জেলা আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র। বৃহস্পতিবার মদনবাবুর হয়ে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান আইনজীবীরা। কিন্তু পেশ করার পরে সেটিতে ভুল খুঁজে পেয়ে এখন সেটি প্রত্যাহারের কথা ভাবছেন তাঁরা।
সিবিআই সূত্রের খবর, নতুন করে জামিনের মামলা দাখিল হলে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের আদালতে আগামী সপ্তাহে তার শুনানি হতে পারে। তবে মদনের আইনজীবীদের বক্তব্য, এ দিনের পেশ করা আবেদনে ত্রুটি রয়েছে। মামলাটি আদালতে উঠলে তাঁরা সেটি প্রত্যাহার করে নতুন করে আবেদন করবেন। মদনবাবুর আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টে নতুন জামিনের আবেদনে তাঁরা বলবেন, গ্রেফতারের পরে ৬০ দিনেরও বেশি পেরিয়ে গেলেও তাঁদের মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি, চার্জশিটও পেশ করতে পারেনি সিবিআই। তা ছাড়া জামিন পেলে মদনবাবু পালিয়ে যাবেন না। মন্ত্রী হলেও সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকা মামলার তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও তাঁর পক্ষে করা সম্ভব নয়।
মন্ত্রীর হয়ে আলিপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক সমরেশপ্রসাদ চৌধুরীর এজলাসে এর আগে জামিনের আবেদন করা হয়। বুধবার তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। সিবিআইয়ের আইনজীবী ও মন্ত্রীর আইনজীবীর সওয়াল জবাবের পরে বিচারক চৌধুরী মন্ত্রীর জামিনের আবেদন খারিজ করে তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, মামলার কেস ডায়েরিতে ১৬১ এবং ১৬৪ ধারায় সারদার আমানতকারী ও এজেন্টরা তাঁদের বয়ানেই আবেদনকারীর জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। আবেদনকারীর সারদা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা তাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই মুহূর্তে তাঁকে জামিন দিলে বৃহত্তর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও মানি ট্রেল (টাকা লোপাটের গতিপথ) খুঁজে বের করার তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মদন মিত্র যে সারদা-কাণ্ডে জড়িত তার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে আছে। সেই তথ্য পেশের পরেই আলিপুর আদালত মন্ত্রীর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। হাইকোর্টেও তাঁরা সেই তথ্যপ্রমাণ পেশ করবেন বলে সিবিআই সূত্রের বলা হয়।
আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, এ দিন মন্ত্রীর তরফ থেকে আলিপুর জেলা আদালতেও নতুন একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলার আবেদনে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ নম্বর ধারা যুক্ত করাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আবেদনকারীর বক্তব্য, সারদা রিয়েলটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ৪০৯ ধারা প্রয়োগের কোনও ভিত্তি নেই। বিচারক হারাধন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ করে দেওয়া হোক।
সারদা রিয়েলটি মামলায় এ দিন মদনবাবুকে আলিপুর আদালতে হাজির করানোর কথা ছিল। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থায় উন্নতি না হওয়ায় এ দিন তা হয়নি। বুধবার দুপুরে অসুস্থ বোধ করায় মদনকে জেল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীকে ফের হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
হাসপাতালে কেমন আছেন মদন মিত্র? এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মন্ত্রীর অসুস্থতা তাঁরা শনাক্ত করেছেন। সেটি ‘অ্যাংজাইটি-ডিপ্রেশন রিলেটেড প্যানিক লাইক সিম্পটম।’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মন্ত্রীর ফুসফুসে জল জমছে। বুধবার মন্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর হার্ট ফেলিওর-এর নানা লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানান, হৃদযন্ত্রের সমস্যা থেকেই তাঁর ফুসফুসের উপর চাপ পড়ছে এবং সেখানে জল জমছে। আপাতত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মৃণালকান্তি দাসের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। কোনও মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হয়নি।
এ দিন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞরা মদনকে পরীক্ষা করেন। তাঁরা জানান, মন্ত্রীর রক্তচাপ এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। রক্তে সুগারের মাত্রাও কমেছে। কিন্তু তিনি অত্যধিক মানসিক চাপে রয়েছেন। মদনবাবু চিকিৎসকদের জানিয়েছেন নিজেকে সামলাতে পারছেন না। বার বার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। তাঁকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটাকেই ‘অ্যাংজাইটি-ডিপ্রেশন রিলেটেড প্যানিক লাইক সিম্পটম’ বলছেন চিকিৎসকেরা। ঠিক হয়েছে, শুক্রবার থেকেই মনোবিদেরা কিছু ‘থেরাপি’ শুরু করবেন।