ক্যালিফোর্নিয়ায় নিহত ১৪

পার্টিতে হামলা বন্দুকবাজ দম্পতির

উৎসবের মরসুমে অফিসে বড়সড় একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অভ্যাগতের সংখ্যা প্রায় ৫০০। অনেকের সঙ্গে সেখানে ছিল সইদ রিজওয়ান ফারুকও। পাঁচ বছর ধরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করছে সে। নরম, ভদ্র স্বভাবের যুবকটিকে সবাই বেশ পছন্দ করত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সান ফ্রান্সিসকো শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৩৮
Share:

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলার পরে পুলিশের নজরদারি। ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনোয়। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স।

উৎসবের মরসুমে অফিসে বড়সড় একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অভ্যাগতের সংখ্যা প্রায় ৫০০। অনেকের সঙ্গে সেখানে ছিল সইদ রিজওয়ান ফারুকও। পাঁচ বছর ধরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করছে সে। নরম, ভদ্র স্বভাবের যুবকটিকে সবাই বেশ পছন্দ করত। গ্রুপ ছবি তোলার সময় হঠাৎ বেপাত্তা হয়ে যায় ফারুক। ফিরে এল একটু পরেই। হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। সঙ্গে স্ত্রী। তার হাতেও বন্দুক।

Advertisement

বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনোর ‘ইনল্যান্ড রিজিওনাল সেন্টার’ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই হামলায় অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ২১। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গুরুতর জখম দুই পুলিশ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৭৫ রাউন্ডেরও বেশি গুলি চালিয়ে একটা কালো বড় গাড়ি চেপে পালাতে যায় তারা। কিন্তু তাড়া করে ধরে ফেলে পুলিশ। ফারুকদের সঙ্গে পুলিশের বেশ কিছু ক্ষণ গুলির লড়াই হয়। পুলিশের গুলিতে মারা যায় ফারুক (২৮) এবং তার স্ত্রী তাশফিন মালিক (২৭)। আরও এক সন্দেহভাজনকে পুলিশ আটক করেছে। তবে তার পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

অনুষ্ঠানের মধ্যে হঠাৎ ঢুকে পড়ে যখন গুলি চালাতে শুরু করে ফারুক ও তার স্ত্রী, তখন তাদের কেউ-ই চিনতে পারেনি। কারণ, দু’জনেরই পরনে ছিল হামলাকারীর কালো পোশাক, মুখ ঢাকা স্কি-মাস্কে। পরে বন্দুকবাজদের পরিচয় জানা গেলে খুবই আশ্চর্য হন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা। কারণ ফারুক অত্যন্ত নম্র স্বভাবের ছেলে বলে পরিচিত ছিল। মাস ছয়েক আগে স্ত্রীর সন্তান হওয়ার সময় পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিল সে। তখন তার জন্য পার্টির আয়োজনও করেছিলেন সহকর্মীরা। অফিসে কোনও দিন কোনও ধর্মীয় উস্কানিমূলক কথা বলেনি সে।

Advertisement

ফারুক-তাশফিনের এই হামলায় বিস্মিত তাদের নিকটাত্মীয়েরাও। হামলার একটু আগে তাদের ছ’মাসের মেয়েকে তার ঠাকুমার কাছে দিয়ে আসে তাশফিন। বলে, তারা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে ফারুকদের নাম প্রকাশ্যে আসার পরেই তড়িঘড়ি একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন তাশফিনের ভাই ফারহান। তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে ফারুকের সঙ্গে ফেসবুকে শেষ কথা হয়েছিল তাঁর। বোন আর ভগ্নিপতি কেন এমন করল, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না ফারহান। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের কী উদ্দেশ্য ছিল, আমি জানি না। শুধু এইটুকু বলতে পারি যে, এই ঘটনার পরে আমি আর পরিবারের সকলে হতভম্ব!’’ আক্রান্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, ফারুকদের গাড়ি থেকে তিন ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে খেলনা গাড়ি আর রিমোটও। ফারুকদের কাছে চারটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তার মধ্যে দু’টির বৈধ লাইসেন্স থাকলেও অন্য দু’টির ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে। জানা গিয়েছে, তাশফিন জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক হলেও সে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। ফারুকের সঙ্গে তার অনলাইনে আলাপ হয়েছিল। সৌদি আরবে তাদের বিয়ে হয়।

আরও পড়ুন, নিছক বন্দুকবাজের হামলা? সংশয়ে মার্কিন প্রশাসনই

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিছু বিস্ফোরক রেখে গিয়েছিল ফারুকরা। তা ছাড়া, তাদের বাড়িতে গিয়ে প্রচুর বিস্ফোরক ও গোলাগুলি পেয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এই ধরনের বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে আল কায়দার শাখা সংগঠনগুলো। ফলে সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা আদপেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। কোনও জঙ্গি সংগঠন অবশ্য এখনও ফারুকদের নিজেদের সদস্য বলে দাবি করেনি।

গত শনিবারই কলোরা়ডোর একটি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে বন্দুকবাজের হামলায় মৃত্যু হয়েছিল চার জনের। তার চার দিনের মাথায় ফের এই ঘটনা কপালে ভাঁজ ফেলেছে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারও। এর আগেও একের পর বন্দুকবাজের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। দেশে কঠোর বন্দুক আইন আনার সপক্ষেও বরাবর গলা চড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ২০১২ সালে কানেক্টিকাটের একটি স্কুলে বন্দুকবাজের হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২৮ জনের। তার পর আমেরিকায় এই ধরনের ছোটখাটো হামলা প্রায়শই ঘটেছে। সান বার্নার্দিনোয় হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওবামা আজ বলেন, ‘‘এটাকে কোনও সাধারণ ঘটনা বলে মনে করাটা বোধহয় ঠিক হবে না। এর পেছনে সন্ত্রাসবাদীদের হাত থাকতেই পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন