বিপ্লবে সামিল হয়েছিলেন মহিলারাও। ছবি: পিপলস ওয়ার্ল্ড।
রুশ বিপ্লব যে অগণতান্ত্রিক, তা যে একটা সংখ্যালঘু দলের ষড়যন্ত্রমাত্র, এটা আজকাল স্বতঃসিদ্ধ হিসেবেই প্রায় ধরে নেওয়া হয়। অথচ ঐতিহাসিক তথ্য তা দেখায় না। যাঁরা অক্টোবরকে অগণতান্ত্রিক বলেন তাঁদের কয়েকটা মূল যুক্তি আছে। সেই কথার সংক্ষিপ্তসার মোটামুটি এইরকম— ১৯১৭-র ফেব্রুয়ারিতে একটি গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো রচিত হয়েছিল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাঁদের অভিসন্ধি কার্যকর হবে না বলে লেনিনের হুকুম মেনে বলশেভিকরা ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্র ধ্বংস করলেন। ১৯৩০-এর দশকে যে স্তালিনবাদী স্বৈরতন্ত্র দেখা দিল তা নতুন কিছু নয়। রুশ ইতিহাসবিদ ভলকোগোনভের মত তাঁরাও মনে করেন, লেনিন এবং ট্রটস্কি, তথা ১৯১৭-র বলশেভিক নেতৃত্ব, স্তালিনবাদী ব্যবস্থার প্রকৃত স্রষ্টাদের মধ্যে পড়েন। স্তালিনবাদ বর্জিত কোনও প্রকৃত বিপ্লবী মার্কসবাদী সম্ভব নয়, যে একাধারে গণতান্ত্রিক এবং বিপ্লবী, আর বিপ্লবী মার্কসবাদ ইউটোপীয় এবং তাকে বাস্তব রূপ দিতে হলে স্বৈরতন্ত্র অনিবার্য।
লেনিন তাঁর একদল নগণ্য সংখ্যক অনুচর একটি সুশৃঙ্খল রোবট-পার্টি নিয়ে ক্ষমতা দখল করলেন, এই দাবি ঠিক কি না তা যাচাই করার রাস্তা হল ১৯১৭ সালে বলশেভিক পার্টি কেমন ছিল, তার মতাদর্শ, তার দলীয় গণতন্ত্র কেমন ছিল, তার পর্যালোচনা। ফেব্রুয়ারিতে বলশেভিক পিটার্সবুর্গ কমিটি মনে করেছিল, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সাধারণ ধর্মঘটের চেষ্টা করা ভুল। সাধারণ ধর্মঘট ও বিপ্লবী সরকারের ডাক প্রথম দেয় ছোট একটি সংগঠন, মেঝরায়াঙ্কা (আন্তঃজেলা কমিটি )। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে ইতস্তত করলেও, অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্লিয়াপনিকভ বুর্জোয়া শ্রেণির তৈরী অস্থায়ী সরকারের বিরোধী ছিলেন। ভাইবর্গ এলাকার (রাজধানীর অন্যতম প্রধান শ্রমিক এলাকা) বলশেভিক কমিটি তো আরও আগেই সোভিয়েত গঠনে উদ্যোগী হয়।
কিন্তু ১২ মার্চ সাইবেরিয়া থেকে স্তালিন, কামেনেভ, মুরানভ— এই তিন নেতা ফেরার পর কেন্দ্রীয় কমিটি ও পার্টির মুখপত্র প্রাভদা ডাইনে মোড় নেয়। ৮ মার্চ কেন্দ্রীয় কমিটির রুশ ব্যুরোর প্রস্তাবে বলা হয়, সোভিয়েতকে সমর্থন করা উচিত, যাতে তা একটি অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার তৈরি করে। ২২ মার্চ, স্তালিন-কামেনেভের প্রভাবে, নতুন প্রস্তাবে সোভিয়েতকে আর ক্ষমতার কেন্দ্র হিসাবে দেখা হল না। বলা হল, ‘সোভিয়েতদের অস্থায়ী সরকার (বিদ্যমান বুর্জোয়া অস্থায়ী সরকার) ও তার প্রতিনিধিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে।’
ফিরে দেখা, ১৯১৭। ছবি: স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল।
