাসরি জানতে চান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশ কেন ছাত্রছাত্রীদের পেটাল? কেনই বা সেই রাতে পুলিশ ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে? পুলিশ দিয়ে পড়ুয়াদের পিটিয়ে এখন হঠাৎ তাঁদের ‘সন্তানের মতো’ বলার মানে কী? কেনই বা তিনি পদত্যাগ করছেন না?
অভিজিৎবাবু তখনও অরবিন্দ ভবনের কোলাপসিবল গেটের ভিতরে। সেখান থেকেই তিনি ওই পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চান তিনি। তাতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওই প্রশ্নগুলিরই জবাব চাইছিলেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য ফের দোতলায় নিজের অফিসে চলে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশের কড়া পাহারায় ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য।
এ দিন দুপুরে ‘ভিসি মাস্ট রিজাইন’ লেখা কালো ব্যানার হাতে উপাচার্যের অফিস ভবনের বাইরে মানবশৃঙ্খল তৈরি করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একশোরও বেশি শিক্ষক। আজ, মঙ্গলবার গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছে যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন জুটা। সেখানে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো হবে বলে মনে করছে জুটা। উপাচার্যের পদত্যাগ, হস্টেলে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও ছাত্রছাত্রীদের উপরে পুলিশের অত্যাচারের বিচার বিভাগীয় তদন্ত-সহ বেশ কিছু দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি আচার্য-রাজ্যপালের কাছে দেবে জুটা। অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে তাঁদের যাবতীয় অভিযোগ সংবলিত একটি শ্বেতপত্রও প্রকাশ করবে ওই শিক্ষক সংগঠন।
যাদবপুরে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে গত ২০ সেপ্টেম্বর শহরে যে মহামিছিল হয়েছিল, সোমবার তার এক মাস পূর্তি উপলক্ষে কলেজ স্ট্রিটে জমায়েতের ডাক দেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া। বিকেল চারটেয় সেখান থেকে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ পর্যন্ত মিছিল করেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর-সহ বেশ কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ছিলেন ওই মিছিলে।