চক্রী মরলেও চোখ রাঙাচ্ছে জীবাণু-অস্ত্র

জল্পনার শেষ। প্যারিস হামলার পাণ্ডা আবদেলহামিদ আবাউদ সেনা অভিযানেই মারা গিয়েছে বলে সরকারি ভাবে ঘোষণা করল ফ্রান্স। প্যারিসের উত্তর শহরতলি স্যাঁ দেনির একটি আবাসনে গত কাল অতর্কিতে হামলা চালায় ফরাসি পুলিশ ও সেনা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

প্যারিস শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২১
Share:

ফরাসি সেনার মহড়ায় প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। ছবি: এএফপি।

জল্পনার শেষ। প্যারিস হামলার পাণ্ডা আবদেলহামিদ আবাউদ সেনা অভিযানেই মারা গিয়েছে বলে সরকারি ভাবে ঘোষণা করল ফ্রান্স। প্যারিসের উত্তর শহরতলি স্যাঁ দেনির একটি আবাসনে গত কাল অতর্কিতে হামলা চালায় ফরাসি পুলিশ ও সেনা। চক্রী আবাউদ সেই বাড়িতেই আস্তানা গেড়েছিল বলে দাবি পুলিশের। আজ সেখান থেকে পাওয়া নিহত এক জঙ্গির আঙুলের ছাপ মিলিয়েই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। সরকারি আইনজীবী ফ্রাঁসোয়া মল্যাঁ জানান, জঙ্গির শরীর বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। চিহ্ন মিলেছে গ্রেনেড বিস্ফোরণেরও। তাই সে আত্মঘাতী কি না, স্পষ্ট নয়।

Advertisement

প্রশাসনের একাংশ বলছে, ধোঁয়াশা কেটেছে সোনালি চুলের মহিলাকে নিয়েও। গত কাল আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত সেই জঙ্গি আবাউদের স্ত্রী কি না, প্রশ্ন উঠেছিল। তদন্তকারীদের কয়েক জন আজ তাকে আবাউদের সম্পর্কিত বোন হাসনা এইত‌্‌বুলাখেন বলে চিহ্নিত করেছেন। তদন্তকারীদের সন্দেহ, প্যারিসের অদূরে গোপন ডেরা বানিয়ে আবদেসলাম ভাইদের সঙ্গেই হামলার ছক কষে আবাউদ। আর হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত এক জন যে শরণার্থী সেজে শহরে ঢুকেছিল তা ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে তদন্তে।

পুলিশের কাছে তবু ষড়যন্ত্রের সবটা পরিষ্কার নয়। সিরিয়ার বদলা নিতেই এই হামলা বলে প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে আইএস। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভল অবশ্য তা মানতে নারাজ। কিন্তু ফ্রান্স যে আরও বড় কোনও হামলার শিকার হতে পারে, আশঙ্কা রয়েছে তাঁরও।

Advertisement

কী সেই হামলা? জঙ্গিরা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রাসায়নিক যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন ভল। দেশে জরুরি অবস্থা বাড়ানো নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক চলাকালীনই তিনি বলেন, ‘‘মূল চক্রী খতম মানেই, ওদের খাটো করে দেখা উচিত হবে না। রাসায়নিক যুদ্ধের পাশাপাশি জীবাণু অস্ত্র নিয়েও নামতে পারে ওরা। আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।’’ আইএস যে রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে, তা জানিয়েছে ইরাক ও আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাও।

সতর্কতার খাতিরেই তাই ফ্রান্সে অন্তত আরও তিন মাস জরুরি অবস্থা জারি থাকা উচিত বলে আজ পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পড়েছে। সন্দেহভাজনের খোঁজে তল্লাশিও জারি রয়েছে। যে ভাবেই হোক, পলাতক জঙ্গি সালাহ আবদেসলামের হদিস পেতে পাইছেন গোয়েন্দারা। তবু প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বাঁকা প্রশ্ন তুলছেন দেশেরই একাংশ। গত কালের আগে পর্যন্ত ফ্রান্স দাবি করে আসছিল, সিরিয়ার জঙ্গি ঘাঁটিতেই রয়েছে হামলার মূল চক্রী আবাউদ। প্যারিসের অদূরে তার আস্তানা হঠাৎ কী ভাবে পুলিশের নজরে এল, সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। একাংশ বলছেন, মুখরক্ষার খাতিরেই ‘চক্রী খতম’ বলে ঘোষণা করছে প্রশাসন। বেলজিয়ামের নাগরিক আবাউদ চলতি বছরের শুরুতেই নিজের দেশে একটি হামলার ছক কষে। পুলিশি তৎপরতায় তা ব্যর্থ হলেও, পালায় জঙ্গি। এখন প্রশ্ন উঠছে, ন’মাস ধরে পুলিশ যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল, নাকের ডগা দিয়েই সে কী ভাবে এত বড় হামলার ছক কষতে পারে? তদন্তকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, আবাউদ সিরিয়ায় গিয়েছিল জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে। এমনকী, সেখানে নিজের নাবালক ভাইকেও দলে টেনেছিল। হামলার আগে সম্প্রতি সে গ্রিস হয়ে প্যারিসে ঢোকে বলে দাবি তাঁদের।

কিন্তু গ্রিস থেকে কী ভাবে প্যারিস পৌঁছল সে? ঘুরেফিরে তাই হামলায় শরণার্থী যোগের দিকেও আঙুল উঠছে। পলাতক সালাহ আবদেসলামও মাস কয়েক আগে গ্রিস হয়ে শরণার্থী রুটেই হামলার শহরে এসে পৌঁছয় বলে এখনও পর্যন্ত তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে এখন সে কোথায়, ফ্রান্সের সঙ্গেই যৌথ ভাবে সূত্র খুঁজছে বেলজিয়ান প্রশাসন। বেলজিয়ামে তল্লাশি চলছে মূলত মোলেনবিক প্রদেশে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির থেকে ফের তদন্তে সহযোগিতা চেয়েছে ফ্রান্স। একই সঙ্গে মার্কিন যৌথ বাহিনীর মদতে সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটির উপরে বিমান হানা জারি রেখেছে। গত সাত দিনে অন্তত ৩৫টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা গিয়েছে বলে দাবি ফরাসি সেনার।

এ দিকে, আইএস আজও আমেরিকাকে নিশানায় রেখে ইন্টারনেটে একটি হুমকি-ভিডিও ছড়িয়েছে। সেই ভিডিওতে এক জঙ্গিকে ‘সুইসাইড ভেস্ট’ পরে টাইমস স্কোয়ারে দেখা গিয়েছে। ভিডিওটি যাচাই না করে এ নিয়ে নিউ ইয়র্ক পুলিশ মুখ না খুললেও, আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আজ ফের সরব হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এক হাত নিয়েছেন সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকেও। তাঁর কথায়, ‘‘আসাদ যত দিন ক্ষমতায় আছেন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার নয়।’’ আর সিরিয়ায় এই পরিস্থিতির কারণেই আইএসের রমরমা বলে মত একাধিক দেশের গোয়েন্দাদের। পশ্চিম
এশিয়ায় জঙ্গিনিধনে আজ আমেরিকার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে কানাডাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন