তিন দিন মৃত সন্তান আগলে তিমি-মা

হঠাৎই নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় জে৩৫-এর সন্তান। এক জন মা-কে সব চেয়ে ভয়াবহ যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে, সেটাই হয়েছিল। তৈরি ছিল না জে৩৫। মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা— চোখের সামনে মারা গিয়েছিল তার সদ্যোজাত সন্তান। কিচ্ছু করতে পারেনি সে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০২:১৭
Share:

অসহায়: মৃত সদ্যোজাতকে মুখে নিয়ে মাইলের পর মাইল সাঁতার কেটে চলেছে তিমি-মা। ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

দীর্ঘ সতেরোটা মাস, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছিল সে। কবে মা হবে, কবে সন্তানের মুখ দেখবে!

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভিক্টোরিয়ার কাছে সন্তানের জন্ম দেয় ‘জে৩৫’ নামে বিপন্নপ্রায় ‘কিলার হোয়েল’টি। মেয়ে হয়েছিল। গত তিন বছরে ওই তিমি পরিবারে প্রথম জীবিত সন্তানের জন্ম দিয়েছিল জে৩৫ (সংরক্ষণবিদরা তাই বলছেন)। তাই আনন্দের সীমা ছিল না। জে৩৫ ও তার সদ্যোজাত সন্তানকে ঘিরে ছিল পরিবারের সবাই। সব কিছু একদম ঠিক ছিল।

কিন্তু হঠাৎই নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় জে৩৫-এর সন্তান। এক জন মা-কে সব চেয়ে ভয়াবহ যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে, সেটাই হয়েছিল। তৈরি ছিল না জে৩৫। মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা— চোখের সামনে মারা গিয়েছিল তার সদ্যোজাত সন্তান। কিচ্ছু করতে পারেনি সে।

Advertisement

‘সেন্টার ফর হোয়েল রিসার্চ অন স্যান জুয়ান আইল্যান্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা বিজ্ঞানী কেন ব্যালকোম্ব বলেন, ‘‘এর পরের দৃশ্যগুলো চোখে দেখা যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গিয়েছে, সন্তানকে মুখে নিয়ে সাঁতরে যাচ্ছে জে৩৫।’’ ঘণ্টার হিসেব ক্রমে দিন ছুঁয়েছে। বৃহস্পতিবারও দেখা গিয়েছে, মৃত সন্তানকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করছে না সে। ব্যালকোম্বের কথায়, ‘‘এমন নয় যে এ ঘটনা আগে দেখা যায়নি। কিন্তু এত দীর্ঘ সময়, এই
প্রথম দেখলাম।’’

সমুদ্রবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার থেকে তিন দিনে নিজের দলের সঙ্গে ভ্যাঙ্কুভার গিয়ে, সেখান থেকে স্যান জুয়ান আইল্যান্ড ফিরেছে জে৩৫। প্রতি দিন গড়ে ৬০-৭০ মাইল সাঁতরে পার করেছে। আর গোটা সময়টা তার সন্তানের ৪০০ পাউন্ডের দেহটা ভাসিয়ে রেখেছে সে।

‘‘ব্যাপারটা সামলানো জে৩৫-এর জন্য খুব একটা সহজ নয়,’’ বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন সেন্টার ফর কনজ়ারভেশন বায়োলজি’র তিমি বিশেষজ্ঞ ডেবরা গিলস।

বৃহস্পতিবার একটি নৌকা থেকে জে৩৫-এর উপর নজর রেখে গিয়েছেন ডেবরা। তাঁর কথায়, ‘‘সন্তানের মৃতদেহ যত বার ডুবে যাচ্ছে, ওকে দেহটা তুলে আনতে হচ্ছে। মাথার উপর সন্তানের দেহটা নিয়ে সাঁতরে চলেছে সে। এই ভাবে তিন-তিনটে দিন! সন্তান হারানোর শোক সব প্রাণীদেরই ক্ষেত্রেই
একই রকম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন