বীরভূমের লাভপুরে তিন সিপিএম সমর্থক ভাইকে সালিশি সভায় ডেকে এনে খুন করার ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট কলকাতা হাইকোর্ট। কেন তদন্তের এই বিলম্ব, কেনই বা এখনও চার্জশিট দেওয়া গেল না তা আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।
লাভপুরের ওই ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ৪ জুন। প্রায় চার বছর পুরনো ওই মামলার মূল অভিযুক্ত মনিরুল বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ঘটনার অন্য অভিযুক্তদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছিল। মামলার গতিপ্রকৃতি দেখে ক্ষুব্ধ বিচারপতি দত্ত পরবর্তী শুনানির সময়ে রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বীরভূমের বর্তমান পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এবং মূল অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম দু’জনেই কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে তিন জনকে মেরে ফেলার কথা প্রকাশ্য জনসভায় স্বীকারও করেছিলেন মনিরুল। নিহত তিন জনের ভাই সানোয়ার শেখ ওই খুনের তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন।
চার বছর আগে লাভপুরের নবগ্রামে মনিরুলের (তখন তিনি তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি) বাড়িতে সিপিএম সমর্থক তিন ভাইকে পিটিয়ে, বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় মনিরুল-সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। বহু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পরে ওই বছর অগস্টে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। জামিনে ছাড়া পেয়ে নির্বাচনে জিতে শাসক দলের বিধায়কও হন প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মনিরুল।
সানোয়ার শেখের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ঘটনার দিন মনিরুলের নেতৃত্বে ৫০ জনেরও বেশি সশস্ত্র মানুষ লাভপুরে সানোয়ার শেখদের বাড়িতে আসে। সেখানে তারা বলে, একটি জমির বিবাদকে কেন্দ্র করে সালিশি সভা হবে। চার ভাইকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় সালিশি সভায়। সুব্রতবাবুর অভিযোগ, কথাবার্তা চলার মাঝেই মনিরুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র মানুষেরা চার ভাইকে পেটাতে শুরু করে। ঘটনাস্থলেই দুই ভায়ের মৃত্যু হয়। অন্য এক ভাই হাসপাতালের পথে মারা যান। চতুর্থ ভাই দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে বেঁচে ফেরেন। সেই সময় পুলিশ ওই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মনিরুলদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করে। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ৪ বছর। এখনও মামলার শুনানি অথৈ জলে। কারণ, পুলিশ চার্জশিটই তৈরি করে উঠতে পারেনি। আদালতে সুব্রতবাবুর অভিযোগ, “সেই মনিরুল ইসলামই এখন এলাকার শাসক দলের বিধায়ক। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ সময় নষ্ট করছে। যার জেরে নষ্ট হচ্ছে তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্যও।”
গত পঞ্চায়েত ভোটে সাঁইথিয়ায় একটি জনসভায় প্রকাশ্যে বীরভূম জেলা কংগ্রেস নেতা সব্যসাচী (বাপি) দত্তের ‘মুন্ডু আদায়’ করার হুমকি দিয়েছিলেন ওই তৃণমূল বিধায়ক। সে দিন তিনি কেবল বাপি দত্তের ‘মুন্ডু আদায়’ করার কথা বলেই থামেননি। তিন জনকে পায়ের তলায় মেরে ফেলার কথাও প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেন।
ওই হুমকির পরেই বাপিবাবু সাঁইথিয়া থানায় বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন। পুলিশের কাছে জনসভার সিডি-ও জমা দেয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। উস্কানিমূলক বক্তৃতার অভিযোগ হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনেও। ওই মামলাটিরই বা কী অবস্থা, তা নিয়ে বীরভূমের কোনও পুলিশ কর্তাই অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।