প্রধান চক্রী ওসামা বিন লাদেন খতম হয়েছে বছর তিনেক আগে। ৯/১১ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বাকি চাঁইদের অনেকেরই বিচার চলছে, কারও আবার সাজাও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের তেরো বছর পর নতুন করে অভিযোগের আঙুল উঠল সৌদি আরবের রাজপরিবারের দিকে। আমেরিকার জেলে বন্দি জঙ্গি জাকারিয়াস মৌসাওয়ুই ওকলাহোমার ফেডারেল কোর্টকে জানিয়েছে, ৯/১১-র সঙ্গে জড়িত ১৯ জন জঙ্গি পাইলট-সহ তার বিমানচালনা প্রশিক্ষণের খরচ জুগিয়েছিলেন সৌদি আরবের এক রাজকুমার। তবে তাঁর নাম জানা জানত না জাকারিয়াস। সৌদি আরব এই দাবি অস্বীকার করেছে।
জাকারিয়াসের আরও দাবি, ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সখ্যের জেরেই তাদের প্রশিক্ষণের খরচ জোগাতে রাজি হয়েছিলেন সৌদি রাজকুমার। শুধু তা-ই নয়, ৯/১১-র ছক কষতেও লাদেনকে সাহায্য করেন তিনি। জবাবে ফেডারেল কোর্টে সৌদি আরবের আইনজীবী জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই ওই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত নয় রাজপরিবার।
তবে তা বলে জাকারিয়াসের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন না ওবামা-প্রশাসনের কর্তারা। বিষয়টি নিয়ে তাকে জেরাও করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবীরা। কলোরাডোর জেলে বন্দি জাকারিয়াসের অভিযোগের গুরুত্ব মাথায় রেখেই এ হেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তবে সরকারি আধিকারিকদের ধারণা, এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশ্য আদালতে কথা বলার এবং সরকারি আইনজীবী পাওয়ার যে আর্জি জাকারিয়াস জানিয়েছে, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
তথ্য বলছে, ৯/১১ কাণ্ডের সময় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে মিলে মার্কিন নাগরিকদের হত্যার অভিযোগে ২০০৫ সালের এপ্রিলে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল জাকারিয়াস। তার পর থেকে কলোরাডোর জেলেই বন্দি রয়েছে সে। তবে তাকে নিয়ে প্রথম দিকেই ধোঁয়াশায় তদন্তকারীরা। প্রথমত, আল-কায়দার অন্যান্য সদস্যের তুলনায় জেরার মুখে অনেক দ্রুত ভেঙে পড়েছিল জাকারিয়াস। দ্বিতীয়ত ওসামা বিন লাদেন নিজেই জাকারিয়াসের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছিল। ২০০৬ সালে একটি অনলাইন ভিডিওয় প্রাক্তন আল-কায়দা প্রধান বলেছিল, “ওর সঙ্গে ৯/১১-র কোনও সম্পর্ক নেই। আমিই পুরো বিষয়টির একমাত্র চক্রী। ১৯ জন পাইলটকে আমার পরিকল্পনামাফিকই সব করেছে।” শেষত, শুনানি চলাকালীন পরস্পরবিরোধী একাধিক তথ্য দিত জাকারিয়াস। তাকে পরীক্ষা করার পর মনোবিদ জানিয়েছিলেন, জাকারিয়াস ‘প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়ায়’ আক্রান্ত। এ সব তথ্য মাথায় রাখলে তার সাম্প্রতিক অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেই।
তবু সন্দেহের কোনও অবকাশ রাখতে চান না মার্কিন তদন্তকারীরা। ৯/১১-র তেরো বছর পরও তাই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে তৎপর তাঁরা।