হাসপাতাল ছেড়ে মন্ত্রী মদন প্লাস্টিক ঘেরা ওয়ার্ডে

মন্ত্রী চেয়েছেন। তাই, জরুরি ভিত্তিতে আলিপুর জেলের মন্দির ওয়ার্ডে সোমবার দুপুরের মধ্যেই শৌচাগারে বসানো হল নতুন কমোড। তার পর বিকেলে জেল হাসপাতাল থেকে ওই ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল মদন মিত্রকে। ওয়ার্ডটি সবুজ প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এতে সারদা মামলায় অভিযুক্ত পরিবহণ মন্ত্রী জেলের বাকি বন্দিদের থেকে আড়ালে থাকবেন। কারা দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত ওখানেই থাকবেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:১৪
Share:

মন্ত্রী চেয়েছেন। তাই, জরুরি ভিত্তিতে আলিপুর জেলের মন্দির ওয়ার্ডে সোমবার দুপুরের মধ্যেই শৌচাগারে বসানো হল নতুন কমোড। তার পর বিকেলে জেল হাসপাতাল থেকে ওই ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল মদন মিত্রকে। ওয়ার্ডটি সবুজ প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এতে সারদা মামলায় অভিযুক্ত পরিবহণ মন্ত্রী জেলের বাকি বন্দিদের থেকে আড়ালে থাকবেন। কারা দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত ওখানেই থাকবেন তিনি।

Advertisement

রবিবার রাজ্য কারা দফতরের এডিজি অধীর শর্মা পরিবহণ মন্ত্রীর জন্য বাড়ি থেকে খাবার আনার অনুমতি দিয়েছিলেন। এ দিন মন্ত্রীকে ডিভিশন-১ বন্দির মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে কারা দফতর। ফলে, আম-বন্দিদের থেকে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধে পাবেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে তুলনায় ভাল বিছানা, আলাদা রান্না করা বাড়তি খাবার ইত্যাদি। এ দিন সকালে মন্ত্রীর জন্য খাবার নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলেরা। বিকেলে ফের ছেলেরা এসে রাতের খাবার দিয়ে যান। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের খবর, সকালে মন্ত্রীর জন্য ভাত, ডাল আর আলুভাজা পাঠানো হয়েছিল। রাতের জন্য পাঠানো হয় দু’টো রুটি আর পাঁচমেশালি তরকারি। তবে এ দিনও খাবারে অরুচি একেবারেই কমেনি মন্ত্রীর। রবিবার দিনভর শুধু মুড়ি খেয়ে ছিলেন। রাতে রুটি-তরকারি। জেল-কর্তারা ভেবেছিলেন, এ দিন বাড়ি থেকে আনা খাবার হয়তো ঠিকঠাক খাবেন মন্ত্রী। কিন্তু দুপরে অল্প একটু ভাত, রাতে রুটি-তরকারি খেয়েছেন তিনি। সকালে খেয়েছেন গ্রিন-টি, বিস্কুট, ডিম সেদ্ধ।

খাবারে অরুচি থাকলেও মদন এ দিন মোটামুটি খোশমেজাজেই ছিলেন। হাসপাতালের কাছে পাহারার দায়িত্বে থাকা এক কর্মীর কথায়, “সকালে শালমুড়ি দিয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডের সামনের চত্বরে রোদ পোহাচ্ছিলেন মন্ত্রী। সে সময়ে বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন। অনেকের সঙ্গেই গল্পসল্প করেছেন।”

Advertisement

তবে জেলে মন্ত্রীকে বাড়তি সুবিধে পাইয়ে দিতে গিয়ে সহকর্মীদের রোষের মুখে পড়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক অফিসার। কারা দফতরের একটি সূত্রের দাবি, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ওই অফিসার মন্ত্রীকে বিভিন্ন সুবিধে পাইয়ে দিতে গিয়ে গুরুতর বেআইনি কাজ করেছেন। এমনকী, জেল সুপারের কথাও তিনি শোনেননি বলে অভিযোগ। সুপার খুব শীঘ্রই এ নিয়ে লিখিত ভাবে উপরমহলে অভিযোগ জানাবেন বলে খবর। কারা দফতর সূত্রের খবর, শুধু মদন মিত্রের বেলাতেই নয়, এর আগে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত ওরফে নিতু সরকার সারদা মামলায় জেলে আসার পরে তাঁকেও বেআইনি সুযোগ-সুবিধে পাইয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ওই অফিসার। রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি এ দিন বিষয়টি শোনার পরে বলেন, “এমন অভিযোগ আমার কাছে এখনও আসেনি। তবে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

নিরাপত্তার কারণে প্রথম থেকেই আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষ মদন মিত্রকে ছ’নম্বর ওয়ার্ডে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যা জেলে মন্দির ওয়ার্ড নামেই বেশি পরিচিত। ওখানে রাধা-কৃষ্ণের মন্দির থাকলেও বাকি ওয়ার্ড অনেক দিন ধরেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি সেখানে বন্দি রাখার ব্যবস্থা করতে তা মেরামতির কাজ শুরু করেছিল কারা দফতর। এক কারা-কর্তার কথায়, “ওটাই এখন আলিপুরের সব চেয়ে পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড। সে কারণেই ওখানে মন্ত্রীকে রাখা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন