তুষারসমাধি: ভাঙা বিমান়ের টুকরো। রবিবার মস্কোর দক্ষিণ-পূর্বে আরগুনোভো-র বরফঢাকা প্রান্তরে। ছবি: রয়টার্স
ওড়ার কিছু ক্ষণ পরেই রেডারের পর্দা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল যাত্রিবাহী বিমানটি। তার পরেই ৭১ জন আরোহী নিয়ে ভেঙে পড়ল রুশ বিমান সংস্থার ওই বিমান! মারা গিয়েছেন সকলেই।
রুশ সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, আজ মস্কোর দোমোদেদোভো বিমানবন্দর থেকে ৬৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন বিমানকর্মী নিয়ে উড়েছিল সারাতোভ এয়ারলাইন্সের আন্তোনভ এএন-১৪৮ বিমানটি। গন্তব্য ছিল অর্স্ক শহর। কিন্তু ওড়ার কয়েক মিনিট পরেই তা রেডার থেকে হারিয়ে যায়। তার পরেই মস্কোর ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আরগুনোভো গ্রামের কাছে ভেঙে পড়ে সেটি। বিমানের কোনও আরোহীরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। পরে সরকারি সূত্রে জানানো হয়, কেউই বেঁচে নেই।
বিমান-নজরদারির ওয়েবসাইটে যে তথ্য ধরা পড়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, ওড়ার পাঁচ মিনিট পরেই বিমানটি মিনিটে এক হাজার মিটার গতিবেগে নীচের দিকে নামতে শুরু করেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দাউদাউ করে জ্বলতে জ্বলতে একটি বিমানকে তাঁরা নেমে আসতে দেখেন। মাটিতে ভেঙে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে বিশাল এলাকা জুড়ে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় রাস্তা দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়া যায়নি আপৎকালীন পরিষেবা। পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছতে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন দেশের পরিবহণ মন্ত্রী। রুশ টিভি চ্যানেলে দুর্ঘটনাস্থলের যে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বরফে মোড়া মাঠে বিমানের ভেঙে পড়া টুকরো ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে।
কী কারণে এই বিপত্তি? দুর্ঘটনা না কি সন্ত্রাস? খলনায়ক কি আবহাওয়া, নাকি চালকের ভুল? স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। তাই সব দিক মাথায় রেখেই তদন্ত শুরু করেছে রুশ পরিবহণ মন্ত্রক।
রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটি ৭ বছরের পুরনো। এক বছর আগে অন্য একটি রুশ বিমান সংস্থার কাছ থেকে সারাতোভ এয়ারলাইন্স এটি কিনেছিল। তবে নিরাপত্তার ব্যাপারে খুব একটা সুনাম নেই সারাতোভ এয়ারলাইন্সের। ২০১৫-তে আন্তর্জাতিক বিমান চালানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল এদের উপরে। কারণ, এক তদন্তে দেখা গিয়েছিল, ওই বিমানসংস্থার একটি বিমানের ককপিটে চালক নন, এমন লোক রয়েছে। ওই নিষেধাজ্ঞা তোলার জন্য আর্জি জানিয়েছিল সারাতোভ এয়ারলাইন্স। তার পরে তারা নিজেদের নীতি বদল করে আন্তর্জাতিক রুটে চার্টার্ড বিমান চালাতে শুরু করে। রাশিয়ার বিমান সুরক্ষা নিয়েও বহু প্রশ্ন। ২০১৬-তে তাদের সেনাবিমান সিরিয়া যাওয়ার পথে কৃষ্ণসাগরে ভেঙে পড়ে। ২০০৮ থেকে ২০১৬-র মধ্যে বিমান দুর্ঘটনার বলি হয়েছেন ৩২৬ জন। তালিকায় জুড়ল আর একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা।