তালাবন্ধ বাড়িটা ঘিরে বেজায় কৌতূহল। পথ চলতি লোকজন কৈখালির পাড়ার ধূসর বাড়িটাকে এক ঝলক দেখে নিতে যেমন ভুলছেন না, তেমনই পাশের বিয়েবাড়ি থেকে ঢুকতে-বেরোতে অতিথিরাও এক বার দেখে নিচ্ছেন জঙ্গিগোষ্ঠীর টুইটার অ্যাকাউন্ট চালনায় অভিযুক্ত মেহদি মসরুর বিশ্বাসের বাড়িটা!
আজ, মেহদিকে হেফাজতে নিয়েছে কর্নাটক পুলিশের বেঙ্গালুরু অপরাধদমন শাখা। ২৪ বছরের মেহদিকে গত কাল বেঙ্গালুরুতে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজ, ডিসিপি (ক্রাইম) অভিষেক গয়াল বলেন, “মেহদিকে কাল রাতেই ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয়। ধৃতকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।” এই গ্রেফতারির প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আবুউয়ানফাল৬ নামে একটি হ্যান্ডেল থেকে কাল ডিসিপি গোয়েলকে একটি টুইট করা হয়। বলা হয়েছে, “আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে ছেড়ে দেব না। প্রতিশোধ নেব। তৈরি থেকো।” বেঙ্গালুরুর যুগ্ম কমিশনার তথা তদন্তকারী দলের প্রধান হেমন্ত নিমবালকর বলেন, “আইএসআইএস-এর সঙ্গে ধৃতের যোগাযোগ খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল। এখানে জঙ্গিদের কোনও স্লিপার সেলের অস্তিত্ব আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিকে, গত কাল ছেলের জঙ্গিযোগের অভিযোগ উড়িয়ে মেহদির বাবা দৃঢ়তার সঙ্গেই দাবি করেছিলেন, পুলিশের কিছু একটা ভুল হয়েছে। ফোনে যোগাযোগ করা হলে আজও সেই একই দাবি করলেন বছর সত্তরের মেকাইল।
গত কাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও রাতারাতি ভোল বদলেছে কৈখালির বাড়ি। রবিবার সকাল থেকেই দরজায় তালা। বন্ধ দোতলার বারান্দাও। পরিবারের লোকজন দেখা করছেন না কারও সঙ্গে। এড়িয়ে যাচ্ছেন পড়শিদের। কলিং বেলের আওয়াজে বারান্দার দরজা খুলে অতিথির চেহারাটা দেখে নিচ্ছেন মাত্র। তার পর ফের বন্ধ কপাট। মেহদির এক পড়শি নুরুল রহমান জানালেন, মেহদির খবরে তাঁরা স্তম্ভিত। এক পড়শি অন্যজনকে ফিসফিস করে বললেন, “যে ছেলে সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে থাকত, সে কী ভাবে জঙ্গি হবে! এ অবিশ্বাস্য।”
মেহদির পরিবার সূত্রে খবর, গত কাল থেকেই শয্যাশায়ী মেহদির মা মমতাজ বিশ্বাস। আজ সকাল থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মেহদির বাবা মেকাইলও। তবে মেহদির এক খুড়তুতো ভাই আবদুল মান্নান বলেন, “দাদার কোনও খবর না পেয়েই ওঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” ফোনে মেকাইল দাবি করেন, বিকেল পর্যন্ত ছেলের গ্রেফতারির খবর পাননি। বিধাননগর কমিশনারেট ও কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) জানিয়েছে, মেহদির গ্রেফতারির কোনও খবর তাঁদেরও জানানো হয়নি।
মেহদির পরিবার সূত্রে খবর, দু’এক দিনের মধ্যেই মেহদির আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করতে বেঙ্গালুরু যেতে পারেন তাঁর পরিবারের কয়েক জন সদস্য।