তত ক্ষণে ঘুমপাড়ানি বুলেট মারা হয়েছে হাতিটিকে। একাধিক বার।
ভয়ে ছুট হাতির
ভোর চারটের সময় একতিয়ারশালে খুব সকালে ওঠা কয়েক জন প্রথম দেখে হাতিটিকে। ভোর ৫ টায় চয়নপাড়া এলাকার কয়েকটি বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় হাতিটি। ভোর ৬ টায় হাতির পিছু ধাওয়া করে ও ছবি তোলার জন্য উপচে পড়ে ভিড়। সকাল ৭ টায় ভয়ে ছুট লাগায় হাতিটি। গুঁড়িয়ে দেয় গাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি, দেওয়াল, ঘরবাড়ি।
গাড়ি ঘুরল সেবকে
এনজেপিতে সবে দার্জিলিং মেল থেকে নেমে যাত্রীরা যাবেন লাটাগুড়ি। য়াওয়ার কথা জলপাইগুড়ি হয়ে। কিন্তু, যাদবপুরের পর্যটকদের দলটি জানতে পারল, সেবক রোডে হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্যস, সেই গাড়ি ঘুরে গেল শহরের দিকে। বেলা প্রায় ১২টা পর্যন্ত ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাবন্দি করলেন নানা দৃশ্য। ৭ জনের দলটি বন্যপ্রাণের উপরে ছবি তুলতে গেলেন ডুয়ার্স।
তাড়া খেয়ে উল্টো দিকে
সকাল ৮ টায় জানা গেল, হাতিটি দিক বদল করে আশিঘর এলাকায় ঢুকে পড়েছে। সেখানেও কয়েকটি ঘর ভাঙে। এবার রওনা দেয় জঙ্গলের দিকে। সকাল ৯ টা নাগাদ জঙ্গলে ঢোকার মুখে অত্যুৎসাহী এলাকাবাসীর তাড়া করে উল্টো দিকে পুর এলাকায় ঢুকে পড়ে। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দরপাড়া, আশরফনগর হয়ে ইস্কন মন্দির রোডে দোকান, ঘর ভাঙতে ভাঙতে সেবক রোডের দিকে রওনা দেয়।
ওয়্যাটসঅ্যাপ
সাত সকালে শিলিগুড়ি শহরের উপকন্ঠে হাতির হানার পরেই ওয়্যাটসঅ্যাপ মেসেজ শুরু হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তো বটেই, বিভিন্ন গ্রুপেও প্রথমে চলতে থাকে মেসেজ আদান প্রদান। যোগ হয় ছবি ও ভিডিও। এর পরেই শুরু হয়ে যায় ফোনাফোনি। মেসেজ, স্ট্যাটাস, ছবি উপচে পড়তে থাকে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও। ব্যাস আর রক্ষে নেই। অর্কদীপ রায়, সুব্রত বিশ্বাস, মিন্টু বড়ুয়াদের মতো অনেকেই কাজকর্ম বাদ দিয়ে বাইক নিয়ে ছোটা শুরু করেন সেবক রোডের দিকে। মোবাইলে ছবি আর ওয়াটসঅ্যাপ মেসেজ চলতে থাকে। আর এইভাবে শ’য়ে শ’য়ে একাংশ উৎসাহীর ভিড়, ঘেরাটোপে ধীরে ধীরে আটকে পড়ে বুনোটি।
সাইকেল চুরি
সেবক রোড়ে একটি ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা কর্মী নজরুল ইসলাম। সাইকেল করে বাড়ি থেকে এসে কাজের জায়গার কাছেই সেটি তালা বন্ধ করে রেখেছিলেন। হাতি শহরে ঢুকলে তা দেখতে ভিড় উপচে পড়ছিল সেবক রোড়ে নজরুলবাবুর ওই ব্যাঙ্কের সামনেই। বন দফতর ঘুমপাড়ানি গুলি করে সেটিকে ধরে নিয়ে য়ান। পরে নজরুলবাবু দেখেন ভিড়ে তাঁর সাইকেলটি চুরি গিয়েছে।
হাতি নিয়ে সেলফি
পিছনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাতি। ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে। হাতিকে পিছনে রেখে সেলফি তুলতে ব্যস্ত স্বপন, গোপাল, গজারুরা। হঠাৎ পিছন থেকে হুড়মুড় শব্দ। ভেঙে পড়ল দেওয়াল। কোথায় গেল বন্ধুরা, পিছন ফিরেই গোপাল দেখে বন্ধুরা ততক্ষণে চোঁচা দৌড় অন্যদিকে। কয়েক মুহূর্ত। তার পরেই কোথায় কী পায়ের চটিজোড়া ফেলে রেখেই মুহূর্তেই ফাঁকা এলাকা।
বাজারে ভিড় নেই
বন্ধ সেবক রোড। বিধান মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। তাঁদের কয়েকজন বলেন হাতির জন্য বাজারে ভিড় কম। সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেনাবেচা তেমন হয়নি। হাতি নিয়ে লোকজন যে ভাবে হামলে পড়েছিল তাতে এই বাজারে ব্যবসাও কমেছে।