অন্য দিকে, রাশিয়া ফেরার আগেই লেনিন যে চিঠিগুলি লেখেন, তাতে তিনি এই নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। একটি মাত্র চিঠি প্রাভদা-তে ছাপা হয়, তা-ও ছেঁটেকেটে। লেনিন ফেরার আগে মার্চ সম্মেলনে পার্টিতে তিনটি ধারা দেখা দেয়। ভইতিনস্কির নেতৃত্বে সবচেয়ে নরমপন্থীরা মনে করলেন, মেনশেভিকদের সঙ্গে ঐক্যের পথে কোনও বাধাই নেই। স্তালিন ও কামেনেভের নেতৃত্বে মধ্যপন্থীরা শর্তাধীনে ঐক্য চাইলেন। আর মলোটভ ও পিওতর জালুৎস্কির নেতৃত্বে একাংশ মেনশেভিকদের সঙ্গে ঐক্যের বিরোধিতা করলেন। লেনিন এসে তাঁর বিখ্যাত এপ্রিল থিসিস পেশ করলে দেখা গেল নেতাদের মধ্যে তিনি একা। ৭ এপ্রিল প্রাভদাতে তাঁর থিসিস ছাপা হয়, তাঁর ব্যক্তিগত মত বলে চিহ্নিত করে। পরদিন পত্রিকার পক্ষে কামেনেভ প্রবন্ধ লিখে লেনিনের মতের বিরোধিতা করেন। প্রায় এক মাস ধরে তীব্র বিতর্ক চলে। সপ্তম সারা রাশিয়া সম্মেলনে (২৪-২৯ এপ্রিল) লেনিনের প্রস্তাব পায় ৭১ ভোট, তার বিপক্ষে পড়ে ৩৯ ভোট এবং ৮ জন ভোটদান থেকে বিরত থাকেন।
মতভেদের অধিকার শুধু নেতাদের মধ্যে থাকত না। জুন মাসে, অস্থায়ী সরকারের অবসান দাবি করে একটি মিছিল ডাকা হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় কমিটি, পিটার্সবুর্গ কমিটি, সামরিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কমিটি এবং ট্রেড ইউনিয়ন সেল ও ফ্যাক্টরি কমিটি সেলের প্রতিনিধিদের সম্মিলিত সভা। বিশেষ পরিস্থিতিতে যখন কেন্দ্রীয় কমিটি পরে মিছিল স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়, তখন পার্টির বিভিন্ন কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটিকে নিন্দা করে প্রস্তাব নেয় এবং লেনিন স্বীকার করেন, তাঁদের তা করার অধিকার রয়েছে।
১৯১৭ সালে বলশেভিক পার্টির সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ে। ফেব্রুয়ারিতে সদস্যসংখ্যা ছিল আনুমানিক ২৩,৬০০। এপ্রিল সম্মেলনে তা বেড়ে হয় ৮০,০০০ এবং ষষ্ঠ কংগ্রেসে ২,৪০,০০০। ব্যাপক সংখ্যক জঙ্গি শ্রমিক পার্টিতে আসেন। তাঁদের উপর রাতারাতি কঠোর শৃঙ্খলা চাপানো হবে এবং গণতান্ত্রিক বাতাবরণের অস্তিত্ব সত্ত্বেও তাঁরা সেটা নীরবে মেনে নেবেন, এটা অসম্ভব ছিল। এই রকম একটি দল, যা প্রতি দিন নতুন জঙ্গি শ্রমিকদের টেনে নিচ্ছে, তার পক্ষে গোপন, ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি করাই অসম্ভব ছিল।
সোভিয়েত ও বলশেভিক দল
লেনিন তাঁর এপ্রিল থিসিসে বলেন, ‘এখন, শ্রমিক প্রতিনিধি পরিষদ থেকে পার্লামেণ্টারি সাধারণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া হবে পিছু হঠা।’ অর্থাৎ, তাঁর ঘোষিত বক্তব্য হল, পরিষদীয় (সোভিয়েত) গণতন্ত্র সংসদীয় গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নত, তাই সেটাই চাই। এপ্রিল মাসে, পার্টির পেত্রোগ্রাদ নগর সম্মেলনে তিনি বলেন, রাশিয়াতে এখন এতটা স্বাধীনতা রয়েছে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া ক্ষমতা দখল করা যায় না। বলশেভিকরা সংখ্যালঘু। সংখ্যাগরিষ্ঠের উদ্যোগ ছাড়া ক্ষমতা দখল সম্ভব নয়। পার্টির কাজ সোভিয়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে নিজের মতে টেনে আনা।
শ্রমিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন লেনিন।
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর থেকেই শ্রমিক আর সৈনিকদের দাবি ছিল, যুদ্ধের অবসান চাই। বুর্জোয়া অস্থায়ী সরকার তাতে রাজি ছিল না। ১৮ এপ্রিল, বিদেশমন্ত্রী পাভেল মিলিউকভ মিত্রশক্তিকে জানান, রাশিয়ার জারতন্ত্রী সরকারের যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি ও চুক্তিগুলি থেকে অস্থায়ী সরকার পিছু হঠবে না। এই চুক্তিগুলিতে রাশিয়ার পাওনা ছিল কনস্ট্যান্টিনোপল-সহ বিভিন্ন এলাকা দখলের অধিকার। এই খবর জানার ফলে জনগণ অস্ত্র হাতে পথে বেরিয়ে আসে। ধর্মঘট শুরু হয়। পরদিন, বলশেভিক দলের পিটার্সবুর্গ কমিটি আর এক দফা মিছিলের ডাক দেয়। তাদের দাবি ছিল, ‘অস্থায়ী সরকার নিপাত যাক।’ কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে, সোভিয়েতের মধ্যে এই দাবি তোলা যায়, সোভিয়েত সরকার গড়ার কথা বলা যায়, কিন্তু অস্ত্র হাতে পথে বেরোনো যায় না। বোঝা যায়, বলশেভিকদের মধ্যে মতভেদ কাজেও প্রতিফলিত হচ্ছিল এবং এ কথাও বোঝা যায় যে লেনিন ও তাঁর সমর্থকেরা সংখ্যালঘু অভ্যুত্থানের বিরোধী ছিলেন।
কিন্তু সব সময়ে বলশেভিকদের পক্ষেও অসন্তোষ ঠেকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ল। জুলাই মাসের গোড়ায় প্রথম মেশিনগান রেজিমেন্টের বিদ্রোহীরা এবং পার্টির সামরিক সংগঠন ও পিটার্সবুর্গ কমিটি সশস্ত্র মিছিলের ডাক দেয়। ট্রটস্কি পরে লেখেন, ৩ জুলাই রাতে বলশেভিক ও মেঝরায়ঙ্কা নেতৃত্বের যৌথ সভা হয়, ষড়যন্ত্রমূলক অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যে নয়, বরং মিছিল আটকানো হবে না তাকে সুশৃঙ্খল রূপ দেওয়ার জন্য তার শীর্ষে থাকতে হবে, সেই আলোচনার জন্য। কিন্তু রিপোর্ট আসতে থাকে, ভাইবর্গের শ্রমিক, ক্রোনস্তাদের নাবিক, সকলেই তাতে যোগ দেবেন। লেনিন পরে লিখেছিলেন, ওই পরিস্থিতিতে স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলনকে সমর্থন করতে অস্বীকার করার অর্থ হত প্রলেতারিয়েতের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা।
মেনশেভিক-এস আর নেতৃত্ব বিদ্রোহী শ্রমিক ও সৈনিকদের ঠেকাতে কসাক ফৌজ ডাকেন, বিদ্রোহী জনতাকে ‘প্রতিবিপ্লবী’ আখ্যা দেন আর লেনিন সম্পর্কে বুর্জোয়া সংবাদপত্রগুলিতে এবং সৈনিকদের একাংশের কাছে প্রচার করা হয় যে লেনিন জার্মানির চর, তাঁকে তথা বলশেভিক দলকে জার্মান সরকার টাকা পাঠায়। খুন করা হয় এক বলশেভিক কর্মীকে। গ্রেফতার হন ট্রটস্কি-সহ বহু বলশেভিক নেতা। আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন লেনিন। বলশেভিকরা এই প্রথম সিদ্ধান্ত নিলেন যে অভ্যুত্থান ছাড়া ক্ষমতা দখল হবে না, কারণ ফেব্রুয়ারি যে গণতান্ত্রিক বাতাবরণ এনেছিল, তাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তবু, আমরা দেখব, সেই কাজও করা হয় সোভিয়েতের মাধ্যমেই।
তাঁরা কি শ্রমিকশ্রেণিকে নিছক ‘ব্যবহার করতে’ চেয়েছিলেন? অর্থাৎ শ্রেণিকে উসকানি দিয়ে তাঁরা একক ক্ষমতা চেয়েছিলেন কি? এর উত্তরে শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকার পর্যালোচনা করতে হয়। ১৯১৭-র ফেব্রুয়ারি থেকে রুশ শ্রমিকশ্রেণি ও অন্য শ্রমজীবীরা যেমন নানা প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত হচ্ছিলেন, তেমনই, সব রকম প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও হাজির ছিল। সোভিয়েত ও ফ্যাক্টরি কাউন্সিল শ্রমিকের সংগঠন এবং বলশেভিকরা শ্রমিকশ্রেণির– বহির্ভূত, এই দাবি অর্থহীন। ডায়েন কোয়েনকার ও উইলিয়াম রোসেনবার্গ, এক বিপুল সংখ্যক ধর্মঘটের বিশ্লেষণ করে এই ধর্মঘটগুলির সঙ্গে রাজনৈতিক স্তরে লড়াইয়ের একটা সম্পর্ক দেখাতে চেয়েছেন। গবেষক মাইকেল মেলাসঁ রুশ বিপ্লবের মহাফেজখানা থেকে একটি ফাইল পেয়েছেন, যাতে এপ্রিল থেকে অক্টোবর, কেন্দ্রীয় সোভিয়েত নেতৃত্বের কাছে পাঠানো স্থানীয় সোভিয়েতদের প্রস্তাবসমূহ রয়েছে। এমন শত শত প্রস্তাব থেকে একটি ছবি স্পষ্ট ফুটে ওঠে। তা হল অক্টোবরের মধ্যে, এমনকী, যে সব সোভিয়েত তখনও মেনশেভিক নেতৃত্বাধীন কার্যনির্বাহী সমিতির সঙ্গে চিঠিপত্র লিখছে, তাদেরও বৃহদংশ সোভিয়েতদের কাছে দায়বদ্ধ সমাজতন্ত্রী সরকারের জন্যই লড়াই করছিল।
মস্কোর একটি সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন লেনিন। ছবি: গেটি ইমেজেস।
১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে কমপক্ষে ১২ লক্ষ শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করেন। অন্য দিকে, লড়াইয়ের চরিত্র পাল্টাচ্ছিল। অগস্ট-সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে মাইনের দাবিতে ধর্মঘটের সাফল্যের হার কমছিল। অর্থাৎ বুর্জোয়া কাঠামোর মধ্যে যে সব দাবি, মালিকরা সেগুলিকে বেশি বেশি করে অগ্রাহ্য করছিল।
অন্য দিকে, ফ্যাক্টরি কাউন্সিলগুলির প্রভাব বাড়ে, উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের লড়াই বাড়ে। শ্রমিকরা শুধু জারের পতনে খুশি হননি। তাঁরা ৮ ঘণ্টার শ্রমদিবস, ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক ও প্রশাসনের সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণ, শোষণের মাত্রা হ্রাস এবং ন্যূনতম অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যান। শ্রমিকের কাছে সংবিধান শুধু ভোটের অধিকারের প্রশ্ন ছিল না। তাঁরা যখন সংবিধানসম্মত ফ্যাক্টরির দাবি তোলেন, তখন তাঁরা মনে করেন, সমাজে শ্রমিকের পরিস্থিতি ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য ফোরম্যান ও ম্যানেজারদের স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার বিলুপ্তি ছিল আবশ্যক। এই গণতন্ত্রীকরণের লড়াই ছিল তীব্র। এর অঙ্গ ছিল ফ্যাক্টরি কমিটি গঠন। বলশেভিক-বিরোধী ইতিহাসবিদরা যখন বলেন, ফ্যাক্টরি কাউন্সিল আন্দোলন বলশেভিকরা সৃষ্টি করেননি, তাঁরা ঠিকই বলেন। স্তালিন রচিত সেই অপূর্ব রচনা, হিস্ট্রি অফ দ্য সি পি এস ইউ (বি)- শর্ট কোর্স ও তার পরের যুগের আমলাতান্ত্রিক অনুকরণগুলি ছাড়া, এমন দাবি কোথাও নেই যে গোটা লড়াইটা একক ভাবে বলশেভিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে ঘটেছিল। কোনও দল একক চেষ্টায় একটি দেশব্যাপী লড়াইয়ের পূর্ণরূপ দেবে, তা হয়ও না। কিন্তু ওই আন্দোলন নৈরাষ্ট্রবাদীদের নেতৃত্ব ছিল, এই দাবি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। ১ জুন, ফ্যাক্টরি কমিটিদের প্রথম পেত্রোগ্রাদ সম্মেলনে বলশেভিকরা প্রস্তাব আনেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রতিষ্ঠান স্তরে এবং জাতীয় স্তরে একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার এবং সেই সঙ্গে দরকার সোভিয়েতদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্পণের। বলশেভিকদের আনা প্রস্তাবটি পায় ২৯৭ ভোট, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশের সামান্য বেশি। নৈরাষ্ট্রবাদীদের প্রস্তাব পায় ৪৫ ভোট, মেনশেভিক প্রস্তাব ৮৫ ভোট।
ক্ষমতা দখল পর্যন্ত, এমনকী তার পরেও, বলশেভিকদের এ বিষয়ে দলগত ভাবে কোনও ঐক্যবদ্ধ মত ছিল না। শ্রমিকশ্রেণি এই প্রশ্নে বিভক্ত ছিল, বলশেভিক দলও তাই। কেউই ভাবেনি রাতারাতি সব জাতীয়করণ করতে হবে। এমনকী, ১৯১৮-র মার্চ পর্যন্ত যত ফ্যাক্টরি জাতীয়করণ হয়, তার ৯৪ শতাংশ হয়েছিল স্থানীয় উদ্যোগে। এই পরিস্থিতি পাল্টেছিল গৃহযুদ্ধের ফলে। যে ইতিহাসবিদরা দাবি করেন, শ্রমিকদের ঠকিয়ে বলশেভিকরা পার্টি স্বৈরতন্ত্র কায়েম করল, তাঁরা ওই গৃহযুদ্ধের ভয়াবহ বাস্তবতার কথাটুকু ভুলিয়ে দিতে চান।
সোভিয়েত কংগ্রেস ও অভ্যুত্থানের রাজনীতি
অস্থিতিশীল দ্বৈত ক্ষমতা, হয় বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্র অথবা সোভিয়েত রাজ, এই দুই বিকল্পের যে কোনও একদিকে যেতে বাধ্য ছিল। যাঁরা মনে করেন বা দাবি করেন যে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ‘বলশেভিকরা কলুষিত করেছিল’ তাঁরা বুর্জোয়া শ্রেণির রণনীতি কী ছিল তা দেখান না। ৩-৪ জুলাইয়ের ঘটনার পর মিথ্যা দলিলে প্রচার করা হয় যে লেনিন জার্মান চর। ট্রটস্কি, রাসকোলনিকভ ও অন্যদের গ্রেফতার করা, বিশেষ ‘অ্যাকশন স্কোয়াড’ তৈরি শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে কেরেনস্কি ও কর্নিলভ হাত মেলান। মার্চ মাসেই শিল্পপতি পুতিলভ নেতৃস্থানীয় ধনিকদের এক গোপন কমিটি তৈরি করেন। সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়।
এই অবস্থায়, গণতান্ত্রিকতা বলশেভিকরাই দেখিয়েছিলেন। কর্নিলভের যড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর আরও এক বার সুযোগ আসে, বিনা যুদ্ধে সোভিয়েত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার। তখনও, সোভিয়েতদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে মেনশেভিক ও সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারিরা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, সোভিয়েত-ভিত্তিক সমাজতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠা করা হলে তাঁরা শান্তিপূর্ণ প্রচারে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখবেন। কিন্তু ওই দুই দল এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে।
৩১ অগস্ট-১ সেপ্টেম্বর রাতে পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতে বলশেভিকদের আনা প্রস্তাব যে অস্থায়ী সরকার নয়, সোভিয়েত হোক ক্ষমতার কেন্দ্র, ২৭৯-১১৫ ভোটে গৃহীত হল। ৯ সেপ্টেম্বর বলশেভিকরা ৫১৯-৪১৪ (৬৭ ভোটদানে বিরত) জয়ী হলেন সোভিয়েতের নতুন সভাপতিমণ্ডলী নির্বাচনে। ৬ সেপ্টেম্বর মস্কো সোভিয়েত অস্থায়ী সরকার ও কেন্দ্রীয় সোভিয়েত কার্যনির্বাহী কমিটিকে নিন্দা করে ৩৫৫-২৫৪ ভোটে প্রস্তাব পাশ করে। সেপ্টেম্বর ধরে কিয়েভ সোভিয়েতে, সারাতোভ প্রাদেশিক সোভিয়েতে, ক্রোনস্তাদে, রেভাল, দোরপাত, ওয়েনডেন, তালিন সর্বত্র বলশেভিক-বামপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারি জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।
পেত্রোগ্রাদের রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা।ছবি:গেটি ইমেজেস।
এই পরিস্থিতিতে, পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েত ট্রটস্কির প্রস্তাব গ্রহণ করল যে, প্রথম সোভিয়েত কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন মাস পরে পরে সোভিয়েত কংগ্রেস ডাকতে হবে। মেনশেভিক এবং দক্ষিণপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারিরা সোভিয়েত কংগ্রেস আটকাবার চেষ্টা করেন। অনেকগুলি আঞ্চলিক কংগ্রেসে সোভিয়েত কর্তৃক ক্ষমতা দখলের দাবি ওঠে— মস্কো, সাইবেরিয়া, বিয়েলোরুশিয়া, উত্তর ককেশাস, ভ্লাদিমির ও তভার এবং উত্তরাঞ্চলের সোভিয়েত কংগ্রেসে (পেত্রোগ্রাদ, মস্কো, আর্কেঞ্জেল, রেভাল, হেলসিংফোরস, ক্রোনস্তাদ, ভাইবর্গ, নারভা, গ্যাটচিনা, জারস্কোয়ে সেলো, বাল্টিক নৌবহর, পেত্রোগ্রাদ কৃষক সোভিয়েত এবং উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও রুমানীয় ফ্রন্টের সোভিয়েতদের যৌথ সম্মেলন)। এর পিছনে ছিল বলশেভিকদের দাবি— শান্তি চাই, কৃষকের হাতে জমি চাই, আর সকলের জন্য খাদ্য চাই। অন্য দিকে ‘গণতান্ত্রিক সম্মেলন’ নাম দিয়ে যে সম্মেলন ডেকে নরমপন্থীরা নিজেদের জন্য নতুন ভিত তৈরি করতে চান, তা ছিল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। বলশেভিকদের তীব্র সমালোচক, মার্ক ফেরোকেও বলতে হয়েছে, এই সম্মেলনে প্রকৃত সংখ্যাগত শক্তির প্রতিনিধি ছিল না। ১২৫০ জন প্রতিনিধির মধ্যে সোভিয়েতরা পেল ৪৬০টি আসন, সমবায় কর্মকর্তারা ১৬১টি, আর জারের যুগের জেমস্তভোরা ২০০ ও পৌরসভারা ৩০০। এই সম্মেলন যে ‘প্রাক-পার্লামেন্ট’ বা ‘সাধারণতন্ত্রের পরিষদ’ তৈরি করল, তাতে উচ্চশ্রেণিদের জন্য আসন সংরক্ষণ করে তাদের প্রাধান্য বাড়ানো হল। লেনিন একে ‘প্রতিবিপ্লবের পরিষদ’ আখ্যা দেন। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী কেরেনস্কি ঘোষণা করেন, তিনি এদের পরামর্শ শুনবেন কিন্তু তাঁর উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ মানবেন না।
এই অবস্থায় বলশেভিকরা সোভিয়েতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেন। লেনিন তখন আত্মগোপন করে ছিলেন এবং রাজধানী-সহ বড় শহরগুলিতে ও সেনাবাহিনীতে বুর্জোয়া সরকার বিরোধী মত কত তীব্র তা বোঝেননি। তাঁর চিঠি ও প্রবন্ধ পড়লে দেখা যায়, তিনি মনে করছিলেন দেশ জুড়ে অভ্যুত্থান করে তবে ক্ষমতা দখল করতে হবে। বাস্তবে, ৯ সেপ্টেম্বরের পর পেত্রোগ্রাদে বলশেভিকরা শুধু শ্রমিক শ্রেণি না, গোটা সেনাবাহিনীর উপর সোভিয়েতের প্রভাব এতটাই বাড়াতে পেরেছিলেন যে ট্রটস্কি ও সভের্দলভ কার্যত শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা দখলের দিকে এগোন।
