তাঁর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ৭৯। এর মধ্যে দেশদ্রোহিতার মামলা ১৭টি। আর মানহানির মামলা ৬২টি। তিনি মাহফুজ আনম, বাংলাদেশের প্রথম সারির ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর সম্পাদক। বাংলাদেশের ৫৩টি জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির টাকার পরিমাণ কত? বাংলাদেশি ১,৩২,৮১১.৫৫ কোটি টাকা! এই গোষ্ঠীরই বাংলা সংবাদপত্র হল ‘প্রথম আলো’। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও এই ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ থেকে বিবিসি, এই সংক্রান্ত যে সব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার মূল সুরটিই সমালোচনার তারে বাঁধা।
প্রায় সিকি শতক আগে বাংলাদেশ যখন সামরিক শাসনের অবসানের পরে সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে ফিরল, সেই সময়েই জন্ম হয় ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর।
কেন মাহফুজ আনমের বিরুদ্ধে এত মামলা? এমনকী, তাঁকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ তকমা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে?
ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাহফুজ আনম স্বীকার করেন, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতি’ সংক্রান্ত এমন কয়েকটি রিপোর্ট তাঁর কাগজে প্রকাশিত হয় যেগুলি তৎকালীন সামরিক শাসকদের সূত্রে এসেছিল এবং তার সত্যতা যাচাই না করেই সেগুলি ছেপে দেওয়া হয়। এরই পাশাপাশি মাহফুজ স্বীকার করেন, ওই প্রতিবেদনগুলি প্রকাশ করাটা তাঁর ভুল সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত ছিল। তাঁর কথায়: ‘‘দ্বিধাহীন ভাবে আমি এই ভুল স্বীকার করছি।’’
এই সাক্ষাৎকারের পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সাজীব ওয়াজেদ অভিযোগ আনেন, আনম এবং ‘দ্য ডেইলি স্টার’ তাঁর মাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ওই রিপোর্টগুলি প্রকাশ করেছিলেন। শেখ হাসিনা পুত্রের অভিযোগ, মাহফুজ ‘আদ্যন্ত নীতিহীন’। যদিও সে সময়ে বাংলাদেশের দু’-একটি সংবাদমাধ্যম বাদে বেশির ভাগ সংবাদপত্রেই ওই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তবে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছেন মাহফুজ। তাঁর বক্তব্য, সামরিক শাসনের সময়ে অন্তত ২০৩টি সম্পাদকীয়ে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছিল। এমনকী, দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনার গ্রেফতারির বিরুদ্ধে তাঁর কাগজ সরব হয়েছিল। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন, ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর বিরুদ্ধে কোনও প্রচার চালানো হচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, মাহফুজের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগই ব্যক্তিবিশেষের আনা। এর সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।