সময় যত গড়াচ্ছে, আশা ততই কমছে। তবু হাল ছাড়তে রাজি নন উদ্ধারকারীরা। ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে এখনও প্রাণের স্পন্দন খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। আর তাঁদের এই প্রচেষ্টার ফলও মিলেছে হাতেনাতে।
মধ্য ইতালির পার্বত্য অঞ্চলে গত কাল ভোর রাতের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা আড়াইশো ছুঁই ছুঁই। কিন্তু ভূমিকম্পের প্রায় ১৭ ঘণ্টা পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে একটি ছোট্ট মেয়েকে। পেসকারা দেল ত্রন্তো শহরের ঘটনা। স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে, কাল রাতে ফ্লাড লাইটেই চলছিল উদ্ধার কাজ। হঠাৎই এক জায়গা থেকে গোঙানির শব্দ পান এক উদ্ধারকারী। তাঁর কথায়, ‘‘চারদিকে তখন প্রচুর আওয়াজ। সবাই ব্যস্ত। ধ্বংসস্তূপ থেকে কোনও জীবিতকে উদ্ধার করা যায় কি না, তার চেষ্টায় ছিলাম আমরা সবাই। তখনই একটা হাল্কা শব্দ কানে আসে। সবাইকে চুপ করতে বলি। কিছুটা এগিয়ে বালি আর সিমেন্টের চাঙড় সরিয়ে একটা ছোট খালি পা দেখতে পাই। নড়ছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে ওকে টেনে বার করি।’’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ছোট্ট মেয়েটির নাম জর্জিয়া রিনাল্ডি। জর্জিয়ার শরীরের প্রায় উপর থেকেই উদ্ধার হয়েছে তার দিদি গিলিয়ার নিথর দেহ। উদ্ধারকারীরা মনে করছেন, বোনকে বাঁচাতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছে বছর আটেকের গিলিয়া।
রিনাল্ডি পরিবারের লোকজনও একই কথা জানিয়েছেন। জর্জিয়ার পিসি ফ্রাঞ্চেস্কা সিরিয়ান্নির কথায়, ‘‘প্রবল কাঁপুনির সময় যখন সব ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়ছিল, বোনকে আঁকড়ে ছিল গিলিয়া। বাড়ির ছাদ ওদের মাথায় ভেঙে পড়ে। তার পরই বিশাল ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে যায় দু’জনে। একরত্তি মেয়েটার জন্যই প্রাণে বেঁচে গিয়েছে জর্জিয়া।’’
আজ সকালে ভূকম্প-বিধ্বস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন দেশের প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি। গুঁড়িয়ে যাওয়া তিন শহর আমাত্রিস, অ্যাকুমোলি আর পেসকারা দেল ত্রন্তো ঘুরে দেখে তাঁর আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভূমিকম্পের পরে রাতটা রাস্তাতেই কাটিয়েছেন অনেকে। প্রশাসনিক তৎপরতায় সব ক’টি ক্ষতিগ্রস্ত শহরেই তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। কিন্তু ঠান্ডার মধ্যে সেখানে থাকতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ দিকে পরবর্তী কম্পনের (আফটার শক) আতঙ্কে বাড়িতে ফিরতেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। গত কাল থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য বার কেঁপে উঠেছে মধ্য ইতালির ওই পার্বত্য অঞ্চল। যার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি কাঁপুনির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে সাড়ে পাঁচ।
ভূমিকম্পে মৃতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী মাসে রোম যাচ্ছেন মমতা।