প্রথম কংগ্রেসের চেয়ে দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রতিনিধি সংখ্যা কিছুটা কম ছিল এবং তাঁর এক প্রধান কারণ পুরনো নেতৃত্ব এই কংগ্রেসের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু দেশের প্রায় সমস্ত জনবহুল এলাকা থেকে প্রতিনিধি এসেছিলেন। অর্থাত্, বড় শিল্পাঞ্চল, সেনাবাহিনী, এরা সবাই হাজির ছিল। উপস্থিত আনুমানিক ৬৫০ প্রতিনিধির মধ্যে ৩৯০ জন ছিলেন বলশেভিক সমর্থক, এবং ১৭৯ – ৮০ জন অভ্যুখানের সমর্থক বামপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারি। কিছু দক্ষিণপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারি ও মেনশেভিক প্রতিনিধি আসেননি ধরে নিয়েও বোঝা যায়, প্রতিনিধিত্ব বাড়লে ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত একই থাকত। উপরন্তু, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দু’টি কৃষক সোভিয়েত কংগ্রেস প্রাধান্য দেয় বামপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারিদের এবং বলশেভিকদের। এই সময়ে বামপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারিরা গণকমিশার পরিষদে (সোভিয়েতের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারে) সঙ্গী ছিলেন।
এর পরেও যে প্রচার রয়েছে, খুব সংক্ষেপে কয়েকটির দিকে তাকানো যাক।
প্রচার ১: লেনিন পার্টির হাতে ক্ষমতা চেয়েছিলেন।
উত্তর: এ প্রচার অবান্তর। একটি বিশেষ প্রসঙ্গে লেনিন বলেছিলেন, সোভিয়েত কংগ্রেসদের জন্য অপেক্ষা না করে পার্টির উচিত অভ্যুত্থানের ডাক দেওয়া। তাঁর এই মত ভুল ছিল, কারণ সোভিয়েতকে এড়িয়ে পার্টি ডাক দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পথে বেরিয়ে আসত না। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি এ ক্ষেত্রে লেনিনের মতকে অগ্রাহ্য করেছিল। যে প্রস্তাব গৃহীত হল না, সেটাই আসল নীতি, এ কেমন কথা? বাস্তবে, যে পন্থা গৃহীত হল তার স্রষ্টা ছিলেন ট্রটস্কি ও সভের্দলভ। পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের সভাপতি হিসেবে ট্রটস্কি সোভিয়েত ক্ষমতাকে ব্যবহার করে সোভিয়েতের নামেই অভ্যুত্থান সংগঠিত করেন। দ্বিতীয় সোভিয়েত কংগ্রেস বসবে কার তত্ত্বাবধানে— কেরেনস্কি না শ্রমিকশ্রেণি? এই প্রশ্ন তুলে সেনাবাহিনীকে জয় করে তিনি অভ্যুত্থানের ভিত্তি রচনা করেন।
প্রচার ২: অভ্যুত্থান সোভিয়েত করেনি, করেছিল হঠাত্ গজিয়ে ওঠা সামরিক বিপ্লবী কমিটি।
উত্তর: পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের সভায় গণতান্ত্রিক ভাবে স্থির হয়েছিল, প্রতিবিপ্লবী বিপদের মোকাবিলা করার জন্য একটি সামরিক বিপ্লবী কমিটি তৈরি হবে। সুতরাং, ওই কমিটি সোভিয়েতেরই কমিটি। এই কমিটিকে রাজধানী রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিটির সভাপতি হন বামপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারি লাজিমির। পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের প্রতিনিধিদের ছাড়াও এতে টানা হয় নৌবাহিনী, ট্রেড ইউনিয়ন, ফ্যাক্টরি কমিটি, লাল রক্ষীবাহিনী ও ফিনল্যান্ডের আঞ্চলিক কমিটির প্রতিনিধিদের। মেনশেভিক ও দক্ষিণপন্থী এস আর-রা এই সব পথে এবং দলীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে, নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখাতে পারতেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় তা করেননি। যদি এই কমিটিকে ষড়ষন্ত্রের সদর দফতর করারই পরিকল্পনা থাকত তা হলে কি এতটা গণভিত্তি রাখা হত না মেনশেভিকদের জন্য জায়গা ছাড়া হত?
প্রচার ৩: বলশেভিকরা সংবিধান সভা ভেঙে দিয়ে গণতন্ত্র লঙ্ঘন করেছিলেন।
এর উত্তর সংক্ষিপ্ত পরিসরে দেওয়া কঠিন। তবু বলা যায়, সোভিয়েত পার্লামেন্টের চেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক, এই তত্ত্বগত অবস্থান এপ্রিল থেকেই লেনিন বলে আসছিলেন। দ্বিতীয়ত, অক্টোবর অভ্যুত্থানের পরেই পুরনো সেনাপতিরা, বুর্জোয়া নায়করা, সবাই মিলে সামরিক প্রতি আক্রমণের যে চেষ্টা করেন, মেনশেভিক এবং দক্ষিণপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারিরা তাঁর সঙ্গে হাত মেলান। গৃহযুদ্ধ শুরু হলেও, বৃহত্তম অ-বলশেভিক বাম দল, দক্ষিণপন্থী সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারিরা হাত মেলান জারের জেনেরালদের সঙ্গে, সাহায্য নেন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আরও বহু দেশের।
সোভিয়েত গণতন্ত্র বেশি দিন বাঁচেনি। কিন্তু তার মূল কারণ সশস্ত্র গৃহযুদ্ধ যেটা শুরু হয়েছিল রাশিয়ার আগে ফিনল্যান্ডে, যেখানে নির্বাচিত ‘লাল’ সরকারকে ফেলে দেওয়া হয় এবং তারপর জার্মান ফৌজি সাহায্যে ২০,০০০-এর বেশি ‘লাল’ সমর্থককে হত্যা করা হয়। রাশিয়াতে তখনও কিছুই হয়নি। আর বিনা ক্ষতিপূরণে সামন্ততান্ত্রিক জমি দখল ও কৃষকের মধ্যে বণ্টন, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও যুদ্ধ বন্ধ করা, এই পদক্ষেপগুলি ছিল দেশের ব্যাপক মানুষের দাবি মানা, অর্থাৎ বাস্তবে গণতান্ত্রিকতা দেখানো।
১৯১৮ সালে, রোজা লুক্সেমবুর্গ তাঁর সমালোচনা-সহ সমর্থনমূলক প্রবন্ধে বলশেভিকদের ও রুশ বিপ্লবের সমস্যাটা স্পষ্ট তুলে ধরেছিলেন। ‘রুশ বিপ্লবের ভাগ্য নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির উপর... জার্মান সরকারি সমাজতন্ত্রীরা চিৎকার করুক যে রাশিয়াতে বলশেভিকদের শাসন হল শ্রমিক শ্রেণির শাসনের বিকৃত অভিব্যক্তি। তা যদি হয়ে থাকে, তবে তার কারণ হল জার্মান প্রলেতারিয়েতের ব্যবহার, যা আবার সমাজতান্ত্রিক শ্রেণি সংগ্রামের বিকৃত প্রকাশ। কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক ভাবেই সমাজের সমাজতান্ত্রিক সংগঠন গড়ে তোলা সম্ভব।’ সেই দায়িত্বটা একা বলশেভিকদের ছিল না, কিন্তু লুক্সেমবুর্গের ভাষায়, লেনিন এবং ট্রটস্কি এবং তাঁদের বন্ধুরা ছিলেন প্রথম, যাঁরা পৃথিবীর শ্রমিকদের কাছে নজির হিসেবে এগিয়ে গিয়েছিলেন।